স্মার্ট বাংলাদেশে সরকারি সেবা ঘরে বসে পাওয়া যাবে: পলক

স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ এবং জাতি গড়ার জন্য প্রয়োজন অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল রূপান্তর। বাংলাদেশ শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব ও ক্রমবর্ধমান সংযোগ এবং ডিজিটাল নির্ভরতা অবকাঠামো সাইবার হুমকি এবং দুর্বলতা সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়ায়। এসব ঝুঁকি, স্মার্ট বাংলাদেশ উদ্যোগকে অবশ্যই একটি ব্যাপক সাইবার নিরাপত্তার সাথে থাকতে হবে সংবেদনশীল তথ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রক্ষা করার কৌশল। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে করণীয় বিষয়ে সেমিনার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ও সাইবার সিকিউরিটি’ বঙ্গবন্ধু মিলিটারি মিউজিয়াম হলে যৌথভাবে আয়োজন করে ‘ইনোভেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েটস (আইডিয়া) ফাউন্ডেশন’ ও হপলন লিমিটেড।

আইডিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং সাবেক সচিব, বিশ্বব্যাংকের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম. আমিনুল ইসলাম এর সভাপত্ত্বিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেকনোহেভেন এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ এন. করিম। আলোচকদের মধ্যে সাইবার সিকিউরিটি স্মার্ট সিটিজেনদের জন্য করণীয় বলেন, বেসিস-এর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই-এর প্যানেল উপদেষ্টা সৈয়দ সাদাত আলমাস কবির; সাইবার নিরাপত্তা ক্ষমতা বৃদ্ধি ও একাডেমিয়ার ভূমিকা বিষয়ে বলেন, বুয়েট-এর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ডিপার্ট্মেন্ট হেড, প্রফেসর মাহমুদা নাজনীন; এবং বাংলাদেশে সাইবার সিকিউরিটি কমপ্লায়েন্স: রেগুলেটরের ভূমিকা নিয়ে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, এনডিসি। সেমিনার সঞ্চালনা করেন আইডিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান, স্মার্ট বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক এবং প্রাক্তন মুখ্য সচিব মো: আবুল কালাম আজাদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইডিয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য ও সাবেক সিনিয়র সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ মোহাম্মদ শহিদুল হক। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন হপলন লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসান হাবীব।

জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সাইবার সিকিউরিটিসহ ১৫টি ভাগে আমরা দেশের ডিজিটালাইজেশনের কাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। বিগত সময়ে তথ্য জালিয়াতি রোধে সকল মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে ন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কিটেকচার মেনে চলতে হবে। এছাড়াও, সাইবার সিকিউরিটি গঠনে সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সমন্বয় সাধন অতীব জরুরী।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারি সেবা পেতে এখন আর কাউকেই সরকারের দ্বারপ্রান্তে যেতে হবে না, সবাই ঘরে বসেই নিজ নিজ আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন।”

মো. সামসুল আরেফিন বলেন, “ক্যাশলেস ও পেপারলেস কাঠামোগত উন্নয়নে তিনটি মূল বিষয় হলো ডাটা সেন্টার, সাইবার সিকিউরিটি ও ডিজিটাল সিগনেচার। এর মধ্যে সাইবার সিকিউরিটি অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ যা রক্ষায় আইসিটি বিভাগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়েই কাজ করে যাচ্ছে। সরকারী ডাটা সেন্টারগুলোর পাশাপাশি বেসরকারী ডাটা সেন্টারগুলোও বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। সাইবার বুলিং, অপরাধ ও পরামর্শের ৩৩৩৮ এবং ১৩২১৯ থেকে সেবা নেয়া যাবে।”

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে হাবিবুল্লাহ এন. করিম বলেন, বিভিন্ন সময়ে দেশে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল এবং এখন যে নেই তা বলা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক, নির্বাচন কমিশন, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাদ যায়নি। সাইবার আক্রমণের পরিণতি হিসেবে আর্থিক ও সুনাম ক্ষতি, তথ্য প্রকাশ। সাইবার আক্রমণের সাধারণ প্রকার হচ্ছে, ম্যালওয়্যার আক্রমণ, ফিশিং আক্রমণ, ডিনায়াল-অফ-সার্ভিস এবং ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল-অফ-সার্ভিস ইত্যাদি। তিনি সুপারিশ করেন, সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান, সরকারের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা এবং বেসরকারি খাত একত্রে কাজ করা। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সাইবার নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করতে হবে গবেষণা ও উন্নয়ন করা।

মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আপনার যদি কোন সম্পদ থাকে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনার। ডিজিটাল সম্পদটি যা আমাদের ব্যক্তি জীবন সহ সামাজিক অর্থনৈতিক জীবনের চালিকা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে তার নিরাপত্তার জন্য আমরা কতটুকু দিয়েছি, কতটুকু দিতে পারি, কতটুকু দেয়া উচিত। ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। মাঝে মধ্যে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা এবং প্রয়োজনে দু পেক্টর অথনেটিক চালু রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।”

কাজী এম. আমিনুল ইসলাম বলেন, “কোভিড এর আগে কম্পিউটার ব্যবহার কম ছিল এবং পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের গঠনে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত না করলে কেউ প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করবে না। এই সচেতনতা বৃদ্ধিতেই আইডিয়া ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে এবং আমরা সকলে মনে করি দক্ষ ও যোগ্য জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এই বিষয়টির উপর গুরুত্বারোপ করা উচিত যাতে করে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের নাগরিকদের এই সমস্যা না পোহাতে হয়।”

সম্প্রতি বছরগুলোতে, বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত দিক থেকে অগ্রগতি অর্জন করেছে উদ্ভাবন, এবং সংযোগের মাধ্যমে উন্নত দেশ। এই রূপান্তর, একটি পরিকল্পনা বাংলাদেশ উদ্যোগের উপাদান, বিভিন্ন সেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করে কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সরকার এবং জনসেবা উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশকে আরো সমৃদ্ধশালী করতে তথ্য প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার দিয়ে আগামী প্রজন্মকে সঠিকভাবে তৈরি করা ও গাইড করার জন্যে সাইবার সিকিউরিটির ভূমিকা নিয়েও মুক্ত আলোচনা পর্বে মতবিনিময় করা হয়।

উল্লেখ্য, ইনোভেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েটস (আইডিয়া) ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উপর ফোকাস সহ উন্নয়ন সহযোগীদের একটি সংস্থা, স্বাধীন গবেষণা, নীতি বিশ্লেষণ, অ্যাডভোকেসি, উপদেষ্টা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে নিযুক্ত।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eighteen − 6 =