
৩১ ডিসেম্বর ২০০৫ সূর্যাস্তের সঙ্গে স্মৃতি হয়ে যাবে ২০২৫। থাকবো কুইন্সল্যান্ডের পর্যটন নগরী গ্ল্যাডস্টোন। হাসি কান্না আনন্দ বেদনার মিশ্র অনুভূতিতে কেটে গেলো জীবন থেকে আরো একটি স্মৃতিময় বছর। মনে আছে ২০২৪ শেষ দিনগুলো নাতনী ফাতিমা আর নাতি জোহায়ের সহ কেটেছিল সিডনীর মনোমুদ্ধকর পরিবেশে। ব্রিসবেন থেকে সড়ক পথে সিডনী যাত্রা ছিল উপভোগ্য, পথে কফস হারবার, নিউ ক্যাসেল যাত্রা বিরতি ছিল আনন্দময়। মধুর সময় কেটেছে হারবার ব্রিজ, অপেরা হাউস আর Blue Mountain এলাকায়। ২০২৪ শেষ সূর্যাস্ত দেখেছিলাম গোল্ড কোস্টের হোপ দ্বীপে।
২০২৫ শুরু হয়েছিল রোজীর তৈরী উপাদেয় খাবার খেয়ে। এই বছরে একবারই শুধু বাংলাদেশ সফরের সুযোগ হয়েছে। ফেব্রুয়ারী মাসে বিশ্ব ব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আইএমএফ পরামর্শক হিসাবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সেক্টরের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। ব্রিসবেন থেকে হংকং হয়ে ঢাকায় পৌঁছে গুলশানে বন্ধুর বাসায় ছিলাম। সুযোগ হয়েছিল যমুনা নদীর উপর নির্মিত রেলওয়ে সেতু বরাবর গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ কাজ পরিদর্শনের।
বহুদিন পর জিটিসিএলের বাঘাবাড়ি গ্যাস স্টেশন পরিদর্শন করেছিলাম। আমার লাগানো আম, লিচু, পেয়ারা গাছগুলো বড় হয়েছে। ফুলগাছগুলো দেখে ভালো লাগলো। ফেরার পথে সহকর্মীরা প্রচুর মিষ্টি উপহার দিয়েছিল। ঢাকার কাছে মেঘনাঘাট এলাকায় জিটিসিএল কর্তৃক নির্মাণাধীন বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জ ৪২ ইঞ্চি বাসের গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন নির্মাণ কাজ এবং মেঘনাঘাটে দুইটি আধুনিক গ্যাস ব্যাবহারকারী বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনের সুযোগ হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ সেক্টর উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনারে অংশ গ্রহণ করলাম। একই সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম।
ঢাকা সফরের শেষ দিনগুলো ছিলাম উত্তরায় বন্ধুর অতিথি ভবনে। কয়েকটি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গ্যাস বিদ্যুৎ এবং ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছি, তিতাস গ্যাস, জিটিসিএল এবং পেট্রোবাংলা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলেছি, আশুগঞ্জে জিটিসিএল গ্যাস ম্যানিফোল্ড স্টেশন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শন করেছি। অবশেষে সিঙ্গাপুর হয়ে ফিরেছি ব্রিসবেন।
রোজার মাস আল্লার রহমতে ভালো কেটেছে। প্রথম বারের মত লোগান লী ইন্দোনেশিয়ান মসজিদে শেষ দশ দিন এহতেকাফ করেছি। ঈদের দিনটাও নাতি নাতনী বৃহত্তর পরিবার নিয়ে আনন্দে কেটেছে। ঈদের পর রোজী একমাসের জন্য বাংলাদেশ যাওয়ায় শুভ্র মাঝে মাঝে এসে থেকেছে বাচ্চাদের নিয়ে। সপ্তাহের শেষ দিনগুলো শুক্র থেকে রবিবার আমি শুভ্রর মার্সডেন বাসায় থেকেছি। ফুল, ফল, সবজি বাগান গড়ে তুলেছি। জোহায়ের, ফাতিমার স্কুলের হোমওয়ার্ক তদারক করে ভালো সময় কেটেছে। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে আমরা তিন দিনের জন্য কফস হার্বারে ছিলাম। সাগর পারে মনোরম শহর আনন্দে কেটেছে।
হঠাৎ করেই ছেলেদের সহায়তায় সিদ্ধান্ত নিলাম উমরাহ করবো। পারিবারিক বন্ধু ফয়েজ আহমেদ দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। তিনি আমার প্রথমবারের উমরাহ পালনে গাইড ছিলেন। অভ্র সকল খরচ বহন করেছে। শুভ্র ভিসা সংগ্রহ, বিমান, হোটেল বুকিংসহ যাবতীয় কাজ করেছে। আমাদের যাত্রাপথ ছিল ব্রিসবেন-ম্যানিলা-মাস্কাট-জেদ্দা। জেদ্দা থেকে সড়ক পথে মক্কা শরীফ। প্রথমবারের মত পবিত্র মক্কা শরীফে উমরাহ, জুম্মার নামাজ সহ অন্যান্য নামাজ আদায়, আরাফা, মুজদালিফা, হেরা গুহা, জিন মসজিদ সহ মক্কার সকল পবিত্র স্থান পরিদর্শনের সুযোগ হয়েছে, তায়েফ নগরী সফর করেছি।
মক্কা থেকে বুলেট ট্রেনে মদিনা সফর ছিল আনন্দদায়ক। মদিনায় মহানবীর মসজিদে জুম্মার নামাজসহ নিয়মিত নামাজ পড়ার সুযোগ হয়েছে। মহানবীর পবিত্র রওয়াজা শরীফ পরিদর্শন করেছি। মহানবী, হজরত আবু বকর (আর), হজরত ওমর (আর) রোয়াজা, জান্নাতুল বাকি জেয়ারত করেছি। কুবা মসজিদ, জুমা মসজিদ, কেবলা তিন মসজিদ, ওহুদ, খন্দক, বদর যুদ্ধ ময়দান পরিদর্শন করেছি। মহান আল্লাতালার অশেষ কৃপায় সুস্থ অবস্থায় পবিত্র দুই নগরীতে দুই সপ্তাহ কাটানোর পর সড়কপথে জেদ্দায় পৌঁছে দুই দিন ছিলাম। আল্লাহর অশেষ করুনায় জেদ্দা থেকে মাস্কাট-মানিল হয়ে ব্রিসবেন ফিরে এসেছি।
শুভ্র একটি কোম্পানীতে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করে। সপ্তাহে কয়েক দিন দক্ষিণ পূর্ব কুইন্সল্যান্ডের প্রত্যন্ত স্থানে ফিল্ড স্টেশন পরিদর্শন করে। প্রতিবার আমি ওর সাথী হয়েছি। পাহাড়, বন বনানীর মাঝে দূর দূরান্তে যাত্রা উপভোগ করেছি। আমরা পরিবারসহ আম বাগান থেকে আম পেড়েছি, আপেল তুলেছি। লিচু বাগান থেকে লিচু কিনেছি। একদিন উঁচু পাহাড়ের উপর মনোরম আবাসে উপভোগ্য দিন কাটিয়েছি। বোর্ডস পার্ক, মনোরম বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রজাপতি দেখেছি।
২০২৫ অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা ছিল ৫ দিনের ত্রুজ ভ্রমণ। মার্কিন ত্রুজ জাহাজ কার্নিভ্যাল এনকাউন্টার নিয়ে ব্রিসবেন থেকে কেয়ার্ন্স সমুদ্র যাত্রা ছিল অবিশ্বরণীয়। উপাদেয় খাবার, নানা ধরনের আনন্দদায়ক আয়োজন, কেয়ার্ন্সে স্কাই রেল ভ্রমণ ছিল অবিস্মরণীয়। আমাদের সাথে শুভ্রর তিন বন্ধুর পরিবার ছিল। বিশেষ করে শিশুদের জন্য ত্রুজ ছিল অনেক আনন্দের। সাগর থেকে প্রতিদিন সূর্যোদয় সূর্যাস্ত দেখা ছিল সৌভাগ্যের।
শুভ্রর বাসায় বাগানে এখন নানা রঙের গোলাপ ফুটেছে। গাছে আম, পেয়ারা, লেবু হয়েছে। সবজি হয়েছে নানা রকমের। বাসার চারিদিকে সোলার লাইট লাগানো হয়েছে। সন্ধ্যায় মনোরম দৃশ্য থাকে।
এবারে ১৭ ডিসেম্বর ব্রিসবেন বাংলা রেডিও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্মৃতি রোমন্থনের। একঘন্টার একটি মনোরম অনুষ্ঠানে এই প্রজন্মের মেধাবী উপস্থাপকের সঙ্গে উপভোগ্য সময় কেটেছে।
যখন লিখছি তখন ২০২৫ শেষ হয়নি। আমরা ২৮ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারী গ্ল্যাডস্টোন থাকবো। আল্লাহ তালার অশেষ রহমতে একটি স্মরণীয় বছর কাটানোর জন্য মহান সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এমনি ভাবেই জীবন কেটে যায়। অনেক স্মৃতি নিয়ে কালের গর্ভে বিলীন হয় একটি বছর।