স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে পঞ্চ পান্ডব

কালের পরিক্রমায় সব কিছু পাল্টে যায়। সেই যে ২০০৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে আবির্ভুত হয়েছিল মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ নামের পাঁচ জন অসামান্য প্রতিভাধর ক্রিকেট তারকার।  সেই থেকে এই পাঁচ অসামান্ন প্রতিভাধর ক্রিকেটারের ব্যাক্তিগত এবং যৌথ অবদানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে বাংলাদেশ নিজেদের একটা উজ্জ্বল অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিলো। মাশরাফি ছিল উপমধর্মী অধিনায়ক।  বেশ কয়েকবার অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বখ্যাত সল্ল চিকিৎসকের ছুরির নিচে পায়ের অপারেশন করানো সত্ত্বেও দেশের জন্য বীরের মত লড়াই করেছে সামনে থেকে। সাকিব তুখোড় অল রাউন্ডার হয়ে বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করেছে বহুদিন। তামিম ছিল বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ওপেনিং ব্যাটসম্যান। মুশফিক মিডল অর্ডার বাটিংয়ে বাংলাদেশের নির্ভরতার প্রতীক। ক্রিকেটের প্রতি নিবেদিত প্রাণ। ওকে বলা হতো মিস্টার ডিপেন্ডেবল। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ছিল বিপদে ত্রাতা। কতবার দলের বিপর্যয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওকে আদর করে ভক্তরা ডাকতো নীরব ঘাতক বলে। ক্রিকেট জীবনের ইতি না টেনেই সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান করে মাশরাফি এবং শাকিব নিজেদের কিছুটা বিতর্কিত করেছিল। একসময় সাকিব তামিম কথিত দ্বন্দ্ব বিতর্ক ছড়িয়েছিলো। চির দিন কারোই সমান যায় না। বলা হয় ফর্ম ২ টেম্পোরারি বাট ক্লাস ২ পার্মানেন্ট”। বাংলাদেশ বা উপমহাদেশের অধিকাংশ খেলোয়াড় উপলব্ধি করে না কখন তাদের অবসর নেয়ার উত্তম সময়। জাগতিক কারণেই পঞ্চ পান্ডব সবার ক্রিকেটেই ভাটার টান এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতার কারণে ওদের সৎ মানসম্পন্ন খেলোয়াড় না আসায় বিসিবি ওদের পরিবর্তন করার সাহস দেখায় নি। এখন যখন পরিবর্তনের সময় এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খাবি খাচ্ছে।

২০২৫ এসে তাদের সবার আন্তর্জাতিক  ক্রিকেট জীবন শেষ হতে চলছে। মাশরাফি, সাকিব ক্রিকেটের বাইরে কিছু কারণে ব্রাত্য হয়ে আছে। তামিম সকল ফরমেট থেকে অবসর নিয়েছে, মাহমুদুল্লাহ নিজে থেকে টেস্ট থেকে কিছু অভিমানে সরে গিয়ে সাদা বলে ক্রিকেট খেলতো। মুশফিক খেলত ওডিআই আর টেস্ট ক্রিকেট। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বিফল অভিযান শেষে দেশে ফিরে মুশফিক ওডিআই থেকে অবসরের ঘোষণা দিলো। হয়ত একই ধরণের ঘোষণা মাহমুদুল্লার কাছ থেকেও অচিরেই আসবে। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য মাশরাফি, সাকিব মাঠ থেকে অবসর নিতে পারে নি। বাকি তিনজনের বিদায় সঠিক পথে হলো না. আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট যেই অবস্থানে তার পটভূমিতে পঞ্চ পাণ্ডবের বিশাল অবদান রয়েছে। এদের মত ক্ষণজন্মা প্রতিভা এটি জাতির জীবনে প্রতিদিন আসে না। বাংলাদেশে ক্রিকেট এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। দেশের আনাচে কানাচে অনেক সৃজনশীল প্রতিভা সুযোগের অভাবে নীরবে ঝরে যাচ্ছে।  বিসিবি সুষ্ঠু ব্যাবস্থাপনার মাদ্ধমে প্রতিভা অন্নেষণ এবং সঠিক পরিচর্যার মাদ্ধমে প্রকৃত পরিবেশে বিকশিত না করলে আগামীতে কেউ কিন্তু পঞ্চ পাণ্ডবের মত বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বিশ্ব আসরে তুলে ধরতে পারবে না।

সেরা তারকাদের যেভাবে নীরবে একে একে বিদায় নিতে হয়েছে তার জন্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আমি ওদের নিজেদের দায়ী করবো। প্রতিটি খেলোয়াড় নিজে থেকে বজায় উচিত কখন বিদায় নিতে হবে। দেখুন এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দারুন খেলেও ওডিআই থেকে অবসর ঘোষণা করলো স্টিভ স্মিথ। একইভাবে ফর্মের তুঙ্গে থেকে অবসর নিয়েছিল জ্যাক কালিস, এবি ডিভিলিয়ার্স, স্টিভ ওয়াহ।

আমি আশা করবো বিসিবি যেন মাশরাফি, সাকিব, তামীম, মুশফিক, রিয়াদকে সমবেত করে একটি বিদায়ী ক্রিকেট উৎসব আয়োজন করে।  কৃতজ্ঞ জাতি যেন বীরদের একবার সম্মান জানানোর সুযোগ পায়। বাংলাদেশে এখন অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষক আছে আছে অনেক তরুণ লেখক। পঞ্চ পাণ্ডবের কীর্তিগাথা নিয়ে সাহিত্য সৃষ্টির সুযোগ আছে। কেউ উদ্যোগ নিলে রচিত হতে পারে অনন্য ক্রিকেট সাহিত্য।  ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারবে পাঁচ ক্রিকেট নায়কের জানা অজানা নানা কাহিনী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

seventeen − 11 =