
আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সদ্য সমাপ্ত ওডিআই সিরিজে করুণভাবে ধবল ধোলাই হয়ে দেশে ফিরেছে মেহেদী হাসান নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অথচ ওডিআই সিরিজের কিছু দিন আগেই বাংলাদেশ টি২০ সিরিজে আফগানিস্তান দলকে ধবল ধোলাই করেছিল। ফরম্যাটের পরিবর্তনে কেন এই বেহাল দশা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সেটি নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ হচ্ছে ক্রিকেট মহলে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা জন নানাভাবে বিশ্লেষণ করছে। তিন তিনটি ম্যাচের একটিতেও বাংলাদেশ দল প্রিয় ফরম্যাটে স্বাভাবিক খেলাটিও খেলতে পারলো না বিষয়টি রহস্যজনক। খেলোয়াড়দের শারীরিক ভাষা ওডিআই সিরিজে জয়ের জন্য আদর্শ ছিল না। বোলাররা দায়িত্ব পালন করলেও ব্যাটসম্যানরা দৃষ্টিকটূভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
নিজেদের প্রয়োগ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাই দেখা যায়নি। লিটন দাসের অবর্তমানে জাকের আলী নেতৃত্বের টি২০ খেলা দলে জয়ের নেশা ছিল। কাকতলীয় ভাবে সেই দলের অধিকাংশ সদস্য দলে থাকা সত্ত্বেও মেহেদী মিরাজ নেতৃত্বের ওডিআই দল কোন ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি আফগান দলের বিরুদ্ধে। ০-৩ ধবল ধোলাই হয়ে বাংলাদেশ ২০১৭ ওডিআই বিশ্বকাপে সরাসরি খেলা কঠিন করে তুলেছে।
হয়তো বিসিবি ব্যর্থতার বিষয়ে টিম ব্যাবস্থাপনার কাছে ব্যাখ্যা চাইবে। জানিনা নানা বিতর্কে বিতর্কিত বিসিবির নতুন নির্বাচিত কার্যকরী পরিষদ টিম ম্যানেজমেন্টকে জবাবদিহি করার মতো অবস্থানে আছে কিনা?
এদিকে ওডিআই এবং টি২০ সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে এসেছে শাই হোপের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। ১৮ অক্টোবর থেকে শুরু হবে তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজ। দুই দলের জন্যই সিরিজটি ২০২৭ বিশ্বকাপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবাই জানে একসময়ের অপ্রতিদ্বন্দ্বী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরে ভাটির টান। কোনো ফরম্যাটেই পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পাচ্ছে না।
এইতো সে দিন ভারতের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ধবল ধোলাই হয়েছে। তবে সাদা বলের ক্রিকেট ভিন্ন মাত্রার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ম্যাচ জয়ী খেলোয়াড় আছে। অনেকের বাংলাদেশের উইকেট পরিবেশ বিষয়ে ধারণা আছে। এমিনিতে বাংলাদেশ নিজেদের মাটিতে ভিন্ন দল। তবে নিকট অতীতে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিপর্যস্ত হওয়ার দুঃসহ স্মৃতি ভুলে বাংলাদেশ দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না সন্দেহ আছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওডিআই স্কোয়াড: শাই হোপ (অধিনায়ক), অলীক আখানেজ, আকিম অগাস্টে, জেদিয়া ব্লেডস। কেসি কার্টি, রোস্তন চেজ, জাস্টিন গ্রিভস, আমির জাঙ্গ, সামার জোসেফ, ব্রেন্ডন কিং, গুডাকেশ মতি, খেরি পিয়ারী, শেরফান রাদারফোর্ড, জয়ডন সিলস এবং রোমারিও শেফার্ড।
অধিকাংশ অভিজ্ঞ এবং কয়েকজন নবীন খেলোয়াড় সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী দল। জানিনা কি পরিকল্পনা আছে বাংলাদেশের। দীর্ঘ সময় জুড়ে ক্রমাগত ক্রিকেট খেলে ক্লান্ত বাংলাদেশ। হয়ত কয়েকজনের বিশ্রাম প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশ বেশ কিছু দিন যাবৎ নিজেদের প্রিয় ফরমেট ওডিআইতে ভালো খেলছে না।
বিশেষ করে মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ অবসর ঘোষণা করার পর এবং নানা ঘটনায় সাকিবকে দলের বাইরে রাখায় বাংলাদেশের ব্যাটিং নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। কখনো টপ অর্ডার, অধিকাংশ সময়ে মিডল অর্ডার দাঁড়াতেই পারছে না। উইকেটে স্থিতু হয়েও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ইনিংস বড় করতে পারছে না।
মিডল অর্ডার চাপে ভেঙে পড়ছে। ১৫০-১৮০ রান করতেই পারছে না। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণ বার বার সুযোগ সৃষ্টি করলেও ফায়েদা নিতে পারছে না বাংলাদেশ। সাইফ, পারভেজ ইমন, তানজীদ তামিমকে বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানোয় কেউ স্থিতু হচ্ছে না।
লিটন দাসের ইনজুরির প্রভাব দারুণভাবে পড়েছে।স্থুল কারণে অধিনায়ক থেকে অপসারিত নাজমুল শান্ত নিজেকে হারিয়ে খুঁজছে। তাওহীদ হৃদয়কে আমার দায়িত্বশীল মনে হয় না। অধিনায়ক হয়ে মিরাজ যেন ব্যাটিং ভুলে গেছে।
এমনি অবস্থায় বাংলাদেশ চট জলদি ঘুরে দাঁড়াবে ভাবতে ভরসা পাচ্ছি না। আমি জানিনা নির্বাচকরা টপ/মিডল অর্ডারে মমিনুল হককে বিবেচনা করবে কি না। আমি অবশ্য দেশের স্বার্থে মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ এবং এমনকি সাকিবকে অন্তত ২০২৭ পর্যন্ত ওডিআই, টি২০ দলে ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করবো। ভালো ব্যাটিং না করলে বাংলাদেশ সাদা বলে ধারাবাহিক হবে না।
বোলিংয়ে বাংলাদেশ এখন যথেষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট সঠিক কম্বিনেশন খুঁজে পেতে খুব বেশি এক্সপেরিমেন্ট করছে। অনেক সময় দলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। কেন এতোদিনেও একটি সেটেলড বোলিং আক্রমণ নেই যারা নিয়মিত জয় এনে দিবে? কেন দেশের সেরা উইকেট রক্ষককে নিয়মিত সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না?
জানিনা বাংলাদেশ দলে আদৌ পরিবর্তন আনা হবে কি না? হয়ত দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াবে, ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। না হয় হতাশায় ডুবে পতনের ষোলোকলা পূর্ণ হবে।
আমিনুল ইসলাম বুলবুল সূচিত তৃণমূলে ক্রিকেট সম্প্রসারণ মিশন দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত হবে যদি জাতীয় দল দ্রুত জয়ের ধারায় ফিরে না আসে। প্রতিভার কমতি নেই। অভাব প্রয়োগ সক্ষমতার আর দৃষ্টিভঙ্গির।