হতাশায় শেষ বাকু কপ

আফরোজা আখতার পারভীন

প্রত্যাশা ছিল বছর জুড়ে। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ২৯তম জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৯) জলবায়ু অভিঘাত মোকাবেলায় অর্থায়ন প্রশ্নে একটি গুরুত্বপূণ অবদান রাখবে। সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানগণের অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে জলবায়ু সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ সূচনা হলেও সেখানে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, রাশিয়া ও ফ্রান্সের মতো বড় কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা ছিলেন অনুপস্থিত। তবে হতাশা হচ্ছে এই আয়োজন থেকে কপের নেগোসিয়েশন এগিয়ে নিতে কোনো রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা মেলেনি। প্রত্যাশা ছিল, অর্থায়ন কপ নামে পরিচিতি পাওয়া বাকু কপ বা কপ২৯ থেকে জলবায়ু অভিঘাত মোকাবেলায় ধনী দেশগুলোর ইতিবাচক মনোভাব দেখাবে। এনসিকিউজি চূড়ান্ত করতে প্রণীত প্রথম খসড়ায় মাত্রা নির্ধারিত ছিল ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু শুরু থেকেই এই পরিমাণ নিয়ে দূষণের জন্য ঐতিহাসিকভাবে দায়ী দেশগুলোর অনাগ্রহ প্রকট হতে থাকে। দরিদ্র দেশগুলোর পক্ষ থেকে ন্যায্যভাবে দাবি করা হয়েছিল যে জলবায়ু তহবিলে ঋণ নয়, দিতে হবে অনুদান। আর তার জোগান আসতে হবে জনখাত থেকে। বার্ষিক বরাদ্ধ করা তহবিলের মধ্যে ২২০ বিলিয়ন ডলার এলডিসি দেশগুলোর জন্য এবং ৩৯ বিলিয়ন ডলার ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। সর্বপরি জলবায়ু তহবিলের মোট বরাদ্ধের কমপক্ষে ২০ শতাংশ অর্থ জাতিসংঘের বিভিন্ন জলবায়ু তহবিলের মাধ্যমে জোগান দিতে হবে। জলবায়ু তহবিলের অর্থায়ন হতে হবে প্রচলিত উন্নয়ন সহায়তার অতিরিক্ত। বলতে বাধা নেই, বাকুর দীর্ঘ দরকষাকষিতে এর কোনোটিই অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা চূড়ান্ত করতে কপ২৯ গড়ায় বর্ধিত সময়ে। ২২ নভেম্বরের বদলে বাকু ঘোষণার মধ্য দিয়ে কপ২৯ শেষ হয় ২৪ নভেম্বর ভোরে। সকল চাওয়া উপেক্ষা করে ধনী দেশগুলো জলবায়ু তহবিলে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বার্ষিক ৩০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করে। চূড়ান্ত হতাশা, অবিশ্বাস আর আস্থাহীনতার মধ্যে দরিদ্র রাষ্ট্রগুলো বাধ্য হয় এই সিদ্ধান্তে সম্মত হতে। তবে এই অর্থ কোথা থেকে জোগান আসবে, তা অনুদান নাকি ঋণ; আবার কতদিনের মধ্যে বার্ষিক এই অঙ্গীকার পূরণ হবে এর কোনো কিছুই স্পষ্ট নয়।

কপে জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন অঙ্গীকার নিয়ে অন্যান্য দরিদ্র দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ধনী দেশগুলোর এই সামান্য অঙ্গীকার গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, জলবায়ু অভিঘাতে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো যখন বিপর্যস্ত তখন কপের এই অর্জন কোনো পথ দেখাবে না।

জলবায়ু তহবিলে বার্ষিক ৩০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার জলবায়ু অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর সঙ্গে রসিকতা। এমন কী ধনী দেশগুলোর জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সঙ্গেও। এই মন্তব্য করে ফসিল ফুয়েল নন প্রলিফারয়েশন ট্রিটির সমন্বয়কারী হরজিৎ সিং আরও বলেন, একটি খারাপ প্রতিশ্রুতিতে সম্মত হওয়ার চেয়ে বেরিয়ে আসাই ছিল উত্তম।

তবে জলবায়ু তহবিলের অর্থায়ন আলোচনায় অব্যাহত রাখার একটি সান্ত্বনা পুরস্কার পাওয়া গেছে কপ২৯ এর ঘোষণায়। সেখানে ঘোষণা করা হয়েছে ‘বাকু-বেলেম ১.৩ ট্রিলিয়ন’ রোডম্যাপ। যার আওতায় জলবায়ু তহবিলের অর্থায়ন ঐ পরিমাণে উন্নীত করার জন্য আলোচনা চলমান থাকবে। তবে সেখানেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে শর্ত। তা হচ্ছে, জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন বার্ষিক ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত নিতে এককভাবে দায় নেবে না ঐতিহাসিকভাবে দূষণকারী দেশগুলো। এখানে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে অর্থায়ন করতে হবে। আবার বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অর্থায়ন করার সুযোগ দিতে হবে। যা দরিদ্র দেশগুলোর অবস্থানের উল্টো। বাংলাদেশের পরিবেশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী প্রধান জাকির হোসেন খানের মতে জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নের এই ধরন বাংলাদেশসহ দরিদ্র দেশগুলোকে নতুন ঋণজালে বেঁধে ফেলবে।

অর্থ বিষয়ক স্টান্ডিং কমিটির সমীক্ষায় ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু অভিঘাত মোকাবেলায় ৫.১ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে ৬.৮ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। আর বার্ষিক চাওয়া হয় ৪৫৫-৫৮৪ বিলিয়ন ডলার। এর বাইরে এডাপটেশন তহবিলে বার্ষিক আরো ২১৫-৩৮৭ বিলিয়ন ডলারের জোগান চাওয়া হয়। কিন্তু উন্নত বিশ্ব তা গ্রহণ করেনি। বরং তারা দিতে অঙ্গীকার করেছে ২০৩৫ পর্যন্ত বার্ষিক ৩০০ বিলিয়ন ডলার।

জি৭৭+চায়না ব্লকভুক্ত ১৩৪টি উন্নয়নশীল দেশের পক্ষ থেকে জলবায়ু তহবিলে বার্ষিক কমপক্ষে ৬০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। বলা হয়, তা ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার তহবিলে পৌঁছানোর জন্য সহায়ক হবে। কিন্তু ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে তা গ্রহণ না করাকে লজ্জাজনক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য অর্থায়নের আলোচনায় প্রাথমিক পর্যায়ে এলডিসি ও ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রের সমন্বয়কারীরা বেরিয়ে আসলেও চূড়ান্ত সময়ে তারা আবার আলোচনায় ফিরে যান। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের নেগোসিয়েটর পল্লি কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল ধনী দেশগুলো কমপক্ষে বার্ষিক ৫০০ বিলিয়ন ডলার জোগান দেবে। এটা অর্জন করতে না পারার বিষয়টি কপ২৯, বিশেষ করে কপ প্রেসিডেন্সির একটি কূটনৈতিক ব্যর্থতা।

অবশ্য অর্থায়নের মাত্রা নির্ধারণ মানে এনসিকিউজি ছাড়াও কপ২৯-এ অর্থ বিষয় নিয়ে আরও অনেক এজেন্ডা ছিল। যার কোনোটিতেই চূড়ান্ত সমঝোতায় আসা সম্ভব হয়নি। এবারও জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞা চূড়ান্ত করতে সক্ষম হয়নি স্ট্যান্ডিং কমিটি। অন্যদিকে কপ২৮ থেকে লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল গঠন ও ৭০২ মিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার পাওয়া গেলেও এবার এতে বড় ধরনের কোনো অর্থায়ন পাওয়া যায়নি। লুক্সেমবার্গ, সুইডেন, আস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ এই তহবিলের জন্য নতুন করে অর্থায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আবার প্রতি বছরই এডাপটেশন তহবিলে নতুন অর্থায়ন পাওয়া গেলেও এবার তার পরিমাণ খুব কম।

কপ২৬ মানে গ্লাসগো সম্মেলনে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড গঠন করার আলোচনা শুরু হলেও তা গৃহীত হয় কপ২৮এ। তবে কপ২৯ তা বাস্তবায়নে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। নতুন অর্থায়ন অঙ্গীকারও ছিল খুব সামান্য।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ২০৩৫ সালের মধ্যে ৮১ শতাংশ নির্গমন কমানোর লক্ষ্য ঘোষণা করেন এবং ১০০ শতাংশ ক্লিন এনার্জি সরবরাহ নিশ্চিতের পরিকল্পনা করেন। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জলবায়ু সমস্যার সমাধানে পানির সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব দেন। তিনি শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন সংস্কৃতি গ্রহণ করে উন্নয়নে পথে এগিয়ে যেতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ২০২৪ সাল সবচেয়ে উষ্ণ বছর ছিল, তবে ক্লিন এনার্জির বিপ্লব থামবে না। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের তীব্রতা কমানোর ওপর জোর দেন।

ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো নতুন ও অতিরিক্ত তহবিল, ঋণের বদলে অনুদান এবং তহবিলের সুস্পষ্ট সংজ্ঞার দাবি করলেও সেগুলো উপেক্ষিত রয়ে গেছে। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই জলবায়ু সংকটকে ‘সমাজতান্ত্রিক মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করে কপ২৯ থেকে তার প্রতিনিধিদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন, যা আর্জেন্টিনার বাণিজ্যিক ও পরিবেশগত অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

তবে দীর্ঘ বির্তকের অবসান ঘটিয়ে প্যারিস চুক্তির আর্টিকেল ৬ মানে কার্বন মার্কেট মেকানিজম চূড়ান্ত করতে সক্ষম হয়েছে কপ২৯। ফলে কিয়োট প্রটোকল শেষ হওয়ায় থমকে যাওয়া কার্বন মার্কেট মেকানিজম আর্টিকেল ৬-এর আওতায় অপারেশনাল হওয়ার সুযোগ তৈরি হলো। ফলে এখন থেকে দ্বিপাক্ষিক কার্বন বাজার এবং বৈশ্বিক কার্বন বাজার বিকাশে আর কোনো বাধা থাকবে না। এই কার্যক্রমে দরিদ্র দেশগুলোকে ধনী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হবে।

কার্বন দূষণ কমিয়ে আনার প্রশ্নে অতি দূষণকারী দেশগুলোর পক্ষ থেকে উচ্চাভিলাষী এনডিসি গ্রহণ করার যে দাবি সিভিল সোসাইটি এবং দরিদ্র দেশগুলোর পক্ষ থেকে অব্যাহত ছিল সে আলোচনা এখানে নতুন কোনো মাত্রা পায়নি। এদিকে কপ শুরুর আগে ইউএনএফসিসিসি’র পক্ষ থেকে প্রকাশ করা এনডিসি সিন্থেসাইজড রিপোর্টে হতাশাজনক চিত্র উঠে আসে। তাতে বলা হয়, বিশ্বের দাখিলকৃত সকল এনডিসি শতভাগ বাস্তবায়িত হলেও ২০১৯ তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন দূষণ কমবে মাত্র ২.৬ শতাংশ। অথচ ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো লক্ষ্য অর্জন করতে হলে এই সময়কালে দূষণ ৪৩ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। এটি করার জন্য ৮০ শতাংশ দূষণের জন্য দায়ি উন্নত ও ধনী দেশগুলোকে উচ্চাভিলাষী এনডিসি গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু ধনী দেশগুলো যে আগামী বছরের মধ্যে এই ধরনের এনডিসি প্রণয়ন ও দাখিল করবে তার কোনো ইঙ্গিত কপ২৯ থেকে পাওয়া যায়নি।

তবে এডাপটেশনের বৈশ্বিক লক্ষ্য (জিজিএ) অর্জন নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। এটি কপ৩০-এ চূড়ান্ত হওয়ার কথা। স্বল্প উন্নত দেশগুলোর জন্য ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান বাস্তবায়নের একটি সহায়ক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় বছরব্যাপী মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপের মাধ্যমে ন্যাপ বাস্তবায়নে উদ্ভাবনী অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তার বিষয় চূড়ান্ত করা তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যাতে করে স্বল্প উন্নত দেশগুলো তাদের এডাপটেশন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সক্ষম হয়। বাকু এডাপেটশন রোডম্যাপের আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে এডাপটেশন সূচক চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জলবায়ু অভিঘাত মোকাবেলায় বিশ্বের দেশগুলোর নেওয়া কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক হতে যাচ্ছে। এটিকে আরও কার্যকর করার জন্য কপ২৯ থেকে ইনহ্যান্স ট্রান্সপারেন্সি ফ্রেমওর্য়াক গড়ে তোলার বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে।

তবে বাকুতে ইউএই গ্লোবাল স্টকটেক সংলাপ এবং মিটিগেশন ওয়ার্ক প্রোগ্রাম নিয়ে দ্বিমত থাকায় তা নিয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি। এটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য আবারো দরকষাকষি করতে হবে বেলেম কপে।

লৈঙ্গিক ন্যায্যতা ও তরুণ সমাজের অংশগ্রহণের বিষয়টি কপ২৯ এ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে। আলোচনায় লিমা ওয়ার্ক প্রোগ্রাম অন জেন্ডারকে আরও ১০ বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। একই সঙ্গে কপ৩০ থেকে একটি নতুন জেন্ডার একশন প্ল্যান চূড়ান্ত করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। কপ২৯ বিশ্বে তরুণদের সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এখানে ১০ বছর বয়সী শিশুরা সেশন মডারেট করেছে এবং তরুণরা নানা পর্যায়ে নেগোসিয়েশনে অংশ নিয়েছে।

বলতে দ্বিধা নেই যে, কপ আয়োজনে আজারবাইজান সরকার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে। কিন্তু কপ প্রেসিডেন্সি হিসেবে তারা অর্থায়ন কপকে সাফল্যের পথে নেওয়ার জন্য কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সাফল্য দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। ফলে জলবায়ু তহবিলের কাক্সিক্ষত মাত্রা নির্ধারণসহ অনেক বিষয়ে প্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত বের করে আনতে ব্যর্থ হয়েছে কপ২৯। অবশ্য অনেকেই এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, কনভেনশনের আওতায় সকলের সম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ফলে ২০০ রাষ্ট্রকে কোনো বিষয়ে ঐকমত্যে নিয়ে আসার বিষয়টি খুব সহজ নয়।

বাকু কপে সিভিল সোসাইটি, এনজিও এবং তরুণ সংগঠনের প্রায় ৫৫ হাজার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছে, যা ছিল আশাব্যঞ্জক। তবে বিগত তিনটি কপের মতো এবারও ফসিল ফুয়েল লবির উপস্থিতি ছিল প্রকট। তার প্রমাণ মেলে সাইড ইভেন্টে ওপেক সক্রেটারি জেনারেলের একটি বক্তব্যে। তিনি দাবি করেন, ‘তেল আল্লাহর আশীর্বাদ। ফলে এই সম্পদ ব্যবহার অব্যাহত রাখতে হবে।’ সঙ্গত কারণে বাকু কপে দুবাই ঘোষণা অনুসরণ করে ফসিল ফুয়েল থেকে বিশ্বকে বের করে আনার যে ঘোষণা তা কীভাবে অর্জন করা যাবে সেটি নিয়ে এখানে কোনো আলোচনা হয়নি। সেখান থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার তিনগুণ করা এবং জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে সাশ্রয় দ্বিগুণ করার জন্য দরিদ্র দেশগুলোর অর্থায়ন পাওয়ার পথনকশা নিয়েও কোনো কার্যকর আলোচনা হয়নি।

দরিদ্র দেশগুলোর প্রতিনিধিদের অনেকেই দাবি করেছেন যে, গ্লাসগো কপ থেকে ফসিল ফুয়েল লবিস্টদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। পরে শারম আল শেখ, দুবাই এবং বাকুতে তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কপ৩০ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে লাতিন আমেরিকার আর একটি ফসিল ফুয়েল সমৃদ্ধ দেশে। ফলে সেখানে ফসিল ফুয়েল লবিস্টদের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলে তারা মনে করছেন। আর এটিকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে মোকাবেলা করার জন্য বছরজুড়ে সিভিল সোসাইটি, এনজিও এবং তরুণ সংগঠনগুলোর সরব হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তাদের বৈশ্বিক ঐক্য গড়ে তুলে অতি দূষণকারী দেশগুলোর রাজনীতিকদের ওপর চাপ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে বিশ্বকে অব্যাহত উষ্ণায়ন থেকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে না। অর্জিত হবে না প্রাক-শিল্পয়ান সময়ের বিবেচনায় শতকের শেষে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি বা ২ ডিগ্রির নিচে ধরে রাখার লক্ষ্য। আর তার সম্ভব না হলে বিশ্বকে জলবায়ু বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা যাবে না।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: প্রচ্ছদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

1 × four =