সর্বজয়ী জয়ার মুকুটে আরও একটি পালক যুক্ত হলো। বলিউড। হ্যাঁ, বিশ্ব সিনেমার অন্যতম ইন্ডাস্ট্রির ওটিটি প্রজেক্টে অভিষেক হয়েছে তার। শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) দেশটির প্রথম সারির ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি-ফাইভে মুক্তি পেয়েছে জয়া অভিনীত প্রথম হিন্দি ছবি ‘কড়ক সিং’। নির্মাণ করেছেন ‘পিংক’ খ্যাত অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী।
এটুকু তো সবার জানা যে, ছবিটিতে জয়া স্ক্রিন শেয়ার করেছেন বলিউডের এ সময়ের দাপুটে অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠির সঙ্গে। স্পষ্ট করে বললে, তার প্রেমিকার ভূমিকায় আছেন অভিনয়ের দেবী। এছাড়াও ছবিটিতে অভিনয় করেছেন মুম্বাইয়ের সানজানা সাঙ্ঘি ও মালায়লাম তারকা পার্বতী থিরুবথু।
জানা প্রসঙ্গ অবতারণার কারণ, মুক্তির পর কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে ‘কড়ক সিং’; সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া। ভারতের প্রথম সারির প্রায় সব গণমাধ্যমেই ছবিটির খবর-রিভিউ এসেছে। সেখান থেকেই বাছাই করে কিছু প্রতিক্রিয়া জানা যাক…
তবে তার আগে সংক্ষেপে কিছু রেটিং জানা যেতে পারে ছবিটির। ইন্ডিয়া টিভি থেকে মিলেছে ৫-এর মধ্যে সাড়ে ৪, ফিল্মফেয়ার ও এবিপি থেকে এসেছে সাড়ে ৩ করে, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও পিঙ্কভিলা দিয়েছে ৩ করে।
এবার একটু বিস্তর ব্যাখ্যা। হিন্দুস্তান টাইমসের রিভিউতে ‘কড়ক সিং’কে ‘সত্য ও বাস্তবসম্মত থ্রিলার’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। গল্প নিয়ে সমালোচকের মন্তব্য, ‘কড়ক সিং এমন কোনও কঠোর পিতা নন, যিনি তার সন্তানের সঙ্গে কঠোর আচরণের কারণে এমন নাম পেয়েছেন। বরং এটা এমন এক নীতিবান কর্মকর্তার গল্প, যাকে দুর্নীতিগ্রস্ত আখ্যা দেওয়া হয় এবং তিনি নিজেকে স্বচ্ছ প্রমাণের চেষ্টা করেন। এটা বেশ বাস্তবসম্মত গল্প। দেখতে গিয়ে আপনার মনে হবে না যে, হুট করে কোনও কল্পকাহিনি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
জয়া আহসানকে নিয়েও মনখুলে প্রশংসা করেছেন সমালোচক। বলা হয়েছে, ‘ত্রিপাঠির প্রেমিকার চরিত্রে বাংলাদেশি অভিনেত্রী জয়া আহসান কী দারুণ আবিষ্কার এবং তাকে দেখাও আনন্দের। গল্পের গতিতে তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্য বজায় রেখেছেন। যখন ন্যায়না (জয়ার চরিত্রের নাম) তার গল্প বলা শুরু করে, তখন দৃশ্যে ফ্ল্যাশব্যাক দেখানো হয়। এ সময় কয়েক মিনিট ধরে কোনও কথা নেই, কেবল হৃদয়স্পর্শী মিউজিক আর তাদের এক্সপ্রেশনেই বোঝা যায়, সম্পর্ক কত গভীর। এছাড়া তাদের অন্তরঙ্গ দৃশ্যটিও দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।’
নিউজ১৮-এর রিভিউতে বলা হয়েছে, ‘কিছু ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও এটি একবার দেখার জন্য বেশ ভালো ছবি। প্রথমার্ধের পুরোটা সময় দর্শককে রহস্যের জালে আটকে রাখে গল্পটি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে গল্পের সেই ওজন অনেকটা কমে যায়। গল্পটা বিভ্রান্তিকর বটে, কিন্তু অনুমান করা যায়।’জয়াকে নিয়ে এ সমালোচক বলেছেন, ‘জয়া আহসানের বলিউড অভিষেকের কথা বলতেই হয়। রোগীর কক্ষে ঢোকার অনুমতি না থাকায় হাসপাতালের লবিতে তার অপেক্ষার দৃশ্য, দর্শকের হৃদয় কেড়ে নেয়।’
ইন্ডিয়া টুডে’র সমালোচনায় ৫-এর মধ্যে মাত্র ২ রেটিং দেওয়া হয়েছে। ছবির ভালোটুকুর মূল কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে মুখ্য অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠিকে। ছবিটি নিয়ে সমালোচকের মন্তব্য- “নিম্নমানের এই থ্রিলার ছবির মান রেখেছেন ত্রিপাঠি। বলিউডে সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার এখন কোনও অনাবিষ্কৃত জনরা নয়। এই ঘরানায় ‘দৃশ্যম’, ‘কাহানি’, ‘তালাশ’র মতো বহু ছবি আমরা দেখেছি। বিভিন্ন ত্রুটি থাকার পরও পঙ্কজ ত্রিপাঠির উপস্থিতি ও সংলাপ ছবিটিকে উতরে নিয়েছে।”
জয়া আহসানকে নিয়ে এই সমালোচকের পর্যবেক্ষণ এরকম, ‘বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে জয়া একটি জনপ্রিয় নাম; তার চরিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গভীরতা কম। তবু এই অসাধারণ অভিনেত্রী উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন নিজ গুণে।’দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিক্রিয়া একেবারে হতাশাজনক বলা যায়। ৫-এর মধ্যে কেবল ১ রেটিং দিয়েছেন সমালোচক। সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘পঙ্কজ ত্রিপাঠির একটি ছবি কতটা খারাপ হতে পারে?’
আরও লেখা হয়েছে, ‘গল্পটা শুনতে চমৎকার মনে হলেও এর বাস্তবায়ন তেমন হয়নি। ছবির অভিনয়শিল্পীরা, বিশেষ করে পঙ্কজ ত্রিপাঠি ও পার্বতী থিরুবথুর মতো তারকা; যাদের ওপর আমরা ভরসা করি, তারাও হতাশ করলেন।’ছবির প্রতিক্রিয়া মিশ্র দেখা গেলেও প্রায় সব সমালোচনায় জয়া আহসানের প্রশংসা পাওয়া গেছে। ফলে এটা নিয়ে সংশয় নেই যে, অভিষেকেই বলিউডে নিজের দক্ষতার ছাপ রাখতে সক্ষম হয়েছেন ঢাকাই জয়া। এবার শুধু এগিয়ে যাবার পালা।
প্রসঙ্গত, ‘কড়ক সিং’ নির্মাতা অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর পরবর্তী ছবিতেও থাকছেন জয়া আহসান। তবে সেটি হিন্দি নয়, বাংলা ভাষায় নির্মিত হবে। এতে জয়ার বিপরীতে থাকবেন শাশ্বত চ্যাটার্জি। ছবির নাম ‘ডিয়ার মা’।