হিল্লোল-তিন্নি শখ-নিলয়ের বিচ্ছেদের গল্প

সংশপ্তক হাসান

হিল্লোল-তিন্নি

আজ বিনোদন অঙ্গনের এমন কয়েক জনের কথা জানবো যারা ভালোবেসে যৌথজীবন শুরু করলেও আলাদা হয়ে গেছেন। প্রথমেই হিল্লোল-তিন্নির অধ্যায়। শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি টিভির পর্দায় আসেন বিজ্ঞাপন দিয়ে। সবার মনযোগ কেড়ে নিয়েছিলেন। তখন অনেকের মুখে মুখে শোনা যেত তিন্নি অভিনীত বিজ্ঞাপনটির সংলাপ, ‘ভালো লাগে না? লাগে লাগে’। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তিন্নিকে। অল্পদিনেই হয়ে ওঠেন ছোটপর্দার নারী তারকাদের একজন। অন্যদিকে আদনান ফারুক হিল্লোলও কম ছিলেন না। একই অঙ্গনে অভিনেতা হিসেবে তারও ছিল তারকাখ্যাতি। ছোটপর্দার এই দুই তারকা ভালোবেসে যৌথজীবন শুরু করেছিলেন। ২০০৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিয়ে করেছিলেন তারা। সেসময় তাদের বিয়েটা শোবিজে আলোচিত বিষয় ছিল। বিয়ের পর তিন্নি-হিল্লোলের সংসার বেশ ভালোই ছিল। তিন্নি-হিল্লোল দম্পতির ঘরে আসে তাদের প্রথম সন্তান ওয়ারিশা। এ সময় মাতৃত্বজনিত কারণে তিন্নি সাময়িক ছুটি নেন অভিনয় থেকে। নির্ধারিত সময়ে ঘর আলো করে জন্ম নেয় ওয়ারিশা।

সন্তান জন্মের পর মাতৃত্বকালীন বিরতি ভেঙে ফের কাজে ফেরেন তিনি। কিন্তু ততদিনে জল অনেক দূর গড়িয়েছে। লক্ষ্য করেন শোবিজে তার আধিপত্য আর নেই। শূন্যস্থান পূরণ করেছে অন্যরা। এতে নিজেকে কিছুটা অস্তিত্বহীন মনে হয় তিন্নির। হারানো অবস্থান ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। আশ্রয় নেন বিকল্প পথের।

এদিকে হিল্লোলও এই সময়টাতে ব্যস্ত থাকতেন পেশাগত কাজে। তাছাড়া তিন্নিকেও তিনি দিয়েছিলেন পূর্ণ স্বাধীনতা। তার কোনো কাজেই হস্তক্ষেপ করতেন না তিনি। একটা সময় তার এই বেপোরায়া জীবনযাপন সম্পর্কে অবগত হতে বিলম্ব হয়নি হিল্লোলের। ফলস্বরূপ শুরু হয় কলহ। দাম্পত্য জীবনে অশান্তি চরম আকার ধারণ করলে নিজ বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন হিল্লোল। ঘটনাটি ২০০৯ সালের। এরপর থেকেই শুরু তাদের আলাদা বসবাস। হিল্লোলের ওই বাসায় তিন মাসের মতো একাই অবস্থান করছিলেন তিন্নি। এ সময় তাদের মধ্যে একাধিকবার সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। দুজনে এক ছাদের নিচে বসবাসটা আর হয়ে ওঠেনি। এক বছর সেপারেশনে থাকার পর ২০১১ সালের নভেম্বরে তিন্নি-হিল্লোলের আনুষ্ঠানুনিক বিচ্ছেদ হয়। সমাপ্তি ঘটে ভালোবেসে ঘরবাঁধা হিল্লোল তিন্নির পাঁচ বছরের সংসারের।

এদিকে জীবন থেকে তিন্নি চলে যেতেই কথাবন্ধু অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা নওশীনের সঙ্গে হিল্লোল নতুন সম্পর্কে জড়ান। শুরুর দিকে সম্পর্কের কথা বেমালুম অস্বীকার করেছিলেন হিল্লোল। নিজেদের ভালো বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু একসময় আর রাখঢাক সম্ভব হয়নি। গাঁটছড়া বাধেন হিল্লোল-নওশীন। তাদের দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে ছিল এটি।

অন্যদিকে তিন্নিও খুঁজে নেন নতুন ঠিকানা। তার একাকী জীবনে আসেন আদনান সাদ নামের এক ব্যবসায়ী। তিন্নিও সাড়া দেন সাদের ডাকে। ফলস্বরূপ ২০১৪ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি ফের বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিন্নি। এবারের বিয়েটাও হয়েছিল পরিবারের অমতে। তারা এক বছর পর্যন্ত বিয়ের খবর গোপনই রেখেছিলেন। অবশেষে পরিবারের মান ভাঙলে তাদের বাড়িতে ওঠেন তিনি।

কিন্তু তিন্নি যেন নীড় ভাঙা পাখি। গড়া তার ধাতে নেই। এমনটাই লক্ষ্য করা যায় তার দ্বিতীয় সংসারের ক্ষেত্রে। ফলে এ ঘরে আরিশা নামের এক মেয়ে জন্ম নিলেও গল্পের শেষটা ছিল ভাঙন দিয়ে। তিন্নির অভিযোগ ছিল তার স্বামীর বিরুদ্ধে। জানিয়েছিলেন প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই অভিযোগ তুলেই দ্বিতীয় ঘর ছেড়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে সাদ অভিযোগ করেছিলেন, তিন্নির অনিয়ন্ত্রিত ও উশৃঙ্খল জীবনযাপন নিয়ে। তিনি সেসময় জানিয়েছিলেন, তিন্নির জীবনযাত্রা ছিল মাত্রাতিরিক্ত অনিয়ন্ত্রিত। রাত বিরাতে ঘরে ফেরা ও নেশা করা ছিল তার নিত্যদিনের অভ্যাস। এছাড়া মেয়ে আরিশার খোঁজ খবরও নিতেন না ঠিকমতো। সাদ আরও একটি গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন তিন্নির বিরুদ্ধে। তিনি জানান, পরকীয়ায় আসক্ত ছিলেন তিন্নি। সাদেরই এক বন্ধুর সঙ্গে জড়িয়েছিলেন সম্পর্কে। তিন্নি-সাদের সম্পর্ক দুই বছরের মাথায় ভেঙে যায়।

তারপর থেকে একাই আছেন তিন্নি। বড় মেয়ে ওয়ারিশাকে নিয়ে বাসা বেঁধেছেন কানাডার মন্ট্রিয়েলে। ছোট মেয়ে আরিশা তার বাবা সাদের কাছেই আছে। মায়ের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ হয় তার। অন্যদিকে ওয়ারিশার সঙ্গেও নিয়ম করে কথা হয় বাবা হিল্লোলের। হিল্লোল-নওশীনও সুখেই আছে। হিল্লোল এখন যতটা না অভিনেতা তার চেয়ে বেশি ফুড ভøগার। আর নওশীন অভিনয়ের পাঠ চুকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বেছে নিয়েছেন চাকরিজীবন। গত বছর তাদের ঘরে এসেছে প্রথম সন্তান।

শখ-নিলয়

শোবিজ অঙ্গনের আরেকটি ঘরভাঙা দম্পতি শখ-নিলয়। ক্যারিয়ারের শুরুতেই পর্দায় আলোড়ন তুলেছিলেন আনিকা কবির শখ। সৌন্দর্য ও অভিনয় কোনোটারই ঘাটতি ছিল না তার মাঝে। বলা যায় যে কজন রুচিসম্পন্ন ও আধুনিক মডেল, অভিনেত্রী এসেছেন তাদের একজন শখ। একাধারে বিজ্ঞাপন ও নাটকে অভিনয় করে জমিয়ে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ার। নিলয় আলমগীরও রুপালী পর্দায় পা রেখেছিলেন মেধার সাক্ষর রেখে। প্রতিভা অন্বেষণ মূলক রিয়েলিটি শো ‘সুপার হিরো-হিরোইন’ বিজয়ী হওয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল তার এ যাত্রা। তবে প্রতিযোগিতাটি বড়পর্দার অভিনয়শিল্পী খোঁজার উদ্দেশ্যে হলেও বিজয়ী নিলয় আলমগীর থিতু হন ছোটপর্দায়। ব্যস্ত হয়ে পড়েন নাটক-বিজ্ঞাপনে। এই বিজ্ঞাপন সূত্রেই পরিচয় শখ-নিলয়ের। ২০১২ সালে একটি টেলিকম কোম্পানির বিজ্ঞাপন করেন তারা। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব। পরবর্তী সময়ে যা গড়িয়েছিল প্রণয়ে।

সম্পর্কে তারা যথেষ্ট রাখঢাক করলেও গণমাধ্যমের চোখ এড়াতে পারেননি। তবে সংবাদকর্মীদের অনুসন্ধানী চোখে ধরা পড়েও নিজেদের সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করেছেন ভালো বন্ধু হিসেবে। অবশ্য এসবের অবসান ঘটে ২০১৬ সালে। সে বছরের ৭ জানুয়ারি শখের মায়ের বাড়িতে ১০ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে হঠাৎই গাঁটছড়া বাঁধেন শখ-নিলয়। বিয়েতে অতিথি বলতে পরিবারের সদস্যরাই ছিলেন। সে সময় নিলয় বিয়ে নিয়ে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, হঠাৎ করেই পুরো কাজটা হয়েছে। আমাদের দুজনের পরবর্তী জীবনের জন্য সবাই দোয়া করবেন। তাদের অনুরাগী ও সহকর্মীরা বেশ সন্তুষ্ট হয়েছিলেন এই যুগলকে এক ছাদের নিচে আসতে দেখে। তাদের যৌথজীবনের শুভকামনাও জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু তবুও হয়নি শেষ রক্ষা। এক বসন্ত ঘুরতে না ঘুরতেই টালমাটাল হয়ে যায় সংসার জীবন তাদের। নিজেদের মধ্যে মান-অভিমান, ঝগড়া-ঝাঁটি নিত্যসঙ্গী হয়ে পড়ে। ফলে দুজনের দুটি পথ দুদিকে বেঁকে যেতে খুব একটা সময় লাগেনি।

কিন্তু প্রেমের মতো বিচ্ছেদও তারা গোপন রেখেছিলেন। ২০১৭ সালে ওমরাহ করতে গিয়েছিলেন শখ-নিলয়। যাওয়ার সময় দাম্পত্য জীবনের দীর্ঘায়ু কামনা করে সামাজিক মাধ্যমে নেটিজেনদের কাছে চেয়েছিলেন দোয়া। কিন্তু তারাই চাইছিলেন না একসঙ্গে থাকতে। ফলে ২০১৭ সালে ছাড়াছাড়ি হয় তাদের। তবে বিচ্ছেদের কারণ সম্পর্কে সেসময় দুজনেই চুপ ছিলেন। তবে ছয় বছর পর নিলয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে মুখ খোলেন শখ। ডিভোর্স প্রসঙ্গে শখ জানিয়েছিলেন, তার পরিবার এটাকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছে। কেননা বোঝাপড়া হয়নি বলেই তারা দাম্পত্যে ইতি টেনেছিলেন।

শখের সাথে বিচ্ছেদের পর বেশ কয়েক বছর একা ছিলেন নিলয়। এই একাকিত্ব তিনি ঘোচান ২০২১ সালের ৭ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো তাসনুভা তাবাসসুম হৃদির সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসে। এই বিয়েটাও ছিল তার ভালোবাসার ফসল। এ প্রসঙ্গে নিলয় বলেছিলেন, ‘গত বছর (২০২০) লকডাউনের মধ্যে ফেসবুকে আমাদের পরিচয়ের পর দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে পারিবারিকভাবে অল্প কয়েকজনের উপস্থিতিতে সর্বোচ্চ সুরক্ষা মেনে আমাদের বিয়ে হয়েছে। সবার দোয়া চাই। নিলয় ভালো আছেন দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে। এ খবর সামাজিক মাধ্যমেই পাওয়া যায়। স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটানো মুহূর্ত নিয়মিত প্রকাশ করেন সামাজিক মাধ্যমে। নেটিজেনরাও এই সুখী দম্পতির স্থিরচিত্রগুলো লুফে নেন। ছবিগুলোর নিচে জমে থাকা মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়াই বলে দেয় সে কথা।

এদিকে শখও শুরু করেন দ্বিতীয় সংসার জীবন। তবে আগের মতো এবারও বিয়ে নিয়ে লুকোচুরি করেন শখ। ২০২০ সালের ১২ মে তিনি বিয়ে করেন ব্যবসায়ী রহমান জনকে। ফেসবুকে রিলেশনশিপ বদলে নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যান এ নায়িকা। ফলে স্বামীর সঙ্গে তার বিয়ের ছবি ভেসে বেড়ালেও নিশ্চিত হওয়ার পথ বন্ধ করে দেন তিনি। পরে তার শশুরবাড়ির লোকজনের কাছ থেকে জানা গিয়েছিল যৌথজীবন শুরু করেছেন তারা। তাদের মন্তব্য শুনে বোঝা যায়, মডেল অভিনেত্রী শখকে নিজের পরিবারে পেয়ে বেশ আনন্দিত তারা। এদিকের ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর শখ সন্তান জন্ম দেন। এরপর মাতৃত্বকালীন বিরতি ভেঙে কাজেও ফেরেন তিনি। এখন সুখেই আছেন শখ। সামলাচ্ছেন স্বামী-সন্তান। দাঁড়াচ্ছেন ক্যামেরার সামনে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: দাম্পত্য

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

sixteen − 1 =