হুমায়ুন ফরীদির প্রয়াণ দিবস আজ

আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি গুণী অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি প্রয়াণ দিবস। নাটক, চলচ্চিত্র কিংবা মঞ্চ- সবখানেই ছিল হুমায়ুন ফরীদির অবাধ বিচরণ। মঞ্চ দিয়েই শুরু। ঢাকা থিয়েটারের ‘শকুন্তলা’, ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘কীর্তনখোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’-এর মতো মঞ্চনাটকে অভিনয় করে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন। আদায় করে নেন দর্শকের ভালোবাসা। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সদস্য হিসেবে গ্রাম থিয়েটারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

১৯৮২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘নীল নকশার সন্ধ্যায়’ ও ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’ নাটকে অভিনয় করে তিনি তাক লাগিয়ে দেন। তার অভিনীত ধারবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’ আজও দর্শকের স্মৃতির পাতায় ভাস্বর। এতে কানকাটা রমজান চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি।

দেশীয় চলচ্চিত্রের তখনকার বেহাল অবস্থা দেখে রূপালি পর্দার জন্য কাজ করবেন কি-না এ বিষয়ে দ্বিধায় ছিলেন ফরীদি। শেষ পর্যন্ত সুবর্ণা মুস্তাফার অকুণ্ঠ সমর্থনে এবং নিজের দৃঢ়তায় এক নতুন আঙ্গিক নিয়ে বড় পর্দায় আসেন ফরীদি। তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’ তার অভিনীত প্রথম ছবি। নব্বই দশকে বাণিজ্যিক ছবির পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘সন্ত্রাস’, ‘দিনমজুর’, ‘বীরপুরুষ’ ও ‘লড়াকু’ ছবিতে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপরেই দেশীয় চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্র পায় এক অন্যমাত্রা।

অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছিল যে, একসময় মানুষ নায়কের পরিবর্তে তাকে দেখার জন্যই প্রেক্ষাগৃহে যেতো। তাই শহীদুল ইসলাম খোকন ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘অপহরণ’, ‘দুঃসাহস’সহ ২৮টি ছবির মধ্যে ২৫টিতেই রাখেন ফরীদিকে। তার অভিনীত ছবির তালিকায় আরও আছে ‘দহন’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘দূরত্ব’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘অধিকার চাই’, ‘ত্যাগ’, ‘মায়ের মর্যাদা’, ‘মাতৃত্ব’ ও ‘আহা!’র মতো ছবিতে অভিনয় করে এ দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনেন ফরীদি।

১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। তার বাবার নাম এটিএম নুরুল ইসলাম, মায়ের নাম বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে ফরীদি ছিলেন দ্বিতীয়। ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে। একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হন স্নাতক করতে। কিন্তু পরের বছরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় কাঁধে তুলে নেন রাইফেল। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে দামাল ছেলের মতো লড়াই করেছেন ফরীদি।

স্বাধীনতার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক জীবন শুরু করেন হুমায়ুন ফরীদি। এখানেই তার অভিনয় প্রতিভার বিকাশ হয়েছিল। অর্থনীতির খটমটে তত্ত্ব বাদ দিয়ে সেলিম আল দীনের কাছে নাট্যতত্ত্বে দীক্ষা নেন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই সদস্যপদ পান ঢাকা থিয়েটারের। এই নাট্যদল থেকেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে তার অভিনয়ের রঙগুলো। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদক।

বেশ কিছুদিন ফুসফুসের জটিলতাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। এই গুণী শিল্পীর ব্যক্তিজীবন খুব বেশি সুখের ছিলো না। আশির দশকের শুরুর দিকে মিনুকে বিয়ে করেছিলেন। প্রথম সংসারে দেবযানী নামের এক মেয়েকে রেখে গেছেন তিনি। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিলেন ফরীদি। ২০০৮ সালে সেই সম্পর্কেরও বিচ্ছেদ হয়। পরের সময়গুলো অনেকটা নিঃসঙ্গ কেটেছে এই শক্তিমান অভিনেতার।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

one + seven =