দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ হাজার মে.ও. বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব

আফরোজা আখতার পারভীন

সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর সমন্বয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ হাজার মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। দেশে বায়ু বিদ্যুতের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এখন প্রয়োজন গবেষণা এবং কার্যক্রম গ্রহণ। বিসিপিসিএল-ইপি ক্লাইমেট টকসের ১১তম পর্বে আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের রেক্টর ড. আলাউদ্দিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।

তিনি বলেন, কপ সম্মেলনগুলো ব্যর্থ হচ্ছে বা হবে তা ভাবা সঙ্গত নয়। পুরো লক্ষ্য অর্জিত না হলেও সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এটাও ভালো দিক। তবে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে অর্থায়ন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থেকেই যায়। জলবায়ু সম্মেলনের কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা বেড়েছে সারা বিশ্বে। আগে জলবায়ু তহবিল সহজে পাওয়া যেতো, এখন ঋণ হিসেবে নিতে হচ্ছে। ঋণ নেওয়ার চেয়ে নিজেদের অর্থে বাস্তবায়ন করতে পারলে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে।

মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ হাজার মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। তেমন গবেষণা হয়নি তবে আমার মতে এটা সম্ভব। কক্সবাজারে ৬৬ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই টারবাইন বসানো হয়েছে।

প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোনো একটি মডেল আজীবন চলবে এমনটি ভাবার সুযোগ নেই। সোলার হোমস সিস্টেমে বাংলাদেশ এখন মডেল। আমি মনে করি, দুর্গম এলাকায় এখনও এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পেলে মানুষ আকৃষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। সোলার হোমস সিস্টেমে কিন্তু সংখ্যায় বলছি, মেগাওয়াট স্কেলে বলছি না। তবে এখন এগুলো সর্বশেষ কি অবস্থায় রয়েছে তা যাচাই করে দেখা উচিত।

নেট মিটারিং প্রসঙ্গে বলেন, এখন ৫০ মেগাওয়াটের মতো নেট মিটারিং রয়েছে।  ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ১ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। নেট মিটারিংয়ে নিজের টাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে তিন থেকে সাড়ে ৩ টাকার মতো খরচ পড়ে। ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করলে উৎপাদন খরচ সাড়ে ৪ টাকার নিচে থাকে। অন্যদিকে সঞ্চালন বিদ্যুতে প্রায় ১০ টাকার মতো উৎপাদন খরচ হয়। সুতরাং নেট মিটারিং শিল্পের জন্য অনেক সুবিধাজনক। তবে এ বিষয়ে আরও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।

সেচে ডিজেল পাম্পগুলোকে সোলারে রূপান্তর করা সম্ভব। এখাতে বিএডিসিসহ অনেকগুলো সংস্থা কাজ করছে, একটি আইডিয়াল মডেল তৈরি করা উচিত। এসব পাম্প কোনো ব্যক্তি মালিকানায় না রেখে কৃষক সমবায় সমিতির মাধ্যমে দেওয়া গেলে সুবিধা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব।  মডেল এখনও তৈরি হয়নি, স্রেডা এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। একসময়ে সোলার উপকরণের দাম ছিল ডলারে এখন সেন্টসে নেমে এসেছে। একটি নির্দিষ্ট পাম্পকে প্রকল্প বিবেচনা না করে, অঞ্চল ভিত্তিক করা গেলে অর্থনৈতিকভাবে সফল হওয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্লিন ফুয়েল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন চ্যালেঞ্জিং, তবে অসম্ভব নয়। এ জন্য প্রতিবেশি দেশ থেকে বিদ্যুৎআমদানি করতে হবে। মায়ানমার থেকে জলবিদ্যুৎ আনার সম্ভাবনা রয়েছে ৪০ হাজার মেগাওয়াটের মতো। নেপাল ও ভুটান থেকেও সরবরাহ পাওয়া যেতে পারে। বর্তমানে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, তবে যে গতিতে কাজ হচ্ছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে।

জলবায়ু তহবিলের অর্থায়ন জটিলতা দূর করার তাগিদ দিয়ে বলেন, সিডিএম প্রকল্পে সাড়া পেতে সময় লাগে ১ বছর, অনুমোদন পেতে সময় লাগে আরও ২ বছর। এটি সহজ করা না গেলে প্রকৃত সুফল পাওয়া কঠিন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × 5 =