৩০ চীনা কোম্পানির ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি মিলেছে: বিডা চেয়ারম্যান

চীন সরকার এবং চীনা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশ পেয়েছে, তার ১০০ কোটি ডলারের বেশি হবে বিনিয়োগ।

চীনের ৩০টি কোম্পানি এ ১০০ কোটি ডলার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে বলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানিয়েছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর শেষে শনিবার চীন থেকে দেশে ফেরেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

ওই সফর নিয়ে রোববার দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়েজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, “আমরা টোটাল ২.১ বিলিয়ন ডলারের কমিটমেন্টের কথা বলছি। এই ২.১ বিলিয়ন আগের সব বড় বড় নম্বর থেকে একটি বড় কারণে আলাদা।

“সেই পার্থক্যটা হচ্ছে, আগে যে নম্বরগুলো আমরা সিকিউর করে এসেছি, তার একটি বড় অংশ ছিল লোন ফর্মে। দেখা যেত একটা বড় অংশ আমরা লোন নেব। লোন নেওয়ার একটি পজেটিভ দিক আছে, পজেটিভটা হচ্ছে ইমিডিয়েটলি টাকাটা চলে আসে। নেগেটিভটা হচ্ছে, এ টাকাটা আমাদের ফেরত দিতে হয়।”

তিনি বলেন, “ইকোনমিতে এই টাকাটা ঢোকে এবং ইন্টারেস্টসহ বের হয়ে যায়। সেই জায়গায় যদি ইনভেস্টমেন্ট আসে, সেটি আমাদের অর্থনীতিতে প্রবেশ করে যায়। এই টাকা কখনও এই দেশ থেকে যাবে না। এই বিনিয়োগের ফলে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান হবে সেটা ঋণ থেকে কখনোই হয় না।

“এবার এই ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ১ বিলিয়নের বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি। এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৩০টি চীনা কোম্পানি। এটি মূলত চট্টগ্রামের আনোয়ারাতে চীনা শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর নির্ভর করে।”

প্রায় ৮০০ একর জমির ওপর সেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ চলছে। এ প্রকল্পের কাজ অনেক আগে শুরু হলেও ২০২২ সালের পর তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে তথ্য দেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “গত তিন মাসে আমরা এখানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি এবং অনেকগুলো বড় বড় সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে। তাদের সঙ্গে একটা নেগোসিয়েশনে এসেছে, যে কারণে বিনিয়গকারীরা এখন খুবই কনফিডেন্ট ফিল করছেন যে এই বছরের কোনো এক সময় আমরা নির্মাণ কাজ শুরু করব।

“জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, এখন আমরা নির্মাণকাজে যাব। সেটার ওপর নির্ভর করেই কিন্তু চীনা কোম্পানি আমাদের এখানে আসার কথা চিন্তাভাবনা করছে।”

আশিক চৌধুরী বলেন, যে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণের কথা বলা হচ্ছে, এর অর্ধেক চট্টগ্রামের চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের জন্য। বাকি অর্ধেক যাবে মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে।

“আমাদের এই সফরে একটা অতিরিক্ত প্রস্তাব এসেছে চায়না থেকে, ওখানে (মোংলায়) উনারা একটা চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কথা চিন্তাভাবনা করছেন। আমরা যদি রাজি থাকি, তাহলে উনারা ওখানে দ্বিতীয় চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে কাজ করবেন।”

স্বাস্থ্য সেবা খাতে সহযোগিতা এবারের চীন সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, “১২ শতাংশের মত এসেছে অনুদান, যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলারের মত। এর মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন ডলার কারিগরি সহায়তার জন্য এবং ১০০ মিলিয়ন হাসপাতালের জন্য। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে বাংলাদেশে অত্যাধুনিক হাসপাতাল তৈরি করা এবং বাংলাদেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য যে যাত্রা ভারত-থাইল্যান্ডের দিকে হয়, চেষ্টা করছি, যাতে এই সাপোর্টটা তারা চায়না থেকে দেওয়ার চেষ্টা করে।”

আশিক চৌধুরী বলেন, চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিষয়টি বড় প্রভাব রেখেছে।

“আমরা অনেকদিন ধরে চীনের বিনিয়োগের কথা বলছি। চীনা বিনিয়োগের যে গুরুত্ব, সেটা আমরা আবারও গিয়ে অনুধাবন করেছি। আমরা এই সুযোগ আসলে খুব কম গ্রহণ করেছি। চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা এখনও আছে, কিন্তু খুব স্বল্প পরিসরে আছে। আমাদের আরও বেশি হারে চীনে যেতে হবে। চীন নিজেই একটি মহাদেশ, যেখান থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আসা সম্ভব।”

গত আগস্ট থেকে চলতি মার্চ মাস পর্যন্ত ৩৪টি চীনা কোম্পানি বেপজাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে আর্থিক প্রতিশ্রুতি প্রায় ১৬০ মিলিয়ন ডলারের মত।

“আমাদের ভিশনটা হচ্ছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর ফ্যাক্টরি হিসাবে আবির্ভূত হবে। শুধুমাত্র বাংলাদেশের লোকাল মার্কেট নিয়ে কাজ করার জন্য চায়নিজ ইনভেস্টরদের আমরা আসতে বলছি না। আমরা বলছি, আপনারা আসেন, বাংলাদেশের লোকাল মার্কেট, (ভারতের) সেভেন সিস্টার্স, নেপাল, ভুটান নিয়ে কাজ করেন।

“আমরা বেশ কয়েকটা পোর্টের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আমরা মাতারবাড়িতে একটা ডিপ সি পোর্ট করছি, চিটাগংয়ে একটা বে টার্মিনাল করার কথা বলছি। আমাদের পোর্ট কানেক্টিভিটি তৈরি হয়ে গেলে বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাক্চারিং হাব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে সাউথ, সাউথইস্ট এশিয়া ও পটেনশিয়ালি রেস্ট অব দ্যা ওয়ার্ল্ডে এক্সপোর্ট করেন। এই প্রোপজিশনটাই আমরা উনাদের কাছে নিয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি সামনে আমরা অনেকগুলো সিরিজ অব ইনভেস্টমেন্ট দেখতে পাব।”

চার দিনের সফরে প্রধান উপদেষ্টা চীনে পৌঁছান বুধবার। শুক্রবার তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর বেইজিংয়ে চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বিনিয়োগ সংলাপে অংশ নেন মুহাম্মদ ইউনূস।

 

তার এই সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে একটি চুক্তি ও আটটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ চীন সরকার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।

জলবিদ্যুৎ, বন্যা মোকাবিলা ও দুর্যোগ হ্রাস, নদী খনন এবং পানিসম্পদ উন্নয়নের মত বিষয়ে সহযোগিতা জোরদারেও ‘একমত হয়েছে’ বাংলাদেশ ও চীন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × 3 =