৭ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে হংকংয়ের কাছে হার বাংলাদেশের

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে হংকং চায়নার বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। দুর্ভাগ্য হামজা চৌধুরীর গোলে লিড নিয়ে ড্রেসিংরুমে যাওয়ার আগে ম্যাচে সমতা ফেরায় হংকং চায়না। দ্বিতীয়ার্ধেই জমা ছিল সব রোমাঞ্চ! জমজমাট ম্যাচে গোল হলো আরও ৫টি।

শেষ দিকে ৯৮ মিনিটে যোগ হওয়া সময়ে শমিত সোম বাংলাদেশকে সমতায় (৩-৩) ফিরিয়ে আশার সঞ্চার করেছিলেন। কিন্তু রেফারির বাঁশি বাজার আগে রাফায়েল মার্কিজের হ্যাটট্রিকে হংকংয়ের কাছে ৪-৩ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে বাংলাদেশের।

বৃহস্পতিবার জাতীয় স্টেডিয়ামে শমিত সোম ও জামাল ভূঁইয়াকে ছাড়াই খেলতে নামে স্বাগতিক দল। ৪-৪-২ ফর্মেশনে হংকংয়ের বিপক্ষে লড়াই করেছে। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে ম্যাচ জমে উঠে। যদিও ৬ মিনিটে হংকং ভালো সুযোগ পায়। বাম প্রান্ত দিয়ে ঢুকে ম্যাট অরের শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে গেছে। ৯ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে রাকিবের শট গোলকিপারের হাতে জমা পড়ে।

১৩ মিনিটে গ্যালারিতে আনন্দের বন্যা। গোল করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। হামজা চৌধুরীর ডান পায়ের বাঁকানো ফ্রি-কিক এক ডিফেন্ডারের মাথা ছুঁয়ে গোলকিপারের ওপর দিয়ে জড়িয়ে যায় জালে। এটি লাল সবুজ জার্সিতে হামজার দ্বিতীয় গোল। গত জুনে প্রীতি ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে প্রথম গোল এসেছিল।

লিড নেওয়ার পর হংকংয়ের একজনের জোরালো শট রুখে বাংলাদেশের জাল অক্ষত রাখেন মিতুল মারমা। ২৬ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েও রাকিবের ক্রসে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম মাথা ছোঁয়াতে পারেননি। ৩৯ মিনিটে সুযোগ পায় হংকংও। কিন্তু এভারটনের শট দূরের পোস্ট দিয়ে গেছে।

শেষ পর্যন্ত যোগ করা সময়ে সমতায় ফেরে হংকং। কর্নার থেকে বল ঘুরে আসে এভারটনের সামনে, বক্সের একদম সামনে থেকে ফাঁকায় এই ফরোয়ার্ড আলতো টোকায় মিতুল মারমাকে পরাস্ত করেন।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে হংকং লিড নেয়। ৫০ মিনিটে মোহাম্মদ সোহেল রানার ভুল পাস থেকে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। বক্সের বাইরে থেকে সোহেলের ব্যাক পাস মিতুলের উদ্দেশ্যে, কিন্তু বলে গতি না থাকায় রাফায়েল মার্কিয়েজ দ্রুত এসে বলের নিয়ন্ত্রন নিয়ে সহজেই স্কোরলাইন ২-১ করেন।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরেক অভাবনীয় ভুলে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। তেমন কোনো চাপ ছিল না, তাড়াহুড়া করার দরকারও ছিল না, কিন্তু সোহেল রানা জুনিয়র বক্সের বাইরে থেকে ব্যাক পাস দিলেন মিতুলের উদ্দেশে। সে পাসেও ছিল না গতি। ছুটে এসে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মিতুলকে আবারও পরাস্ত করলেন বদলি ফরোয়ার্ড রাফায়েল মার্কেস।

এরপরই একসাথে তিনটি পরিবর্তন আনেন কাবরেরা। সোহেল রানা সিনিয়র, সোহেল রানা জুনিয়র ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে তুলে জামাল, শোমিত ও ফাহামিদুলকে নামান কোচ। ৬৮তম মিনিটে শেখ মোরসালিন ডান দিক দিয়ে আক্রমণে উঠলেও লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে হতাশা বাড়ান।

৭৪ মিনিটের গোলে বাংলাদেশের হার নিশ্চিত হয়ে যায় অনেকটাই। সতীর্থের লং পাস এভারতন নিয়ন্ত্রণে নেন। দেখে-শুনে সাদ উদ্দিনের পায়ের ফাঁক দিয়ে গোলমুখে বল বাড়ান তিনি। নিখুঁত প্লেসিং শটে বাকি কাজটুকু সারেন রাফায়েল।

শেষ দিকে এসে তাজের জায়গায় যুক্তরাস্ট্র প্রবাসী জায়ান আহমেদের অভিষেক হয়। একটি ভয় ধরানো ক্রসও করেছিলেন ২১ বছর বয়সী ডিফেন্ডার। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি।

তবে ৮৪ মিনিটে বাংলাদেশ ব্যবধান কমায়, শেখ মোরসালিনের গোলে। জামালের ফ্রি-কিকে এক ডিফেন্ডার হেড করার পর তা চলে যায় ফাহামিদুলের পায়ে, ইতালি প্রবাসী খেলোয়াড়ের ভলি গোলকিপার ঠিকমতো তালুবন্দী করতে পারেননি, সামনে থাকা মোরসালিন ডান পায়ে ঠিকই ঠিকানা খুঁজে নেন।

যোগ করা সময়ে বাংলাদেশ হার এড়ায়। মোরসালিনের কর্নার থেকে এক ডিফেন্ডার মাথা ছুঁইয়ে শমিত চলতি বলে পোস্টের সামনে থেকে হেডেই ৩-৩ স্কোর করেন।

তবে ম্যাচের অন্তিম মুহূর্ত হংকং জয়সূচক গোল পায়। নিজেদের ভুলে রাফায়েল গোল করে বাংলাদেশের হার নিশ্চিত করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × five =