দুই মাস চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরলেন শারমিন আঁখি  

ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউডে দীর্ঘ দুই মাসের চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বাসায় ফিরেছেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী শারমিন আঁখি।

গত ২৮ জানুয়ারি মিরপুরের একটি শুটিং বাড়ির মেকআপ রুমে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন শারমিন আঁখি। সেদিনই তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেই বিস্ফোরণে আঁখির হাত, পা, চুলসহ শরীরের ৩৫ ভাগ পুড়ে যায়। এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে প্লাজমা দিতে হয়েছিল।

 

বাসায় ফেরার আগে শারমিন আঁখি আজ শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। তিনি বলেন, সামনের ৬ মাস আমার জন্য আরও অনেক ভয়ংকর। কারণ, আগামী ৬ মাস আমি শরীরে রোদ লাগাতে পারব না। লাইটের আলো থেকেও নিজেকে দূরে রাখতে হবে। নিজেকে পুরোপুরি অন্ধকার ঘরে বন্দী রাখতে হবে। যার জন্য গতকাল (২৭ মার্চ) একবার রোদ গায়ে লাগিয়ে নিয়েছি।

 

শারমিন আঁখি বলেন, এই ৬ মাস কোনো ধরনের আলো লাগানো যাবে না। অনেক নিয়মের মধ্যে চলতে হবে। খারাপ লাগে না যে তা নয়, তবুও মানতে হবে। দুঃখের পরে যেমন সুখ আছে, তেমন খারাপের পরে ভালো আছে। সেই সুদিনের অপেক্ষায় আমি।

এই অভিনেত্রী বলেন, যখন আইসিইউতে ভর্তি হই তখন এক ধরনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম যে, আমি হয়তো আর ফিরতে পারব না। ডাক্তাররাও আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। নিঃশ্বাস চলে যাওয়া কী জিনিস সেটা আমি উপলব্ধি করেছি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তখন নিজেকে নিজে সাহস দিতাম। আমাকে ফিরতে হবে। যখন আমি শুনতে পাই আমাকে ঘিরে ভুল তথ্য ছড়িয়ে গেছে তখন আমাকে এটা আঘাত করেছে যে, আমি মারা গেলে একটা অভিযোগ নিয়ে যেতে হবে। আমি এভাবে মরতে চাই না। আমার একটা ক্লিন ইমেজ আছে। আমি নিয়মের মধ্যে জীবনযাপন করে আসছি। সোজা সাপটা কথা বলতে পছন্দ করি। আমার জীবনটা আমার মতো করে সাজিয়েছি। সেই সাহস নিয়েই পণ করেছি আমাকে বাঁচতেই হবে। সেই সাহস নিয়েই আজ আপনাদের মুখোমুখি।

 

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কে এই পোড়া হাত-মুখ দেখাবে বলুন? কেউ দেখাবে না। কোনো নায়িকা মেকআপ ছাড়া বের হতে চায় না। তাহলে আমি কেন পোড়া চেহারা নিয়ে সামনে এসেছি? কারণ, আমাকে নিয়ে কুৎসা রটানো হয়েছে। কীভাবে ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়টি না এসে কী করেছি সবার মনে এই একটাই প্রশ্ন। আসলে আমাদের গায়ে গন্ধ বেশি। যার কারণে এরকম ছড়ানো হয়েছে। আজ নুসরাত ইমরোজ তিশা হলে এটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলত না। আমি বলেই এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন। ২০ ভাগ বার্ন যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে আমার ৩৫ ভাগ। এখন বিষয়টা যতটা সহজভাবে বলছি তখন ততটা সহজ ছিল না। শুধু এটুকুই বলব সামনে আমার যুদ্ধটা অনেক কঠিন। সামনের ৬ মাসের যুদ্ধটা যদি ঠিকঠাক মতো করতে পারি তাহলে নিশ্চয় ভালো কিছু করতে পারব।

ঘটনাস্থল নিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, একটা বাড়ি পুরোপুরি প্রস্তুত না করেই শুটিংয়ের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এখনো হচ্ছে। নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা উচিত কি না? এই ঘটনার পরেও যদি নিরাপত্তা নিয়ে না ভাবা হয় তাহলে এটা আমাদের ব্যর্থতা যে, আমাদের শিল্পীদের নিরাপত্তা দিতে পারছি না। সংগঠনগুলো ব্যর্থতার পরিচয় দেবে। যখন ঘটনাটি ঘটে দুই হাত সামনে দিয়ে নিজের চেহারাটা কিছুটা রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। আমার হাতের চামড়া সব পুড়ে যায়। মুহূর্তেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। বার্নের যন্ত্রণা অসহনীয়। যখন ঘটনাটি মনে হয় তখন বিষয়টি সামনে ভাসে। এগুলো বলতে ভালো লাগে না। খুব খারাপ লাগে। এটা কাউকে বোঝাতে পারব না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

one × two =