সালেক সুফী
শ্রাবণ মেঘের দিনে অঝোর ধারায় বর্ষণ ঝুঁকিতে থাকা দুটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ ছিল বাংলার বাঘ, বাঘিনীদের; গতকাল ঢাকার শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং সিলেট জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। প্রতিপক্ষ পরাক্রমশালী আফগানিস্তান আর ভারত। বৃষ্টিবিঘ্নিত দুটি ম্যাচ ভালো খেলে জয় করেছে বাংলাদেশ। ১৬ জুলাই ২০২৩ দিনটিকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের লাল হরফে লেখা দিন হিসাবেই স্মরণ করতে হবে। এই প্রথম বাংলাদেশ পুরুষ দল দ্বিপাক্ষিক মোকাবেলায় টি২০ সিরিজ জয় করলো শক্তিশালী আফগানিস্তান দলের বিরুদ্ধে তা-ও আবার ধবল ধোলাই করে। বাংলার মেয়েরাও হুঙ্কার তুলেই প্রথম ওডিআই ম্যাচ জয় করলো বাঘের ডেরায় ভারতীয় মেয়েদের ৪০ রানের ব্যাবধানে হারিয়ে। অভিনন্দন বাংলাদেশের দুরন্ত দুর্বার ছেলে মেয়েদের।
বাংলাদেশ এখন নানা বিষয়ে নানা সংকটে। কিন্তু ক্রিকেট একমাত্র ব্যাতিক্রম যা গোটা জাতিকে বিনি সুতোর মালায় গেথে রেখেছে। তামিম অবসর নাটকের প্রতিক্রিয়ায় আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজ ১-২ ব্যবধানে হেরে যাবার পর যেভাবে বাংলাদেশ নিজেদের অপেক্ষাকৃত দুর্বল ফরমেট টি২০ দাপটের সঙ্গে জয় করলো তাতে উচ্ছসিত না হওয়ার কারণ নেই। আফগানিস্তান এই ফরম্যাটে তুখোড় দল। উপরন্তু দলটি নিবিড় প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলো।
জানি বাংলাদেশ দলে নানা কারণে অভিজ্ঞ তামিম, মুশফিক, মাহদুল্লাহ নেই। সাকিবের নেতৃত্বে দলে তারুণ্যের আধিক্য। সিলেট জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত দুই ম্যাচ বাংলাদেশ বলা যায় দাপটের সঙ্গে জিতে আফগানিস্তানকে ধবল ধোলাই করেছে। এই প্রথম আফগান দলের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়। ১২ ম্যাচ খেলে এযাবৎ বাংলাদেশ জিতেছে ৫ ম্যাচ, হেরেছে ৬। মনে আছে ভারতে অনুষ্ঠিত একটি সিরিজে (৩-০) ধবল ধোলাই হয়েছিল বাংলাদেশ। এবারে সেটির হিসেব নিকেশ পুষিয়ে দিলো করায় গন্ডায়।
কাল টস জয় করে বৃষ্টি সম্ভাবনা মাথায় রেখে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শাকিব। শুরুতেই দুর্দান্ত গতি এবং সুইং দিয়ে তাসকিন হকচকিয়ে দিলো আফগানদের। মারকুটে গুরবাজ আর জাজাই সুযোগ পেলো না কিছু করার। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বড় ইনিংস গড়তে পারেনি অতিথি দল বাংলাদেশের আঁটোসাঁটো বোলিং আর তুখোড় ফিল্ডিংয়ের কারণে। আজমাতুল্লাহ ওমারজাই (২৫), ইব্রাহিম জাদরান (২২), করিম জানাত (২০) করে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিল। কিন্তু তাসকিন (৩/৩৩), সাকিব (২/১৫) এবং মুস্তাফিজ (২/৩০ ) আফগান ইনিংস ১১৬/৭ সীমিত রেখেছিলো বৃষ্টি সংক্ষিপ্ত ১৭ ওভারে।
বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচে ব্যাটিং সূচনায় লিটনের সঙ্গী ছিল আফিফ হোসেন। বেশ কিছু দিন ধরেই আফিফ টপ অর্ডারে ব্যাটিং করার ইচ্ছা প্রকাশ করছিলো। কাল ওকে সুযোগ দিয়ে বাজি ধরেছিলো বাংলাদেশ। বলাবাহুল্য বাজিতে জিতেছে বাংলাদেশ। প্রথম উইকেট জুটি ৯.১ ওভারে ৬৭ রান তুলতেই জয়ের সুবাস পায় বাংলাদেশ।
শান্ত ব্যর্থ হলেও সাকিব, হৃদয়কে সঙ্গী করে জয়ের পথে নিয়ে যায় বাংলাদেশকে। শেষদিকে হৃদয় ফিরে গেলেও জয়ের তরী তীরে ভাড়ায় সাকিব। ৫ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটে ম্যাচ জয় এবং সিরিজে ধবল ধোলাই অর্জন করে বাংলাদেশ। গর্বিত দলনায়ক সাকিব চৌকষ পারফরম্যান্সের কারণে অর্জন করে ম্যাচ এবং সিরিজ সেরার সম্মান। ওডিআই সিরিজ হেরে বাংলাদেশের হতাশা অবশ্যই মুছে যাবার কথা টি২০ সিরিজ দাপটের সঙ্গে জয় করে।
বাংলার বাঘিনীদের হুঙ্কার
বাংলাদেশ পুরুষ দল সিলেটে টি২০ সিরিজ জয়ের আগেই ঢাকার মিরপুরে বাঘের ডেরায় ওডিআই সিরিজের প্রথম ম্যাচ দাপটের সঙ্গেই ৪০ রানে জয় করে বাংলার বাঘিনীরা ভারতের বিরুদ্ধে। এই ম্যাচটিও কিন্তু বৃষ্টিবিঘ্নিত হয়ে ৪৪ ওভারে সীমিত হয়।
বাংলাদেশ টি২০ সিরিজের শেষ ম্যাচ জয় করে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান ছিল। তাই কাল ব্যাটিং শুরুতে আমারজত কৌরের মোকাবেলায় শুরুতে ধাক্কা খেলেও দলনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির ধৈর্যশীল ৩৯ রান এবং সঙ্গে শারমিন আক্তার ২৭ এবং সুলতানা খাতুনের ১৬ সংক্ষিপ্ত কিন্তু কার্যকরী ইনিংসের সুবাদে ১৫২ রান সংগ্রহ করে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়।
ধীর গতির উইকেটে স্পিন ধরছিল। বাংলাদেশ দলে একঝাঁক মানসম্মত স্পিনার ছিল। তদুপুরি তরুণ পেসার মারুফা আক্তার (৪/২৯) এই দিন সংহারী মূর্তি নিয়েছিল। দলটি তুখোড় ফিল্ডিং করলো। লেগ স্পিনার রাবেয়া খান (৩/৩০) দলের জয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখলো।
বাংলাদেশের উজ্জীবিত বোলিং ফিল্ডিং মোকাবিলায় প্রতাপশালী ভারত ইনিংস ১১৩ রানে গুটিয়ে গেলে ৪০ রানের বিশাল জয় পেলো বাংলাদেশ। মীরপুর, সিলেটে যুগপৎ জয়ের এই দিনটি অবশ্যই বাংলাদেশ ক্রিকেটে মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।
বাংলাদেশের বিজয় উৎসব নির্বিঘ্ন করতে শ্রাবণ মেঘের দিনেও অঝোর ধারায় বৃষ্টি নেমে ম্যাচগুলো পণ্ড করেনি। প্রকৃতিও সহায়তার হাত বাড়িয়েছে উদারভাবে।
সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক