কলকাতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়মিত যাচ্ছে বাংলাদেশের সিনেমা। প্রবাসি বাঙালিরা দেখছেন সেইসব সিনেমা। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে এবং পুরস্কার জয় করে নিয়ে আসছে বাংলাদেশের অনেক সিনেমা। ধীরে ধীরে বাংলা সিনেমার বিশ্ববাজার তৈরি হচ্ছে।

এছাড়া পার্শ্ব র্তী দেশ ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশের সিনেমার বেশ চাহিদা। কলকাতার দর্শকরা ভালো কোনো সিনেমা মুক্তি পেলেই মুখিয়ে থাকেন সেটা দেখার জন্য। কাঁটাতারের বেড়া দুই দেশের বাঙালি মননকে পৃথক করতে পারেনি। তাই শিল্প-সংস্কৃতির ভাবগত আদান-প্রদান চলতেই থাকে। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে কলকাতার অনেক কাজ যেমন দেখতে পারেন এই দেশের দর্শক তেমনি কলকাতার দর্শকরাও দেখতে পারেন বাংলাদেশের নাটক সিনেমা।

সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হলো, ভারতে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব। সম্প্রতি কলকাতায় হয়ে গেল ‘পঞ্চম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব’। বেশ আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে ২৯ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই এ উৎসবে প্রদর্শিত হলো বাংলাদেশের ২৪টি চলচ্চিত্র। কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজন করা হয় এ উৎসবের। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য এরোমা দত্ত, অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক আহমেদ, কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ, অভিনেত্রী পূর্ণিমা, অরুণা বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়াসহ কলকাতার গায়ক রূপঙ্কর বাগচী, প্রিয়াঙ্কা গোপ প্রমুখ।

উৎসব চলাকালে প্রতিদিন বেলা ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কলকাতার ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহ নন্দন ১ ও নন্দন ২-এ প্রদর্শিত হয়েছে বাংলাদেশের ২৪টি চলচ্চিত্র। আগে আসার ভিত্তিতে বিনা মূল্যে এই চলচ্চিত্রগুলো দেখেছেন দর্শকেরা। প্রদর্শিত হওয়া চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ছিল: ‘জেকে ১৯৭১’, ‘গণ্ডি’, ‘গুনিন’, ‘বিউটি সার্কাস’, ‘ন ডরাই’, ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’, ‘লাল শাড়ি’, ‘গেরিলা’, ‘দামাল’, ‘পরাণ’, ‘স্ফুলিঙ্গ’, ‘বিক্ষোভ’, ‘অবিনশ্বর’, ‘রেডিও’, ‘ওমর ফারুকের মা’, ‘দেশান্তর’, ‘পাপ পুণ্য’ ইত্যাদি। ২৯ জুলাই নন্দন ১-এ দেখানো হয় ‘হাসিনা: আ ডটারস টেল’, ‘জেকে ১৯৭১’, ‘স্ফুলিঙ্গ’ ও ‘পরাণ’। নন্দন ২-এ দেখানো হয় ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’, ‘বিক্ষোভ’ ও ‘দামাল। ৩০ জুলাই নন্দন ১-এ প্রদর্শিত হয় ‘গেরিলা’, ‘লাল শাড়ি’, ‘অবিনশ্বর’ ও ‘গণ্ডি’। এ ছাড়া নন্দন ২-এ দেখানো হয় ‘রেডিও’, ‘ওমর ফারুকের মা’, ‘দেশান্তর’, ‘ধড়’ ও ‘শ্রাবণ জ্যোৎস্নায়’ সিনেমাগুলো।

বাংলাদেশের সিনেমা কলকাতার দর্শকের মন জয় করেছে অনেক আগেই। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের ‘হাওয়া’ সম্প্রতি বাজিমাত করেছে কলকাতাতেও।  আর সেই প্রশংসার জের ধরে চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবি দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজার হাজার দর্শক। চোখে পড়ার মতো ছিল সেই লাইন। সম্প্রতি কলকাতার বড়পর্দাতে  মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশের সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’। রায়হান রাফী পরিচালিত এই সিনেমাটিও গ্রহণ করেছে কলকাতার দর্শক। বর্তমানে কলকাতার মানুষেরাও বাংলাদেশের সিনেমা দেখতে বেশ আগ্রহী। সেই কারণেই কলকাতা শহরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র দেখানোর এই আয়োজন তাৎপর্যপূর্ণ।

কেবল বড় পর্দায় হাওয়া নয়, ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও দর্শকদের মন কাড়ছে একাধিক বাংলা ওয়েব সিরিজ। এরমধ্যে ‘কারাগার’, ‘তাকদির’ অন্যতম। বাংলাদেশের অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী কলকাতাতেও কাজ করছেন চুটিয়ে। সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘পদাতিক’ সিনেমার মুখ্য ভূমিকায় দেখা যাবে তাকে। অন্যদিকে বাংলাদেশের অভিনেত্রী জয়া আহসান দীর্ঘদিন ধরে ওপার বাংলায় কাজ করছেন চুটিয়ে। একের পর এক টলিউড ছবিতে জয়া অনবদ্য অভিনয় করে তার জাত চিনিয়েছেন। টলিউডের একাধিক নামী পরিচালকের পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকায় দেখা গেছে জয়াকে। বর্তমানে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘দশম অবতার’ সিনেমার শুটিং নিয়ে ব্যস্ত জয়া।

পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই উৎসব নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এই উৎসব বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে বলে তিনি মনে করে। ব্রাত্য বসুর বক্তব্য দিয়ে শেষ করা যাক। ব্রাত্য বলেন, ‘আমাদের ভাষা এবং সংস্কৃতি আলাদা নয়। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি, এটা দুই বাংলার চলচ্চিত্র উৎসব। আমরাও চাই কলকাতার ছবি নিয়ে বাংলাদেশে উৎসব হোক।’

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: হলি বলি টলি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fourteen − 6 =