সেরা দুই দলের মুখোমুখী লড়াইয়ে জিতেছে ভারত

সালেক সুফী

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩ দুটি অপরাজিত শীর্ষ স্থানীয় দল স্বাগতিক ভারত এবং দক্ষিণ গোলার্ধের প্রান্তিক দেশ নিউজিল্যান্ড কাল ভূস্বর্গ কাশ্মীর সন্নিহিত হিমাচল  প্রদেশের ধর্মশালায় মুখোমুখি হয়েছিল। ম্যাচটি ঘিরে ছিল উত্তাপ ,আকর্ষণ। একটা বিশেষ পুজায় পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুখোড় ছিল. কিন্তু ভারত বোলিং ,ব্যাটিং চৌকষ নৈপুণ্য ধরে রেখে শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটের সহজ জয়ে নিজেদের শ্রেষ্টত্ব বজায় রেখেছে। টুর্নামেন্টের ২১ ম্যাচ শেষে ভারত একমাত্র অপরাজিত দল হিসাবে পয়েন্ট তালিকার চূড়ায় উপনীত হয়েছে। ৫ ম্যাচ শেষে ওদের সেমী ফাইনাল খেলা অনেকটা নিশ্চিত। বিজিত নিউজিল্যান্ড কাল লড়াই করে পরাজিত হলেও তাদের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনাও সমুজ্জল।

আমরা জানি ধর্মশালা স্টেডিয়ামটি পাহাড় চূড়ায় দুনিয়ার সবচেয়ে উঁচু অবস্থানে। মনোরম পরিবেশ। উইকেটে যথেষ্ট বাউন্স আছে. কাল আবার ছিল কিছুটা অসম বাউন্স। উইকেটে বল পরে ধীর গতিতে বাটে আসছিলো। বিশ্ব কাপের অন্নান্ন মাঠের মত ব্যাটিং সহায়ক উইকেট ছিল না. কাল আবার ভারত আনফিট হার্দিক পান্ডিয়ার স্থানে সূর্যকুমার যাদবকে দলে নেয়ায় ৫ জনের প্রথম চয়েস বোলারে সীমিত হয়েছিল। তবে মাঠ এবং প্রতিপক্ষ বিচারে শার্দুল ঠাকুরের স্থানে মোহাম্মদ সামিকে খেলানো যথাযথ হয়েছে ম্যাচ সেরা হয়ে সেটি প্রমান করেছে সামি।

টস জয়ী ভারত নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ করে. শুরুতেই ফর্মে থাকা ডেভন কোনওয়ে এবং উইল ইয়াংকে হারিয়ে বিপদে পড়েছিল নিউজিল্যান্ড।  দেয়ালে পিঠ রেখে অসামান্য দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছিলো ড্যারিল মিচেল (১৩০) এবং রাচীন রাভিন্দ্র (৭৫) , তৃতীয় উইকেট জুটির ১৫৯ রান দলকে একটি স্বস্তির অবস্থানে নিয়েছিল। বিশেষত অসামান্য দক্ষতায় এই জুটি ভারত বোলিং এক্স ফ্যাক্টর কুলদীপ যাদবকে বেধড়ক পিটিয়েছিল। ওপর তুখোড় স্পিনার রবীন্দ্রা জাদেজাকেও সামাল দিয়েছে ভালোভাবে। মিচেল -রাভিন্দ্র জুটির সক্রিয়তায় একসময় মনে হচ্ছিলো নিউজিল্যান্ড সংগ্রহ হয়তো ৩০০ পেরিয়ে যাবে। কিন্তু ভারতের বহুমুখী মেধাবী বোলিং রাভিন্দ্রের উইকেট তুলে নেয়ার পর চেপে ধরলো।  বিশেষ করে মেধাবী পেস জুটি জসপ্রীত বুমরা এবং মোহাম্মদ সামি সংহারী মূর্তিতে আবির্ভূত হয়ে শেষ দশ ওভারে ৫৪ রানে ৬ উইকেট তুলে নেয়ায় নিউ জিল্যান্ড  সংগ্রহ ধরা ছোয়ার মাঝে ২৭৩ সীমিত থাকলো। প্রশংসা করতেই হয় ড্যারিল মিচেলের ১২৭ বলে করা ১৩০ রানের ইনিংসটির।  সংকট মুহূর্তে বীরের মত লড়াই করে মিচেল দলকে যুদ্ধের ময়দানে সক্রিয় রেখেছিলো। সঙ্গী হিসাবে তরুণ রাচিন রাভিন্দ্র (৭৫) খেলেছে দর্শনীয় ইনিংস। বাম হাতি রিস্ট স্পিনার কুলদীপ যাদবের বলে মিচেল এবং রবিন্দ্রার কয়েকটি নয়ন মনোহর স্ট্রোকস ক্রিকেট প্রেমীদের অনেক আনন্দ দিয়েছে। ভারতের বোলিং ফিল্ডিং বিশেষ করে শেষ ১০ ওভারে ওদের ম্যাচে ফিরিয়ে আনে। বুমরার আটো ষাট বোলিং এবং সামির (৫/৫৪) উইকেট নিশানার ইয়র্কার সামাল দেয়া সম্ভব হয় নি নিউজিল্যান্ড মিডল অর্ডার এবং লেট্ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। শক্তিশালী অবস্থানে থেকেও তাই ২৭৩ রানে সীমিত থাকে ইনিংস। পরিস্থিতি এবং প্রতিপক্ষ বিচারে হয়তো ৩০-৪০ কম ছিল। প্রশংসা করতেই হবে মোহাম্মদ সামিকে চমৎকার বোলিং করার জন্য। সামি -বুমরা যৌথভাবে কাল ব্ল্যাক কাপ ইনিংস ধরা ছোয়ার মাঝে বেঁধে রাখে। মিচেল শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে ১৩০ রান করে দলের সংগ্রহে মুখ্য ভূমিকা পালন করে.

ভারতের রান তাড়ায় প্রয়োজন ছিল উড়ন্ত সূচনা। করলো সেটি রোহিত শর্মা -সুবমান গিল. ১১.১ ওভারেই সংগ্রহীত হলো ৭১ রান. দল নায়ক তুখোড় ফর্মে থাকা রোহিত শর্মা নিজেই উপহার দিলো ৪ চার এবং ৪ ছয়ে সাজানো ৪০ বলে ৪৬ রান. এমন পরিস্থিতি এমন ম্যাচেই দেখা মেলে ভারত তথা বিশ্ব সেরা বিরাট কোহলির।  মোক্ষম সময়ে ১০৪ বলে কোহলির ৯৫ রান দলের জয়ে বিশাল ভূমিকা রাখে।   রবীন্দ্রা জাদেজা ( ৩৯*) , শ্রেয়াস আইয়ার (৩৩) ,কে এল রাহুল (২৭) এবং সুবমান গিলের ( ২৬) সম্মিলিত অবদানে ১২ বল হাতে রেখে ২৭৪/৬ করে ৪ উইকেটে জয় পে ভারত।  টুর্নামেন্টে ভারতের অপরাজিত থাকার রেকর্ড থাকে অম্লান।

এযাবৎ ভারত দলের ৫ টি খেলা দেখে ধারণা হলো সব ম্যাচে ,সব প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ,সব পরিস্থিতির জন্য দারুন ভাবে প্রস্তুত ভারত।  উপরন্তু স্বাগতিক এবং আইসিসির প্রভাবশালী সদস্য হিসাবেও বাড়তি সুবিধা।  ভারত দল নিজেদের হট ফেভারিট তকমাটা ধরে রেখেছে। নিউজিল্যান্ড ভালো খেলেছে। কিন্তু ভালো খেলার ধারাটা শেষ পর্যন্ত বজায় রাখতে পারেনি।

এই দুই দল ফাইনালে মুখোমুখি হলে বিস্মিত হবো না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 − 2 =