চাকরির ক্ষেত্রে সফট স্কিলস

এ টি এম মোসলেহ উদ্দিন জাবেদ

চাকরি বা কর্মক্ষেত্রে সকলেই সফল হতে চায়। সফল হতে চায় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। সফলতার পিছনে দুটি বিষয় কাজ করে তা হলো, হার্ড স্কিলস ও সফট স্কিলস। প্রথমে আমাদের জানতে হবে হার্ড স্কিল ও সফট স্কিলস কী। আপনি কোথাও চাকরি খুঁজছেন, ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন বা কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন; তখন দুধরনের দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হচ্ছে হার্ড স্কিলস ও সফট স্কিলস। হার্ড স্কিলস হলো আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কম্পিউটার পরিচালন জ্ঞান, কারিগরি জ্ঞান, পেশাগত দক্ষতা অভিজ্ঞতা ইত্যাদি। যেমন আপনি যদি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হন, তাহলে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে ডিজাইন করাটা আপনার হার্ড স্কিল। আর সফট স্কিল হলো, আপনি কাজটা করতে গিয়ে কতটা সৃজনশীলতার সাথে করতে পেরেছেন। একটি দলে থেকে কিভাবে দলবদ্ধভাবে কাজটি করেছেন বা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আপনার কাজ সম্পর্কে আপনার ক্লায়েন্ট বা বসকে কতটুকু সাবলীলভাবে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন ইত্যাদি। বর্তমান সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠানই হার্ড স্কিলের চেয়ে সফট স্কিলকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এখন আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সফট স্কিলস সম্পর্কে জানবো।

কমিউনিকেশন স্কিল

কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতার মানে এই নয় যে, জোরালো বক্তব্য দিতে পারতে হবে। কমিউনিকেশন স্কিল বলতে যার সাথে কথা বলা হচ্ছে তার কথা বলার ভঙ্গিমা বা ধরনের সাথে মিলিয়ে নিয়ে কোনো কিছু বোঝাতে পারার সক্ষমতাকে বোঝায়। অর্থাৎ যে কোনো বিষয় যে কোনো ব্যক্তিকে সহজে বোঝাতে পারা। এছাড়া নেতৃত্ব দানের ক্ষেত্রেও এই গুণটির প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ইমেইল কমিউনিকেশন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কতটা সুন্দর, সাবলীল ও সহজবোধ্যভাবে আপনি মেসেজ ইমেইলের মাধ্যমে সেন্ডারের কাছে পাঠাতে পারবেন তা আপনার দক্ষতার প্রকাশ।

লিডারশিপ বা নেতৃত্ব

নেতা এমন ব্যক্তি যিনি কাজ শুরু করেন, অধীনস্থদের জন্য নীতি ও পরিকল্পনা তৈরি করেন এবং তাদেরকে নীতিমালা সম্পর্কে অবহিত করেন। কর্মীরা স¦াভাবিকভাবেই প্রতিষ্ঠানের নতুন লক্ষ্য বা পরিকল্পনা সম্পর্কে জানে না। আর এইসব জানানোর কাজটি করেন নেতা। একজন নেতা তার সঠিক নেতৃত্ব গুণাবলী এবং দিকনির্দেশনার মাধ্যমে কর্মীদের লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত করবে এবং কাজ শুরু করবে। কর্মীদের উৎসাহ এবং প্রেরণা প্রদান করার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করার দায়িত্বটি কিন্তু একজন সঠিক নেতাই নেন। তিনি নেতৃত্বকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে কর্মীদের অর্থনৈতিক এবং উৎসাহমূলক পুরস্কার দিয়ে অনুপ্রাণিত করেন; যাতে কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের প্রতি দয়িত্বশীল থাকে।

নেটওয়ার্কিং

বিভিন্ন রকম মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়তে আমাদের যে দক্ষতাটির প্রয়োজন হয় সেটি হলো নেটওয়ার্কিং। নেটওয়ার্কিং-এর মাধ্যমে যোগ্য, দক্ষ ও সফল মানুষদের সাথে যুক্ত থাকতে পারার সুফল অনেক। চাকরি পাওয়া, পদোন্নতি কিংবা কোনো দরকারের সময় সাহায্য পাওয়া নেটওয়ার্কিং সবকিছুকে করে দেয় খুব সহজ।

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

যে কোনো মানুষের জন্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি একটি বিশেষ গুণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যা তাকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিতে পারে। জীবনে চলার পথে প্রতিদিনই আমাদের বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কঠিন সময়ে আমাদের সাহস না হারিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। প্রথমে ঠিক করতে হবে আমরা আসলে কি চাই, কোন পথে আগালে সফলতা পাবো এবং সে পথ যত কঠিন হোক না কেন ‘আমাদের সেটা পারতে হবে’ এই মনোভাব তৈরি করা।

প্রফেশনালিজম

কর্মক্ষেত্রে যে বিষয়টি নিজের গুরুত্ব অনেক বাড়িয়ে দেয় তা হচ্ছে প্রফেশনালিজম বা পেশাদারিত্ব। কারণ, যে কোনো দায়িত্ব দিয়ে নির্ভর করা যায় ঐ কর্মীর উপর যার পেশাদারিত্ব রয়েছে। এই নির্ভরতা ঐ ব্যক্তির ক্যারিয়ারে সফলতা নিশ্চিত করে। সময়মতো অফিসে উপস্থিত থাকা, যেকোন কাজ সময়মতো করে দেওয়া কিংবা সঠিক জায়গায় সঠিক পোশাক পরা, নিজের কোনো কাজের ব্যর্থতা থেকে নিজে শেখা, অন্যকে দোষারোপ না করা; এই সবই পেশাদারিত্ব বা প্রফেশনালিজমের অন্তর্গত।

টিমওয়ার্ক

দলগত থাকার মানসিকতা বা দলের সবার সাথে মিশে কাজ করার মানসিকতা থাকা বা দক্ষতা থাকা উভয়ই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা, নিজের মতামত ঠিকভাবে দিতে পারা এবং দলনেতার নির্দেশনা অনুসারে কাজ করা; এসব কিছুই কর্মজীবনে সফলতা অর্জনে সাহায্য করে।

এডাপ্টিবিলিটি

যেকোন পরিবেশ পরিস্থিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াই হচ্ছে এডাপ্টিবিলিটি বা অভিযোজন। অনেক ক্ষেত্রে বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ার চাপ কিংবা নানাবিধ প্রতিকূল অবস্থায় কাজ করে যেতে হয়। এরকম পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিয়ে স্বাভাবিকভাবে কাজ করে যাওয়ার সক্ষমতা আপনাকে ব্যতিক্রমী ও যোগ্য করে তুলবে।

সৃজনশীলতা ও চিন্তন দক্ষতা

কঠিন সময়ে যিনি চিন্তা করে সহজ সমাধান বের করতে পারেন, দিন শেষে তিনিই সফলতা অর্জন করেন। সবসময় অন্যের কথা অনুসরণ না করে নিজেকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। প্রতিযোগিতাপূর্ণ চাকরির বাজারে যে নিজেকে যতটা বেশি সৃষ্টিশীল হিসেবে প্রমাণ করতে পারবে কর্মক্ষেত্রে তার সফলতার পরিমাণ তত বৃদ্ধি পাবে অর্থাৎ আপনাকে হতে হবে ক্রিয়েটিভ।

দ্রুত শিখতে পারার সক্ষমতা

কর্মক্ষেত্র বিস্তৃতির সাথে সাথে কাজের ধরনও পরিবর্তিত হচ্ছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই কাজগুলো সহজে আয়ত্বে আনতে না পারলে ক্যারিয়ারে সফল হওয়া কোনভাবেই সম্ভব না। তাই প্রয়োজন দ্রুত শিখে নেওয়ার ক্ষমতা। কর্মক্ষেত্রে যত দ্রুত কোনো প্রয়োজনীয় বিষয় আয়ত্বে এনে তা প্রয়োগ করা সম্ভব হয় সফলতা তত দ্রুত ধরা দেয়।

কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট

কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট বা দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনা যাই বলি না কেন এটি একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক সময় অফিসিয়াল মিটিংয়ে দেখা যায় একটি বিষয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে একেক জন একেক রকম মতামত দিচ্ছে। কেননা সব মানুষের চিন্তা, রুচি, দৃষ্টিভঙ্গি একরকম হয় না। তাই সবার যোগ্যতাকে একসাথে ব্যবহার করতেই এই কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি এসেছে। এক্ষেত্রে সকলে মিলে স্যাক্রিফাইস মূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি কমন ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়, যেটা প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গলজনক। সবার মধ্যে উইন উইন সিচুয়েশনও তৈরি করতে হয়।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: নিবন্ধ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

1 × 1 =