নভেম্বর ৮, ২০২৪ (আইইইএফএ দক্ষিণ এশিয়া): বাকুতে হতে যাওয়া ২৯তম জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৯), যাকে বলা হচ্ছে ‘জলবায়ু অর্থায়নের কপ’ – আর এ সম্মেলনেই নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে আরও অর্থায়ন বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহ যোগাতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের নীতিগত ভাবে সম্মতি প্রদান করা উচিত, ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল এনালিসিসের (আইইইএফএ) এক নতুন ব্রিফিং নোটে এমনটাই বলা হয়েছে।
এই নোটে বিশ্বজুড়ে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগের প্রবণতা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তিনগুণ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ২০২৩ সাল থেকে অনুমিত ঘাটতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ) অনুমান করছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ২০২৪ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বছরে ৪০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ ঘাটতি হতে পারে ।
এই নোটে বলা হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানি খাত থেকে অর্থ নবায়নযোগ্য শক্তিতে সরিয়ে এনে ব্যাংকগুলো বাৎসরিক ৪০০ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারে ।
নিয়মনীতির কাঠামো নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা ব্যাংকগুলোকে জ্বালানি রূপান্তরে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে উৎসাহ যোগাতে পারে
সারসংক্ষেপ:
১. ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সক্ষমতা তিনগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও, ২০২৪-৩০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক বিনিয়োগ ঘাটতি ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছতে পারে। জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ৯৬৭ বিলিয়ন ডলার অর্থের সংস্থান করা ব্যাংকগুলো তাদের অর্থ নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে নিয়ে এসে এই ঘাটতি মেটাতে পারে।
২. জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন অর্থায়ন কমাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্তে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা যেমন দরকার, তেমনি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক নয় এমন নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে অর্থের প্রবাহ বাড়াতে তাদের জন্য বর্ধিত আর্থিক সহায়তাও প্রয়োজন। সরকার, বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক ও দ্বিপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ বর্ধিত সহায়তার ক্ষেত্রে ঝুঁকি-সহনশীল বিনিয়োগ ও সহজ শর্তে অর্থ সরবরাহ করতে পারে।
৩. যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তন এরই মধ্যে আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুতর ঝুঁকি হিসেবে স্বীকৃত, তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণদান ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা চর্চায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি অন্তর্ভুক্তে নির্দেশনা ও আইনকানুন প্রণয়ন করছে।
“আর মাত্র ছয় বছর বাকি, নবায়নযোগ্য শক্তির ২০৩০ এর লক্ষ্যমাত্রা বেশ দূরের মনে হচ্ছে, কিন্তু উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বর্ধিত সহযোগিতা ও অনুকূল স্থানীয় নীতি হয়তো এই ব্যবধান কমাতে পারে,” বলেছেন আইইইএফএ দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক, নোটের অন্যতম লেখক বিভূতি গার্গ।
নোটে বলা হয়েছে, নবায়নযোগ্য শক্তিতে বৈশ্বিক বিনিয়োগ যে প্রতিনিয়ত বাড়ছে তা পৃথক পৃথক প্রাক্কলনে দেখা যাচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, নবায়নযোগ্য শক্তি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারছে। এই বিনিয়োগ ২০১৯ সালে ৩২৯-৪২৪ বিলিয়ন সীমার মধ্যে ছিল, ২০২৩ সালে তা বেড়ে ৫৭০-৭৩৫ বিলিয়ন ডলার সীমায় উঠে যায়; অর্থ্যাৎ এই সময়ের মধ্যে বিনিয়োগে উল্লম্ফন ঘটে ৭৩-৭৮%। যদিও নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিদ্যুৎ তিনগুণ করার লক্ষ্য পূরণে ২০২৪ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বছরে এক থেকে দেড় ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। সেই বিবেচনায় ২০২৪ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত বছরে গড় বিনিয়োগ ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৪০০ বিলিয়ন ডলার।
“জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবাহ কমলেও, ২০২২ সালেও এ ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৬৭ বিলিয়ন ডলার । অন্যদিকে, একই বছর নবায়নযোগ্য শক্তিসহ কম কার্বন নিঃসরিত হয় এমন প্রকল্পগুলো পেয়েছিল ৭০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জীবাস্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন কমিয়ে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে অর্থ সরবরাহ বাড়িয়ে ব্যাংকগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের ঘাটতি মেটাতে পারে,” বলেছেন নোটের নোটের অন্যতম লেখক আইইএফএ-র বাংলাদেশের জ্বালানি খাত বিষয়ক প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম।
এমন পরিবর্তনে ব্যাংক-কে উৎসাহ যোগাতে নোটে নবায়নযোগ্য শক্তিতে ঋণ দেওয়ায় অগ্রাধিকার, ব্যাংকগুলোকে ঋণদানে বর্ধিত সহায়তা সুবিধা দেওয়া, ব্যাংকের নীতিতে জলবায়ু পরিবর্তনকে অন্তর্ভুক্ত করা, গ্রিন ট্যাক্সোনমির (টেকসই পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগগুলোর) পারস্পরিক কার্যকারিতা, অর্থায়নকৃত প্রকল্পে দূষণের পরিমাণ জানানো বাধ্যতামূলক করা এবং অর্থ ও ঋণ প্রবাহে কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক প্রভাব খাটানোর মতো একাধিক উপায়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
“ঋণদানে ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সরকারগুলো আংশিক ঋণের ঝুঁকি নিরাময় ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে পারে, যা এই খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করবে। স্থানীয় সরকারগুলোর সহযোগিতায় বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও দ্বিপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকি-সহনশীল ও সহজ শর্তে মূলধন দিতে পারে এবং আংশিক ঋণের ঝুঁকি নিরাময় ব্যবস্থাপনা তৈরিতে সহায়তা করতে পারে,” বলেছেন নোটের আরেক লেখক, আইইএফএ-র টেকসই অর্থায়ন বিষয়ক পরামর্শদাতা লাবন্য প্রকাশ জেনা।
পাশাপাশি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরে গিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতের দিকে মূলধনের প্রবাহ বাড়ায় সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নৈতিক প্রভাব খাটাতে পারে।