ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানা এবং সামরিক কমান্ডারদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোররাত ৪টার পর এ হামলা শুরু হয় বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
তেল আবিব বলছে, তেহরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে একটি দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের শুরু হিসেবে এই হামলা চালাল তাদের সামরিক বাহিনী।
ইরানি সংবাদমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে রয়টার্স লিখেছে, দেশটির প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটেছে। একইসঙ্গে সম্ভাব্য পাল্টা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইসরায়েল।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, তাদের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন এবং তেহরানে বাহিনীর সদর দপ্তরেও হামলা হয়েছে। রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকায় হামলায় কয়েকজন শিশুরও মৃত্যুর খবর এসেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “আমরা ইসরায়েলের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি।
“কিছুক্ষণ আগে শুরু হয়েছে ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ । আমাদের এই সামরিক অভিযানের লক্ষ্য ইরানি হুমকি প্রতিরোধ করা। যতদিন না এই হুমকি বন্ধ হচ্ছে, ততদিন এ অভিযান চলবে।”
নেতানিয়াহু বলেন, ইরানের যেসব বিজ্ঞানী পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজে যুক্ত, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং নাতাঞ্জের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাকে লক্ষ্য করে এই অভিযান চালানো হচ্ছে, এটা কয়েক দিন ধরে চলবে।
ইসরায়েলের একজন সামরিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, ইরানের মধ্যাঞ্চলে নাতাঞ্জসহ ডজনখানেক পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “ইরানের হাতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরির মত উপাদান রয়েছে।”
আকাশপথে বড় পরিসরে হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ইরানের ভেতরে গোপনে একাধিক অভিযান চালিয়েছে বলে খবর দিয়েছে অ্যাক্সিওস।
ইসরায়েলের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত ইরানের কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্র এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করার লক্ষ্যেই এসব অভিযান চালানো হয়।
এদিকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইরানের পাল্টা হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের এই হামলার পর শিগগিরই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের মাধ্যমে বেসামরিক জনগণের ওপর ইরানের পাল্টা হামলার আশঙ্কা রয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্র ‘সম্পৃক্ত নয়’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, “ইসরায়েল আজ রাতে একতরফাভাবে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযানে জড়িত নয় এবং আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হল, ওই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
তিনি বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলছি—ইরান যেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বা কর্মীদের হামলার নিশানা না করে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার সকালে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন বলে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে।
ইসরায়েলের সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান ইয়াল জামির বলেছেন, কয়েক হাজার সেনা সদস্যকে সীমান্তে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
“আমরা এক ঐতিহাসিক অভিযানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি–এমন এক শত্রুকে প্রতিরোধের চূড়ান্ত অভিযান এটা।”
বাজারে প্রতিক্রিয়া, আলোচনার অচলাবস্থা
রয়টার্স লিখেছে, ইরানে হামলার প্রভাবে আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি না নিয়ে তুলনামূলক নিরাপদ সম্পদে বিনিয়োগ করায় তেলের দাম বেড়ে গেছে।
তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম নিয়ে আগামী রোববার ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ দফার আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। তবে আলোচনা কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছে।
ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ইসরায়েল ইরানে হামলা চালাতে পারে, তবে তিনি শান্তিপূর্ণ পথেই সমাধানের বিষয়ে আশাবাদী।
ইসরায়েল যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রগুলো আগেই সে ইংগিত দিয়েছিল। আর মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ইসরায়েল ‘কয়েক দিনের মধ্যে’ তেহরানে হামলা চালাতে পারে।
এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রয়োজনে মার্কিন নাগরিকদের যাতে সরিয়ে আনা যায়, সে প্রস্তুতিও রাখা হচ্ছে।