ব্রাজিলকে হারিয়েও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিল ক্যামেরুন

প্রথম দুই ম্যাচে জয়ের মাধ্যমে আগেই কাতার বিশ্বকাপের নকআউট নিশ্চিত করে নিয়েছিল ব্রাজিল। যে কারণে আজ লুসাইল স্টেডিয়াম স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দলে ব্যপক  পরিবর্তন আনে  ব্রাজিল কোচ।  এ  ম্যাচে প্রথমবারের মতো চলতি বিশ্বকাপের একাদশে সুযোগ পান গাব্রিয়েল মার্টিনেলি, গাব্রিয়েল জেসুস ও এন্টনি। তাদের ওয়ান টাচের ছন্দে প্রথম ৫ মিনিট তটস্থ করে রাখে ক্যামেরুনকে। তবে শেষ পর্যন্ত ইনজুরি টাইমে সেই ব্রাজিলকেই পরাজিত করেছে ক্যামেরুন।

ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে ক্যামেরুনের হয়ে জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেছেন ভিনসেন্ট আবুবকর। আফ্রিকান কোন দল হিসেবে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ব্রাজিলকে পরাজয়ের স্বাদ পেল ক্যামেরুন।  শুধু তাই নয় ২০ বছরের মধ্যে বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে আফ্রিকান অদশ্য সিংহরা। যদিও ওই জয় কোন কাজে আসেনি অদম্য সিংহদের। গ্রুপের অপর ম্যাচে সার্বিয়াকে ৩-২ গোলে হারিয়ে ব্রাজিলের সঙ্গে  রানারআপ হিসেবে জি গ্রুপ থেকে শেষ ষোল নিশ্চিত করেছে সুইজারল্যান্ড।

ম্যাচের সূচনা লগ্ন হলেও এক মুহূর্তের জন্য মনোযোগ নষ্ট করেননি আর্সেনাল ফরোয়ার্ড ব্রাজিলের জেসুস। শুরু থেকে গোটা মাঠ চষে বেড়িয়েছেন তিনি। ১৫ মিনিটে প্রথম একটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে ব্রাজিল।  এসময় ফ্রেডের ক্রসের বলে দারুন এক হেড করেন মার্টিনেলি। কিন্তু বলটি বারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পর  ম্যাচের ২১ মিনিটে এসে প্রথম একটি পরিকল্পিত আক্রমণ রচনা করে ক্যামেরুন। দারুন পরিশ্রম করে খেলা এরিক ম্যাক্সিম চুপো-মোটিং বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ব্রাজিলের সীমানায় ঢুকে শট নিলে বলটি দক্ষতার সঙ্গে প্রতিহত করেন ব্রাজিলের গোল রক্ষক এডারসন।

ডি বক্সের বাইরে রডরিগোকে ফাউল করলে ২৭ মিনিটে  পিয়েরে কুন্ডেকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। ৩২ মিনিটে আবারো রডরিগোকে ফাউল করেন এবং আবারো ফ্রি কিক দেন রেফারি। ফ্রি কিক থেকে দানি আলভেসের শট পোস্টের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়।

৩৪ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে আলভেসের বল অল্পের জন্য বার ঘেষে চলে যায়। ৩৭ মিনিটে কর্নার থেকে এন্টনির দুর্বল শটের বল ফিরয়ে দেন ক্যামেরুনের গোল রক্ষক ডেভিস এপাসি। ৪৫ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে মার্টিনেলির শটের বল ফিস্ট করেন ক্যামেরনের গোল রক্ষক। ইনজুরি টাইমের তৃতীয় মিনিটে (৪৫+৩) গোলের সেরা সুযোগ পায় ক্যামেরুন। ব্রায়ান এমবেমোর ক্রসের বলে নুহু টোলো দর্শনীয় হেড নিলে এ্যাক্রোবেটিক কায়দায় বলটি অন্যত্র পাঠিয়ে দেন ব্রাজিলীয় গোল রক্ষক এডারসন। ফলে গোল শুন্য ড্রয়েই বিরতিতে যায় দুই দল।

বিরতি থেকে ফেরার পরও আক্রমণ অব্যাহত রাখে ব্রাজিল। ৫৫ মিনিটে মার্টিনেলির শটের বল দারুন দক্ষতায় প্রতিহত কনে এপাসি। এর ৫ মিনিট আগে অবশ্য ক্যামেরুনের হয়ে গোলের দারুন সুযোগ পেয়েছিলেন ভিনসেন্ট আবুবকর। তবে তার শটের বলটি দারুন দক্ষতায় প্রতিহত করেন এডারসন। ম্যাচের বয়স ঘণ্টার কাটা পার হবার পর দেখা যায় ৬৪.৯ শতাংশ বলের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে ব্রাজিল। আর ক্যামেরুনের নিয়ন্ত্রণে ছিল ৩৫.১ শতাংশ। টার্গেটে ব্রাজিলের ৭টি শটের বিপরীতে ক্যামেরুনের ছিল ১টি। যেখানে ক্যামেরুন ১৯বার আক্রমণ প্রতিহত করেছে সেখানে ব্রাজিলের ছিল ৮ বার।

সর্বশেষ ২০১৪ বিশ্বকাপের  গ্রুপ পর্বে ক্যামেরুনের মুখোমুখি হয়েছির ব্রাজিল। ঘরের মাঠের ঐ ম্যাচে নেইমারের জোড়া গোলে  ৪-১ গোলে জয়লাভ করেছিল পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এদিকে সুইজারল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলে পরাজয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা ক্যামেরুন  ২য় ম্যাচে সার্বিয়ার বিপক্ষেও পাল্লা দিয়ে লড়াই করে ৩-১ গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ৩-৩ গোলের সমতা নিয়ে মাঠ ছাড়ে। ওই ড্রয়ে আজকের ম্যাচের আগে পরের রাউন্ডে যাবার ক্ষীণ একটি সম্ভাবনা জাগিয়ে রেখেছিল ক্যামেরুন। তবে শেষ পর্যন্ত শেষ ষোলতে যেতে না পারলেও ব্রাজিলকে হারিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে অদশ্য সিংহরা।

ম্যাচের ৯০ মিনিটে ভিনসেন্ট আবুবকরের গোলে এই জয় নিশ্চিত করে ক্যামেরুন। মিডফিল্ডার জেরোম এনগমের ক্রসের বলটি দর্শনীয় হেডে ব্রাজিলের জালে জড়িয়ে দেন তিনি। এতে আবেগ আপ্লুত হয়ে নিজের জার্সি খুলে ফেলেন তিনি। ফলে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড নিয়ে (লাল কার্ড) মাঠ ছাড়তে হয় আবুবকরকে। দশ জনের দলের উপর চড়াও হয়ে আরো ছয় মিনিট লড়াই করেছে ব্রাজিল। কিন্তু গোলের দেখা পায়নি। ফলে পরাজয় নিয়ে মাঠ চাড়তে হয় পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। আর আফ্রিকান কোন দল হিসেবে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ব্রাজিলকে পরাজয়ের স্বাদ পায় ক্যামেরুন।  শুধু তাই নয় ২০ বছরের মধ্যে বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে আফ্রিকান অদশ্য সিংহরা।

বাসস

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eleven − two =