উল্কা পতনের রাতে ঈশ্বর সদয় খুদে জাদুকরে

সালেক সুফী

কাল সারারাত ছিল স্বপ্নের রাত। বিশ্ব জোড়া ফুটবল পূজারীদের পরম কাঙ্খিত ফুটবল মহাযজ্ঞ। সন্ধ্যা রাতে সর্বকালের প্রিয় দল সাম্বা ছন্দ হারানো ব্রাজিল হৃদয় ভাঙ্গার টাই ব্রেকারে হেরে ছিটকে পড়লো ক্রোয়েশিয়ার পেশাদারি নৈপুণ্যের কাছে। প্রথম ম্যাচে উল্কা পাতের ঘোর আর্জেন্টিনা বিরোধী শিবিরের প্রার্থনা ছিল পরের খেলায় যেন পথ না হারায় ল্যাটিন আমেরিকার একমাত্র প্রতিনিধি খুদে জাদুকরের আর্জেন্টিনা। টিউলিপের দেশ নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে ২-০ এগিয়ে অনেকটা স্বস্তিতে ছিল অনেকের প্রিয় দল আর্জেন্টিনা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে নেদারল্যান্ড এক এক করে দুটি গোল ফিরিয়ে দিয়ে আরো একটি উল্কা পতনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল। অতিরিক্ত সময়ের শেষ দিকে সুযোগ পেয়েও গোল বঞ্চিত ছিল মেসি বাহিনী। খেলা গড়ালো আবার হৃদয় ভাঙার টাই-ব্রেকারে। ঈশ্বর কিন্তু এবার বঞ্চিত করেনি সাদা নীলের আর্জেন্টিনাকে। কমলাকে কাঁদিয়ে অনেকের প্রিয় আর্জেন্টিনা এখন সেমী ফাইনালে। খেলবে কোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে লুসাইল স্টেডিয়ামে। হতে পারে এখানেই হয়তো জীবনের শেষ বিশ্ব কাপ স্মরণীয় করে রাখবে ভিন্ন গ্রহের এলিয়েন লিওনেল মেসি। আফসোস দুই প্রিয় দল ব্রাজিল আর্জেন্টিনা মুখ মুখী লড়াই দেখা হলো না। হৃদয় ভাঙ্গার টাই ব্ৰেকাৰ নামের জুয়া খেলাটা নিয়ে কি করা যায় ভেবে দেখা প্রয়োজন। চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব কাপে কোয়ার্টার ফাইনালে টাই ব্রেক হৃদয় স্পন্দন স্তব্ধ করার মতোই।

একটা আপ্ত বাক্য আছে। মানুষ ভাবে এক বিধাতা নির্ধারণ করেন ভিন্ন।  বিশ্ব জুড়ে কাল আলোড়ন ছিল কাল রাতের ফুটবল উৎসবে দুই প্রিয় দল ব্রাজিল আর্জেন্টিনা নিজ নিজ ম্যাচে জয়ী হয়ে স্বপ্নের সেমী ফাইনাল পথে এগুবে। আগের ম্যাচেই সাম্বা ছন্দে ফেরা ব্রাজিলকে কাল কিন্তু শুরু থেকে ছন্দ হারা পরিশ্রান্ত মনে হয়েছে। তার তুলনায় গেলো বারের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়াকে অনেক পরিণত আর গোছালো মনে হয়েছে। পুরো শক্তির ব্রাজিল দল প্রথমার্ধে ছিল নিষ্প্রভ। নেইমার অনুপ্রাণিত ব্রাজিল দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার বাড়িয়ে কিছু সুযোগ সৃষ্টি করলেও কাজের কাজটি করতে পারলো না। অবশেষে অতিরিক্ত সময়ে নেইমার দৃষ্টি নন্দন গোলে দলকে এগিয়ে দিলেও কৌশলে লিড ধরে রাখতে পারেনি ওরা। ১২০ খেলা শেষে ১-১ সমতা। টাই-ব্রেকার। হৃদয় ভেঙে পরাজয় ব্রাজিল। হেক্সা মিশন হোঁচট খেলো আরো একবার। জানিনা ভিনিসিয়াসকে তুলে নেয়ার কি ব্যাখ্যা আছে তিতের। পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ নিয়েই ব্রাজিল দলের সঙ্গে হয়তো সম্পর্কের ইতি ঘটলো তার।

ব্রাজিলের পতনের পর ল্যাটিন আমেরিকার ওপর প্রিয় দল আর্জেন্টিনা টিকে আছে হারাধনের শেষ ছেলে হয়ে। মেসি জাদুতে প্রথম অর্ধে ২-০ এগিয়ে থাকার পর অনেকটা নির্ভর হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টিভির সামনেই। চোখ খুলে দেখি দুই গোল ফিরিয়ে দিয়ে সমতা এনেছে নেদারল্যান্ড। অতিরিক্ত সময়ে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই চলছে। ব্রাজিল দলের আজীবন সমর্থক আমি। টিউলিপের দেশ নেদারল্যান্ড ছিলাম বেশ কিছু দিন। ১৯৭৪, ১৯৭৮ দারুন ফুটবল খেলা ডাচদের প্রতি কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও চাইছিলাম মেসির জন্য যেন টিকে থাকে আর্জেন্টিনা। অতিরিক্ত সময়ের শেষ দিকে গোলের সুযোগ এসেছিলো বেশ কয়েকটি। শেষ পর্যন্ত সমতা বজায় থাকায় আবারো টাই ব্রেকার। আর্জেন্টিনার গোলকীপারের বীরত্বে ৪-৩ ব্যাবধানে জয় পেলো ল্যাটিন আমেরিকার শেষ প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা। কাল যদি হেরে যেত আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের মতো তা হলে কাতার বিশ্ব কাপ ল্যাটিন ফুটবলের কারবালায় পরিণত হতো। মনে প্রাণে চাইবো আর্জেন্টিনা অন্তত যেন ফাইনাল খেলে এই লুসাল স্টেডিয়ামে।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 + nineteen =