মেসির হাতে সোনার ট্রফি কে কার অলংকার

সালেক সুফী

সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির (এলএম টেন) কাছে ফুটবল বিশ্বকাপের অধরা সোনার ট্রফি অবশেষে ধরা দিলো। জানি নানা কারণে কেউ ব্রাজিল, কেউ আর্জেন্টিনা আবার কেউবা হয়তো ফ্রান্স বা ইংল্যান্ডের পক্ষে বাজি ধরেছিলেন এবারের বিশ্বকাপে।  অনেক চড়াই  উৎরাইয়ের বাধা পেরিয়ে কাতারের  মরুর বুকে এবারের বিশ্বকাপের সেরা দুই দল লুসাইল স্টেডিয়াম পৌঁছলো। বিশ্বজোড়া ফুটবল পূজারীদের প্রার্থনা যেন ফুটবল ঈশ্বর ক্ষুদে জাদুকরের হাতে পরম কাঙ্ক্ষিত ট্রফি তুলে দেন।  খেলা শেষে জাদুকরের হাসিমুখ দেখে আনন্দ-উচ্ছাসে কেঁদেছে বিশ্ব। বাঁধ ভাঙা আনন্দ জোয়ারে প্লাবিত ফুটবল জগৎ। পেলে, ম্যারাডোনার পাশে জ্বলজ্বলে এখন একটি নাম লিওনেল মেসি। ফুটবল জীবনের শেষ সুযোগে অধরা ট্রফি ধরা দিলো যোগ্যতম হাতে। মনে পড়ছে বহুশ্রুত গানের কলি ‘সোনার হাতে সোনার কাকন কে কার অলংকার’।

স্মরণে ছিল এবার জয়ী হলে ফরাসী দলটিও ছুঁয়ে ফেলতো পর পর দুবার বিশ্বকাপ জয়ের সর্বকালের সেরা দল ব্রাজিলের রেকর্ড। গুণে মানে, কৌশলে, পরিকল্পনায় লিওনেল মেসির ফ্রান্স আর  কিলিয়ান এমবাপ্পের ফ্রান্স দল কেউ কারো চেয়ে পিছিয়ে ছিল না। কিন্তু প্রথমার্ধে মেসির পেনাল্টি থেকে নেওয়া গোল আর এঞ্জেল দি মারিয়ার সুযোগ সন্ধানী গোলের সুবাদে (২-০) এগিয়ে থাকা আর্জেন্টিনার সামনে কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছিল ফ্রান্স। দ্বিতীয়ার্ধে বদলে যাওয়া ফ্রান্স জেগে উঠলো বর্তমান বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা গোলদাতা এমবাপ্পের জিওন কাঠির পরশে। পর পর দুটি গোল করে ২-২ সমতা আনলো ফ্রান্স। গোল দুটোর একটি আবার পেনাল্টি থেকে করা।  প্রথমার্ধের ম্যাড়ম্যাড়ে খেলা দ্বিতীয়ার্ধে দেখলো সেয়ানে সেয়ানে লড়াই।

৯০ মিনিট শেষে একই ধারায় খেলতে থাকা খেলায় যখন মেসি আবারো গোল করে জনপ্রিয় আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দিলো অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন এখানেই বুঝি খেলার ইতি।  কিন্তু সমানে সমানে লড়তে থাকা দুই দলের কেউ হার মানতে রাজি ছিল না। সেই প্রিয়দর্শন চিতার ক্ষিপ্রতায় ছুটে চলা এমবাপ্পে আবারো গোল করে আনলো ৩-৩ সমতা। বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যা ট্রিক। গোল্ডেন বুট আর ইতিহাসের পাতার ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্টের ১৯৬৬ ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলা।

কারো হৃদয় ভাঙা টাই ব্রেক।  সত্যি বলতে কি খেলার ধারা অনুযায়ী কোনো দলই হেরে যাওয়া কামনা করিনি। তবুও কেউ জিতবে কেউ হারবে সেটাই সনাতন রীতি। আর্জেন্টিনা গোলকিপার মার্টিনেজ প্রথম শট রুখে দিলো। দ্বিতীয় শট থেকেও গোল বঞ্চিত ওর।  ফলাফল টাই ব্রেকে (৪-২) গোলে জয়ী আর্জেন্টিনা। জাদুকরের হাতে সোনার কাপ। চোখে আনন্দ জল, বাঁধভাঙা আনন্দ জোয়ারে ভেসে শেষ হলো স্মৃতিময় বিশ্বকাপ। কাতার সরকারকে অভিনন্দন এযাবৎ কালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য।

ভাঙলো মিলন মেলা ভাঙলো। চার বছর বিরতির পর আবারো ফুটবল বিশ্ব মিলিত হবে নতুন করে আনন্দ বিহারে।  অনেকেই থাকবেন অনেকেই থাকবেন না। তবু প্রার্থনা জয় হোক সুন্দর ফুটবলের।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

one × five =