বিনোদন ডেস্ক: মরমি কবি হাছন রাজার ১৬৮তম জন্মদিন আজ। অহিদুর রেজা বা দেওয়ান হাছন রাজা তার নাম। বাংলাদেশের একজন মরমি কবি এবং বাউল শিল্পী তিনি। মরমি সাধনায় বাংলাদেশে দর্শনচেতনার সঙ্গে সংগীতের এক অসামান্য সংযোগ ঘটিয়েছেন এই হাছন রাজা। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে লালন শাহ্-এর প্রধান পথিকৃৎ তিনি।
১৮৫৪ সালের এই দিনে অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বর, লক্ষণশ্রীতে দেওয়ান হাছন রাজার জন্ম হয়। শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত লক্ষণশ্রীই ছিল তার সবচেয়ে প্রিয় জায়গাা।
হাছন রাজার গবেষণা-সাধনা ও শিল্পকর্ম ছিল গণ-কল্যাণমুখী। তিনি বিখ্যাত জমিদার ছিলেন। আবার সুরের সাধকও ছিলেন। তার চিন্তা চেতনায় আবহমান বাংলার কৃষ্টি শিল্প সংস্কৃতি ধারণ করে বাংলার গৌরবকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।
লক্ষণশ্রীর ধনাঢ্য জমিদার পরিবারে জন্ম নেয়া মরমি সাধক হাসন রাজা তার জীবনে প্রায় দু’শ গান রচনা করেছেন। ‘একদিন তোর হইব রে মরণ রে হাসন রাজা’, ‘মাটির পিঞ্জিরার মাঝে বন্দি হইয়ারে কান্দে হাসন রাজার মন মনিয়া রে’, ‘প্রেমের বান্ধন বান্ধরে দিলের জিঞ্জির দিয়া’, ‘রঙের বাড়ই রঙের বাড়ই রে’, ‘আমি না লইলাম আল্লাজির নাম রে’, ‘লোকে বলে ঘরবাড়ি ভালানা আমার’, ‘আগুন লাগাইয়া দিলো কুনে হাসন রাজার মনে,’ সহ জনপ্রিয় অসংখ্য গানের জনক হাছন রাজা।
হাছন রাজার গানে সহজ সরল স্বাভাবিক ভাষায় মানবতার চিরন্তন বাণী যেমন উচ্চারিত হয়েছিল, তেমনি আধ্যাত্মিক কবিও ছিলেন তিনি। সকল ধর্মের বিভেদ অতিক্রম করে তিনি গেয়েছেন মাটি ও মানুষের গান।
হাছন দর্শন সম্পর্কে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘পূর্ব বাংলার এই গ্রাম্য কবির মাঝে এমন একটি গভীর তত্ত্ব খুঁজে পাই যা এমন যে ব্যক্তি স্বরূপের সাথে সম্মন্ধ সূত্রেই বিশ্ব সত্য’। নমানবতা সাধনার একটি রুপ হলো মরমি সাধনা। যে সাধনা হাছন রাজার গান এবং দর্শনে পাওয়া যায়। তিনি সর্বমানবিক ধর্মীয় চেতনার এক লোকায়ত ঐক্যসূত্র রচনা করেছেন। তার রচিত গানগুলো শুনলে মনের মাঝে আধ্যাত্মবোধের জন্ম হয়। এক সময়কার প্রতাপশালী অত্যাচারী জমিদার হাছন কালের বিবর্তে হয়ে উঠেছিলেনএকজন দরদী জমিদার এবং মরমিয়া কবি ও বাউল সাধক।
১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তার রচিত ২০৬টি গান নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। এই সংকলনটির নাম ছিল ‘হাছন উদাস’। এর বাইরে আর কিছু গান ‘হাছন রাজার তিন পুরুষ’ এবং ‘আল ইসলাহ্’ সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তার অনেক গান এখনও লোকের মুখে মুখে আছে এবং বহু গান বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।