কস্টিউম ডিজাইনার তুরিন

গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত:  ইদিলা ফরিদ তুরিন একজন কস্টিউম ডিজাইনার। সহজ ভাষায় বললে একটা সিনেমায় কিংবা ফিকশনে অভিনয়শিল্পীদের পোশাক-আশাকের দায়িত্ব যার উপর থাকে তিনিই কস্টিউম ডিজাইনার। চরিত্রের সঙ্গে মিল রেখে পোষাক নির্বাচন করে থাকেন একজন কস্টিউম ডিজাইনার। পর্দায় একটা চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার জন্য অভিনয়ের সঙ্গে সাজসজ্জার বিরাট ভূমিকা রয়েছে। ক্যারেক্টারটি পর্দায় ফুটে ওঠে তার গেটআপের মাধ্যমে। তাই নিঃসন্দেহে সিনেমার পিছনে বিরাট একটা রোল প্লে করে থাকেন কস্টিউম ডিজাইনার। মূলত প্রি প্রোডাকশনের সময় কাজটা গুছিয়ে ফেলতে হয় একজন কস্টিউম ডিজাইনারকে। পরিচালকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রতিটি চরিত্রের জন্য পোষাক নির্বাচন করতে হয়। সিনেমার শুটিংয়ের সময় সকলে তা ঠিক ভাবে পরিধান করলো কি না তা খেয়াল রাখতে হয়। একজন কস্টিউম ডিজাইনার মূলত গল্পের আবহের সঙ্গে মিল রেখে পোষাক নির্বাচন করে থাকেন। পোষাক নির্বাচনের সময় সবচেয়ে বেশি নজর দেন রঙের দিকে। একটি চরিত্রকে জীবন্ত করার জন্য কস্টিউম ডিজাইনের গুরুত্ব কতটুকু তা একজন নির্মাতাই জানেন।

ইদিলা ফরিদ তুরিন বিগত এক যুগে বেশি সময় যাবত কাজ করছেন আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। ২০০৯ সালে বিজ্ঞাপন নির্মাতা পিপলু আর খানের ‘অ্যাপলবক্স’ প্রোডাকশনে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন তুরিন। মূলত বিজ্ঞাপনের জন্য কাস্টিং ম্যানেজ করাই ছিল মূল কাজ। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) থেকে সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন ইদিলা ফরিদ তুরিন।

২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘মাটির প্রজার দেশে’ সিনেমায় কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয়। তারপর ধারাবাহিক ভাবে যুক্ত ছিলেন চমৎকার কিছু প্রজেক্টে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত সিনেমা ‘ন ডরাই’-এর কস্টিউম ডিপার্টমেন্ট সামলিয়ে পেয়েছেন বাহবা। কুড়িয়েছেন প্রশংসা। গত বছর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সিনেমা হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছে যে সব সিনেমা এর মধ্যে অন্যতম অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘রিকশা গার্ল’ ও রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ‘নোনা জলের কাব্য’। দু’টি দুই ঘরানার সিনেমা। একজন রিকশা চালক নারীর জীবনের গল্প বলা হয় অমিতাভ রেজার সিনেমায়। অন্যদিকে নদীর তীরে বসবাস করা এক জনপদের গল্প উঠে আসে তরুণ নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের সিনেমায়। গল্পের সারসংক্ষেপ শুনে নিশ্চয়ই কল্পনা করতে পারছেন সিনেমার কস্টিউম কেমন হতে পারে। আসলেই সিনেমা দুটিতে কস্টিউম ডিপার্টমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। এই তরুণী নিজের কাজটা করেছেন খুবই দক্ষতার সঙ্গে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে তরুণ নির্মাতা রায়হান রাফি নির্মাণ করেন ‘দামাল’ সিনেমা। যেখানে পোষাক পরিকল্পনার দায়িত্ব সামলেছেন ইদিলা ফরিদ তুরিন। ওটিটি ও বড় পর্দার পাশাপাশি সমানতালে কাজ করছেন বিজ্ঞাপনে। দেশের স্বনামধন্য কোম্পানির বিজ্ঞাপনে পোষাক নিয়ে তার কাজ রয়েছে।

শুধু বড় পর্দায় কাজ করে চলেছেন তা কিন্তু নয়। গত কয়েক বছরে দেশে ওটিটি’র জোয়ার বয়ে চলছে। তরুণ থেকে প্রবীণ সকল শ্রেণির নির্মাতারা ঝুঁকছেন ওটিটি কনটেন্ট তৈরি করার দিকে। বাংলাদেশের দর্শকদের মাঝে ওয়েব সিরিজ নিয়ে আগ্রহ জন্মায় যে ওয়েব সিরিজটি দেখার পর তা হচ্ছে ‘তাকদীর’। যা নির্মাণ করেন তরুণ নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকী। চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত ওয়েব সিরিজটতে কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে যুক্ত ছিলেন ইদিলা ফরিদ তুরিন। ‘তাকদীর’ ওয়েব সিরিজে অনবদ্য কাজ করার জন্য কুড়িয়েছেন সম্মাননা। ‘ব্লেন্ডার চয়েস-দ্য ডেইলি স্টার ওটিটি এবং ডিজিটাল কনটেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ এ সেরা পোশাক ডিজাইনার মুকুট লাভ করেন তিনি।

তুরিন নিজের ‘টিম অস্কার ব্লু’ নামের একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। তার পোষা বিড়ালের নাম ‘অস্কার’ এবং ‘ব্লু’। তাদের নামে নামকরণ করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। দুঃখের বিষয় পোষা বিড়াল দুটো আর বেঁচে নেই। তিনি তার জীবনে বিড়াল দুটোর অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে চান, এই কারণেই তিনি তাদের নামে ‘টিম অস্কার ব্লু’ রেখেছেন স্টুডিওর নাম। ভবিষ্যতে নিজের প্রতিষ্ঠানটির প্রসার চান। একটা চরিত্রকে কস্টিউমের মাধ্যমে যতটা নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব তা নিয়ে কাজ করতে চান।

বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রযোজক হিসেবে দেশে-বিদেশে দাপট দেখাচ্ছেন তরুণ প্রযোজক আরিফুর রহমান বললে ভুল হবে না। ২০১৮ সালে প্রযোজক-নির্মাতা জুটি আরিফুর রহমান ও বিজন ইমতিয়াজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘গুপী-বাঘা প্রোডাকশনস’র প্রযোজনায় নির্মিতব্য ‘মাটির প্রজার দেশে’ সিনেমা নির্মাণ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বের নানান চলচ্চিত্র উৎসবে। এই তরুণ নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন নিজের মেধা-মননের মাধ্যমে। আরিফুর রহমানের স্ত্রী ইদিলা ফরিদ তুরিন স্বামীর পরিচয়ে পরিচিত হননি। নিজের সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে পর্দার অন্তরালের মানুষ হিসেবে কুড়িয়েছেন প্রশংসা।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে ক্লিক করুন: অন্তরালে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

4 × five =