‘ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ অয়েল পাইপলাইন’ উদ্বোধন চলছে

‘ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ অয়েল পাইপলাইন’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত পরিশোধিত ডিজেল পরিবহন করবে। এই পাইপলাইনটি প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং বছরে ১০ লক্ষ মেট্রিক টন ডিজেল পরিবহনে সক্ষম। প্রকল্পটি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করবে এবং পেট্রোলিয়াম পণ্য পরিবহনকে আরও দক্ষ ও সাশ্রয়ী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০১০ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর বাংলাদেশ ভ্রমণের প্রাক্কালে এই পাইপলাইন প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছিল এবং সে সময় ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তবে, জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সমস্যা এবং প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পেতে বিলম্ব সহ বিভিন্ন কারণে, প্রকল্পটি বেশ কয়েকটি বাধার সম্মুখীন হয় এবং কয়েক বছর ধরে আটকে থাকে।

২০১৮ সালে, ভারত ও বাংলাদেশ উভয় সরকারই এই প্রকল্পে তাদের আগ্রহ নবায়ন করে এবং পাইপলাইন নির্মাণের জন্য একটি সংশোধিত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। প্রকল্পটি বর্তমানে ভারত সরকারের অন্যতম তেল উত্তোলন ও পরিশোধন কোম্পানি নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় খাতের জ্বালানি তেল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) কর্তৃক যৌথভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।

পাইপলাইনটি নির্মাণ করে ২টি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ব্রিজ এন্ড রূফ কোম্পানি (ইন্ডিয়া) লি. (ভারতীয় অংশের ৪ কিমি) ও কর্টেক ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লি. (৭৬ কিমি) এবং বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান দীপন গ্যাস কোম্পানি লি.। দীপন গ্যাস ৫০ কিমি পাইপলাইন সহ রিসিভিং টার্মিনাল, স্কাডা (স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা), ডিজেল পরিশ্রুতকরণ (ছাঁকার) ব্যবস্থা, পিগ রিসিভিং স্টেশন ও সেকশনাল ভালব স্টেশনের মত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো নির্মাণ করে।

নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) ও তাদের পরামর্শক সংস্থা – ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল) ২০১৯ সালে এই পাইপলাইন নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে এবং দীপন গ্যাস আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশগ্রহণ করে একমাত্র বাংলাদেশি কোম্পানি দীপন কার্যাদেশ লাভ করে।

পাইপলাইনটির নিরাপত্তা ও দক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ অয়েল পাইপলাইন চালু হলে বাংলাদেশের জন্য উল্লেখযোগ্য হারে ডিজেল পরিবহনের খরচ কমবে। এতে সড়ক ও রেলপথে জ্বালানি পরিবহনের পরিবেশগত প্রভাবও কমবে। পাইপলাইনটি বাংলাদেশকে জ্বালানি তেলের একটি বিকল্প উৎস প্রদান করবে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বেশিরভাগ জ্বালানি আমদানি করে বাংলাদেশ।

সামগ্রিকভাবে, ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ অয়েল পাইপলাইন শুধু একটি পাইপলাইন প্রকল্প নয়, এটি দুই দেশের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের প্রতীক। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলির অনুসরণ করার জন্য এবং এই অঞ্চলে আরও সহযোগিতার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × 4 =