সালেক সুফী: গতকাল মুশফিক সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চার ছয়ের প্লাবন এনে বাংলাদেশের দ্রুততম (৬০ বলে ) ওডিআই সেঞ্চুরির মাইল ফলক অর্জন করলো। কে বলে বাংলাদেশের খুদে ডায়নামো ফুরিয়ে গেছে। নিন্দুকেরা কি বলবে জানিনা। হয়তো বন্ধু তামিমের জন্মদিনের উপহার রান দিল মুশফিকের ব্যাটের অকাল বৈশাকীর তাণ্ডব। লিটন, শান্ত, হৃদয় সবাই রান উৎসবে মেতে উঠেই দুই দিন আগের রেকর্ড ৩৩৮/৮ ভেঙে ৩৪৯/৬ নতুন মাইল ফলক স্থাপন করলো। কিন্তু প্রচণ্ড মার খাওয়া আইরিশ দলের প্রতি হয়তো প্রকৃতির করুণা হলো। ভারী বর্ষণে পরিত্যক্ত হলো ম্যাচ। বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে হয়তো আরো একটি পরাজয় থেকে বেঁচে গেলো অতিথি দল।
কাল চৈত্রের আকাশ ছিল কালো মেঘে ঢাকা। অতিথি দল সিলেটে পেয়েছিলো স্বদেশী পরিবেশ। টস জয় করে কিন্তু বোলিং করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি। কিন্তু বিধি বাম। শুরুতে সতর্ক তামিম-লিটন নিজেদের প্রয়োগ করে ১০ ওভারে ৪২ রানের জুটি গড়ার পর ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে কাটা পড়লো তামিম। ছন্দময় ব্যাটিং করলো লিটন (৭০) আর শান্ত(৭৩)। ওদের যোগাযোগে ১০১ রান যোগ হবার পর পটভূমি রচিত হয়ে গেলো। ১৯০ রানে যখন ফিরে যায় ইদানিং নিজেকে ক্রমাগত অন্যন্য উচ্চতায় নিতে থাকা শান্ত তখন ৩৪ম ওভারে দলের রান ১৯০/৪।
জুটি বাধলো নবাগত তাওহীদ হৃদয়ের সঙ্গে নতুন করে নিজেকে চেনানো মুশফিকুর রহিম। দুইজনের ব্যাটে শুরু হলো আনন্দের ঝরনাধারা। অকাল কালবোশেখীর রুদ্র মাতম। চার ছয়ের প্লাবনে প্লাবিত হলো সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। প্রথাগত বা প্রথাবিরোধী সকল স্টোকস মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব। একদিকে পরিণত মিস্টার ডিপেন্ডেবল অন্য প্রান্তে সদ্য উদিত ব্যাটিং দিবাকর। জীবনের প্রথম ম্যাচে ৯২ রান করে শতরান বঞ্চিত হয়েছিল হৃদয়, কাল হলো ৫০ রান বঞ্চিত।
দুইজন বেধড়ক পেটালো অসহায় আইরিশ বাহিনীকে । দুইজনের ছন্দময় ব্যাটিং তাণ্ডবে ৫ম উইকেটে দ্রুত ১৩৮ রান যোগ হলো। ইনিংসের শেষ বলে ১০০ রান করে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম শত রানের মাইল ফলক গড়লো মুশফিক। পূর্ণ হলো ওডিআই ক্রিকেটে ৭০০০ রান। বাংলাদেশ ওডিআই ক্রিকেটে ৩৪৯/৫ সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড করলো।
কি ছিল না কাল বাংলাদেশের ইনিংসে। লিটন, তামিম শুরু করেছিল সেইভাবে যেভাবে খেলতে হয় মেঘে ঢাকা পরিবেশে সবুজ উইকেটে। লিটন, শান্ত সঠিক সময়ে সঠিক পথেই ধাবিত করেছিল ইনিংস গতিময় পার্টনারশিপ গড়ে। এর পর যেভাবে খেলেছে মুশফিক, হৃদয় তা দেখে হৃদয় জুড়িয়ে গেছে বাংলাদেশি ক্রিকেট প্রেমীদের। মুশফিক হয়তো বলবে এটি ওর গৌরবদীপ্ত ক্রিকেট জীবনের অবশ্যই সেরা ইনিংস। ক্রিকেট জীবনের বিকেলে এসে ভোরের সুবাস ওর ব্যাটিং। ৬০ বলের অজেয় ১০০ রানের ইনিংসে ছিল ১৪টি চার আর ২টি প্রচণ্ড ছয়ের মার। সঙ্গী প্রতিভাবান তাওহীদ হৃদয়ের সংক্ষিপ্ত ৪৯ ইনিংসেও ছিল অনাগত আগামীর উজ্জ্বল ইঙ্গিত। ছেলেটি লম্বা রেসের ঘোড়া ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ইনিংসের পর আকাশ ভেঙে নেমেছিল ভারী বর্ষণ। সকাল থেকে মেঘে ঢাকা আকাশ যেন মুশফিকের নয়ন মনোহর ব্যাটিং প্রদর্শনের জন্য অপেক্ষায় ছিল। বৃষ্টি কাল সিরিজ জয় আর আরো একটি ধবল ধোলাই থেকেই রক্ষা করলো আয়ারল্যান্ডকে।
আগে লিখেছি বৃহস্পতি এখন বাংলাদেশের ঘরে। যা কিছু করতে চাচ্ছে বাংলাদেশ সোনা হয়ে ফলছে। কাল ছিল দলনায়ক তামিমের জন্মদিন। কঠিন অবস্থায় আস্থার সঙ্গে শুরু করেও নিজের ভুলে রান আউট না হলে বড় ইনিংস গড়তে পারতো। তবে ওই সময় টিকে থাকাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ।উপযোগী উইকেটে ভালো বোলিং করছিলো আইরিশরা।
২৩ মার্চ এই মাঠেই সিরিজের শেষ ম্যাচ। নাসুমের জায়গায় মেহেদী মিরাজ আর ইয়াসিরের পরিবর্তে আফিফকে পরখ করলে মন্দ হবে না। প্রয়োজনে তামিম বিশ্রাম নিয়ে রনি তালুকদারকেও সুযোগ দিতে পারে।পঞ্চপাণ্ডবদের নিয়ে অনেক কথা হয়। কাল মুশফিকের ইনিংস নিন্দুকদের স্তব্ধ করে দিয়েছে নিঃসন্দেহে। একই ভাবে রিয়াদের অনুপস্থিতি অনুভূত হয়েছে কেউ মানুক আর নাই বা মানুক।