নায়িকা রোজিনার জন্মদিন আজ

ঢাকাই চলচ্চিত্রের ড্রিমগার্ল-খ্যাত চিত্রনায়িকা রোজিনা। বড় পর্দায় থেকে দূরে রয়েছেন দীর্ঘদিন। আশির দশকের সুপারহিট এই চিত্রনায়িকা দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে বসবাস করলেও মাঝে মাঝেই ছুটে আসেন প্রিয় জন্মভূমিতে। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের সব প্রজন্মের তারকাদের তার সঙ্গে রয়েছে চমৎকার সখ্যতা।

নায়িকা হিসেবে তার স্বাতন্ত্র্যিক একটি পরিচয় রয়েছে। অভিনয়, গ্ল্যামার, পার্সোনালিটি, সবকিছুতেই রয়েছে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। গ্রামীণ, শহুরে চরিত্র কিংবা সামাজিক অ্যাকশন কিংবা পোশাকী -সব ধরনের ছবিতেই তিনি সাবলীলভাবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মাতিয়েছেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।

বাংলা চলচ্চিত্রের এই অপরূপ নায়িকার টানা টানা চোখ আর গালের তিলক খচিত মিষ্টি হাসি যেন অমৃত হয়ে লেগে থাকে দর্শকদের মনের ক্যানভাসে। তার মন ভুলানো অভিনয় সবাইকে নিয়ে যায় মুগ্ধতার ঘোরে। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে অভিনয়ে তার ব্যস্ততা কমে যায়। এখনো প্রতিনিয়তই চলচ্চিত্রাভিনয়ের প্রস্তাব পাচ্ছেন। কিন্তু নিয়মিত না হলেও মাঝে মধ্যে তাকে টিভি নাটক ও টেলিফিল্মে অভিনয় করতে দেখা যায়।

আজ ২০ এপ্রিল জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। ১৯৫৫ সালের এই দিনে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে তার জন্ম। তার পিতা দলিল উদ্দিন এবং মা খোদেজা বেগম। দলিল উদ্দিন ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। রোজিনারা মোট চার বোন ও দুই ভাই। রোজিনার ডাক নাম রেনু। রোজিনার শিশু ও কৈশোর সময়টা কেটেছে নিজ বাড়ি রাজবাড়ি শহরেই।

ছোটবেলা থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি প্রচুর আগ্রহ ছিল রোজিনার। বাড়ির পাশে চিত্রা সিনেমাহলে নিয়মিত সিনেমা দেখতেন তিনি। এই সিনেমার নেশা তাকে পড়াশোনা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল।

৭২-৭৩ সালের দিকে সিনেমায় অভিনয় করার মনোবাসনা নিয়ে ঢাকা আসেন। বড়পর্দায় আসার আগে মঞ্চ ও কিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করে নিজের অভিনয় শৈলীকে শানিত করে রেখেছিলেন তিনি। এজন্য প্রথমে জড়িত হন শাওন সাগর নাট্যগোষ্ঠীর সাথে।

১৯৭৬ সালে ‘জানোয়ার’ নামক চলচ্চিত্রের সহনায়িকা হিসেবে সিনেজগতে পদার্পণ করেছিলেন। পরিচালক মহিউদ্দীন তার নামটি পরিবর্তন করে নতুন নাম দেন রোজিনা। রাতারাতি তিনি রেনু থেকে হয়ে গেলেন রোজিনা। মিন্টু আমার নাম ছবিতে তিনি প্রথম রোজিনা নামে হাজির হন। এ সময় তিনি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল মায়া বড়ির বিজ্ঞাপনের মডেল হয়ে বেশ আলোচিত হন। বিজ্ঞাপনটি বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করা হত।

একক নায়িকা হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন এফ,কবির পরিচালিত ‘রাজমহল’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। তৎকালীন সময়ে সিনেমাটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এরপর আর রোজিনাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক ব্যবসা সফল ছবি উপহার দিয়েছেন। শাবানা, ববিতা, সুচরিতার পাশাপাশি তিনিও হয়ে ওঠেন একজন সুপারহিট এবং দামী তারকা।

রোজিনা অভিনীত কিছু উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে-  ‘চোখের মণি’, ‘সুখের সংসার’, ‘সাহেব’, ‘তাসের ঘর’, ‘হাসু আমার হাসু’, ‘হিসাব চাই’, ‘বন্ধু আমার’, ‘কসাই’, ‘জীবনধারা’, ‘সুলতানা ডাকু’, ‘মানসী’, ‘দোলনা’, ‘দিনকাল’, ‘রসের বাইদানী’, ‘জীবনধারা’, ‘রূপবান’, ‘আলোমতি প্রেমকুমার’, ‘হামসে হায় জামানা’সহ প্রায় তিনশত ছবিতে অভিনয় করেছেন পদ্মা পাড়ের মেয়ে রোজিনা। বিদেশি ছবিতেও তিনি অভিনয় করেছেন।

একজন সফল চিত্রনায়িকা হিসেবে রোজিনা দেশ-বিদেশে সমাদৃত হন। ১৯৮০ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘কসাই’ ছবিতে পতিতা আঙুরীর চরিত্রে অভিনয় করে পান বছরের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে মতিন রহমান পরিচালিত ‘জীবন ধারা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য দ্বিতীয়বারের মত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন রোজিনা।

এ ছাড়া ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানে ‘হাম দো হায়’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পাকিস্তানের ‘নিগার এ্যাওয়ার্ড’ লাভ করে ভারতীয় উপ-মহাদেশে চমক সৃষ্টি করেন এবং বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে নিয়ে আসেন। রোজিনা তৎকালীন ভারতের জনপ্রিয় নায়ক মিঠুন, পাকিস্তানের জনপ্রিয় নায়ক নাদিমসহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত বহু অভিনেতার বিপরীতে নায়িকা হিসাবে অভিনয় করেছেন।

অভিনয়ের জন্য চিত্রনায়িকা রোজিনা ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ হতে ছোট বড় প্রায় ১৫ টি অন্তর্জাতিক পুরষ্কার লাভ করে নজির সৃষ্টি করেন। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তার অভিনীত ছবির সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫৫টি। ১৯৯০ সালের পর তিনি কোলকাতায় পাড়ি জমান এবং সেখানে প্রায় ২০ টি সফল ছবিতে নায়িকা হিসাবে অভিনয় করেন। ২০০৫ সালে রাক্ষুসী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ইতি টানেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

2 × four =