চিন্তায় উদ্বিগ্ন বাংলাদেশিদের স্বস্তি

সালেক সুফী

মহা ঘূর্ণিঝড় মখা নিয়ে উপকূলবাসী যখন উদ্বিগ্ন ঠিক তখনি জাতিকে স্বস্তির বার্তা দিলো টিম টাইগার্স।  দূর দেশে ইংলন্ডের তীব্র শীত আর বৃষ্টি বাধার পরেও ৩১৯ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করে বাংলাদেশের জয় আনন্দের ঝরনাধারায় ভাসিয়েছে বাংলাদেশকে। উপকূল এলাকার মানুষ মহাতঙ্ককে জয় করার ভরসা পেয়েছে।

টস জয় করে স্বাগতিক দলকে ব্যাটিং করতে পাঠিয়েছিল বৃষ্টিবিঘ্নিত ৪৫ ওভারে সীমিত ম্যাচে। আয়ারল্যান্ড দলের তরুণ ব্যাটসম্যান হ্যারি টেক্টর ১১৩ বলে ১৪০ রানের খুনে ব্যাটিং এবং জর্জ ডকরেল ৪৭ বলে অপরাজিত ৭৪ রান  বাংলাদেশের সামনে ৩১৯/৬ রানের পাহাড় গড়ে দেয়।  জবাবে দ্রুত তামিম, লিটন ৪০ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরত আসে।

তীব্র চাপের মুখে প্রথমে শান্তর সাথে শাকিব জুটি বেঁধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। কিন্তু উইকেটে স্থিতু হয়ে সাকিব হেলায় উইকেট বিলিয়ে দিলে ১০১/৩ বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। সেই কঠিন অবস্থায় দুই তরুণ শান্ত এবং হৃদয় চতুর্থ উইকেটে ১৩১ রানের জ্বলজ্বলে পার্টনারশীপ উপহার দিয়ে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেয়।  হৃদয় ৬৮ রানে বিদায় নিলেও ম্যাচ জয়ী ১১৭ রান করে শান্ত।  শেষ দিকে বাংলাদেশের লিটল মাস্টার বরফ শীতল মানসিকতার মুশফিক অপরাজিত ৩৬ রানের কার্যকরী ইনিংস উপহার দিয়ে ৯ বল বাকি থাকতেই দল  ৩২০/৭ রান করে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় বাংলাদেশ।

জানি মহা সাইক্লোনের আতঙ্কে থাকা বাংলাদেশ স্বস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ আর এসেক্স কাউন্টির চেমসফোর্ডে উপস্থিত টাইগার অনুরাগীদের মতো প্রবাসে বাংলাদেশিরাও আমারও পারি আত্মবিশ্বাসে উৎফুল্ল হয়েছে। একদিনের ফরম্যাটে দেশের মাটিতে নিয়মিত  জয় পাওয়া বাংলাদেশ বিদেশের বৈরী পরিবেশে বিশাল রান তাড়া করে জয় নিঃসন্দেহে দলের বিজয় মুকুটে আরো একটি পালক সংযোজন।

মনে রাখতে হবে এই বিজয়ের মুলে রয়েছে দুই তরুণ নাজমুল শান্ত আর তাওহীদ হৃদয়ের বিশাল অবদান। দলের দুই মুখ্য খেলোয়াড় তামিম , সাকিবের বড় অবদান ছাড়াই এই জয় ইঙ্গিত দিচ্ছে দলে প্রজন্ম বিবর্তন আসছে। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিবিঘ্নিত হবার পর দ্বিতীয় ম্যাচ জয় বাংলাদেশকে সিরিজে ১-০ এগিয়ে দিলো। রোববার যখন বাংলাদেশ শেষ ম্যাচ খেলবে তখন হয়তো বাংলাদেশে প্রলয় ঘটাবে মহা ঘূর্ণিঝড় মখা।  প্রার্থনা করি বিধাতা বাংলাদেশকে রক্ষা করবেন।

বাংলাদেশের জন্য খুব শীত এবং বৃষ্টিস্নাত চেল্মসফোর্ডে নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছু বিলম্বে ৪৫ ওভারে সীমিত ম্যাচে টস জয় করে বাংলাদেশ। হয়তো ভারী মেঘে ঢাকা আকাশ তামিমকে বোলিং করার উৎসাহ যোগায়। তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ শুরুতেই উপর্যুপুরি আঘাত হেনে স্টার্লিং (০) এবং দোহেনীকে ( ১২) ফিরিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিলো। কিন্তু এর পর শরিফুল এবং এবাদত লাইন লেংথ বজায় রেখে বল করতে ব্যর্থ হলে বেদম প্রহার করে ক্রমশই আইরিশ দলের ব্যাটিং ভরসা হয়ে ওঠা হ্যারি টেক্টর ( ১৪০) আর অধিনায়ক এন্ডি বালবার্নি (৪২)।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে দ্রুত যোগ হয় ৭ ওভারে ৯৮ রান। টেক্টরের ইনিংসে ছিল ১০ টি চার এবং একডজন ছয়ের মার।  এই দিন বল হাতে সাকিব, তাইজুল বা মেহেদিও সুবিধা করতে পারেনি। শেষ দিকে জর্জ ডকরেল ৪৭ বলে মারকুটে অপরাজিত ৭৪ রান করলে ৪৫ ওভারে ৩১৯/৬ রানের চূড়ায় পৌঁছে। শরিফুল  ৯ ওভারে ৮৩ রানের খরুচে বলার ছিল। জানিনা মুস্তাফিজ কেন এই ম্যাচেও খেলেনি। প্রশ্ন করে যায় দলে থাকা প্রতিশ্রুতিবান বামহাতি বোলার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে কেন পরখ করা হলো না।

উইকেটে রান ছিল।  তবে শুরুতেই তামিম, লিটন স্বল্প রানে ফিরে যাওয়ায় চাপে  পড়েছিল বাংলাদেশ।  সাকিব, শান্তর সাথে জুটি বেঁধে পরিস্থিতি ভালোভাবেই সামাল দিচ্ছিলো। কিন্তু ইদানিং কেন যেন ইনিংস বড় করার একাগ্রতা হারিয়ে ফেলে সাকিব। ২৭ বলে ২৬ রান করা সাকিব আরো একটু সংযত হলে দলের উপকার হতো।

১৭ ওভারে ১০১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। এই অবস্থায় শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাটিং করতে থাকা শান্তর সাথে জুটি বাধলো তরুণ তুর্কি তৌহিদ হৃদয়। ওদের দুইজনের ব্যাটিংয়ে ছিল হার না মানা প্রত্যয়। ওদের যোগাযোগে চতুর্থ উইকেটে ১৩১ রান দলকে স্বস্তির স্থানে নিয়ে যায়।

ডাইনামিক হৃদয় ৬৮ রানে ফিরলেও শান্তর  প্রথম ওডিআই শতরান ১১৭ জয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। মুশফিক পরিবর্তিত ম্যাচ ফিনিশার ভূমিকায় আবারো সফল হন. প্রয়োজনীয় মুহূর্তে জ্বলে ওঠা মুশফিক অপরাজিত ৩৬ রানের ইনিংস খেলে জয় ছিনিয়ে আনেন। বাংলাদেশ প্রমাণ করে এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ওদের ডার্ক হর্স বিবেচনা করতেই হবে।

আর একটি ম্যাচ বাকি আছে। জানিনা বৃষ্টি বিঘ্নিত হবে কি না। দলের থিঙ্ক ট্যাংক যে উদ্দেশ্যে মৃত্যুঞ্জয় এবং ইয়াসির রাব্বীকে স্কোয়াডে নিয়ে গেলো তা প্রমাণের সুযোগ আছে কি? মুস্তাফিজকে সুযোগ না দিয়ে কি বার্তা দেওয়া হচ্ছে? দেশের মাটিতে ভিন্ন পরিবেশে শক্তিশালী আফগানিস্তান দলের বিরুদ্ধে ম্যাচগুলো কিন্তু কঠিন হবে।

বাংলাদেশ দলকে কৃতিত্বপূর্ণ  জয়ের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

thirteen + one =