ম্যান সিটির ইউরোপ জয়

পেপ গার্দিওলার হাঁটু গেড়ে হতাশায় নুয়ে পড়ার দৃশ্যটি মনে পড়ার কথা নয়। মনে পড়ার কথা নয় চোটের কারণে কেভিন ডি ব্রুইনার চোখের জলে মাঠ ছাড়ার দৃশ্যটিও।

এখন সময়টা আনন্দের, সময়টা উল্লাসের, সময়টা উদযাপনের। ইউরোপের নতুন রাজা বলে কথা। এমন মুহূর্তে সেই কথা কেইবা মনে রাখে।

রদ্রির গোলে ইন্টার মিলানকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম শিরোপা ঘরে তুলল ম্যানচেস্টার সিটি। অবশেষে! শব্দটা ব্যবহার করতেই হয়। এই একটি শিরোপার জন্য প্রচুর সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে কোচ গার্দিওলার। গত ৬ মৌসুমে রসিটিজেনদের হয়ে পাঁচবার প্রিমিয়ার লিগ জিতলেও ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের আসরে গিয়ে বারবার খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাকে। কিন্তু এবার আর নয়। সব ব্যর্থতা পেছনে ফেলে এবার গার্দিওলা হাসলেন, হাসলো সিটিও।

১৮ বছর আগে ইস্তাম্বুলে ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকথার জন্ম দিয়েছিল লিভারপুল, সেই ইস্তাম্বুলেই নিজেদের ইতিহাসটা নতুন করে লিখল সিটি। দ্বিতীয় ইংলিশ ক্লাব হিসেবে পূরণ করলো ট্রেবলের চক্র। চ্যাম্পিয়ন লিগের আগে প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের শিরোপা ঘরে তুলেছিল তারা।

ফাইনালে সিটির তুলনায় শক্তিমত্তায় ইন্টারকে পিছিয়ে রেখেছিলেন অনেকেই।  কিন্তু মাঠের খেলায় এই তত্ত্ব যেন হাওয়ায় মিলে গেল। আতাতুর্ক স্টেডিয়ামের প্রথমার্ধে সিটিকে এক ইঞ্চিও ছাড় দেয়নি ইন্টার। প্রেসিং ফুটবলের দুর্দান্ত প্রদর্শনী উপহার দেয়। সিটির  আক্রমণগুলো ডি-বক্সে আসার আগেই রুখে দিতে থাকে তারা। যদিও আর্লিং হালান্ড গোলকিপারকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। পাল্টা আক্রমণে সুযোগ পেয়েছিল ইন্টারও। কিন্তু ভাগ্যের চাকা খোলেনি তাদের। সব ছাপিয়ে প্রথমার্ধের সবচেয়ে বড় ঘটনা ডি ব্রুইনার ইনজুরি।

চোট পেয়ে বাধ্য হয়েই মাঠ ছাড়তে হয় সিটির এই মিডফিল্ডারকে। দুই বছর আগের ফাইনালে চেলসির বিপক্ষে ঠিক এভাবেই চোটের কারণে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। সেবারের হৃদয় ভাঙার গল্পটা একটু হলেও নাড়া দিচ্ছিল সিটিকে। তাদের ভয়টা আরও বেড়ে যায় ম্যাচের ৫৯ মিনিটে। একটি ব্যাকপাস নিজে নিয়ন্ত্রণে না নিয়ে এডেরসনের উদ্দেশে ছেড়ে দেন আকেঞ্জি। কিন্তু এডেরসন তখনো গোলবারের নিচে। ফাঁকায় বল পেয়ে সুবর্ণ সুযোগ পান ইন্টারের লাওতারো মার্তিনেস। ডাগআউট ছেড়ে আসা গার্দিওলা তখন হাঁটু গেড়ে মাটিতে নুয়ে পড়েন। কিন্তু মার্তিনেসের শট এডেরসন ঠেকিয়ে দিতেই প্রাণ ফিরে ফেলেন তিনি।

এর ৯ মিনিট পরই সিটির সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। বাইলাইনের খানিকটা আগে থেকে পুল ব্যাক করেন বের্নার্দো সিলভা। কিন্তু তা এক ইন্টার ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে চলে যায় বক্সের বাইরে। তাতে অবশ্য ভালোই সিটির জন্য। কেননা তখন অনেকটা ফাঁকায় দাঁড়িয়েছিলেন রদ্রি। দৌড়ে এসে ডান প্রান্তে বুলেট গতির এক শট নেন এই মিডফিল্ডার। তা ইন্টারের দুই ফুটবলারকে পাশ কাটিয়ে সোজা আঘাত হানে জালে। ইন্টার গোলকিপারের তখন চেয়ে  থাকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।

রদ্রির কাজটুকুর পর দায়িত্বটা যেন আরও বেড়ে গিয়েছিল এডেরসনের জন্য। যে করেই হোক গোলবার অক্ষত রাখতে হবে তাকে। বাকি প্রায় ৩৫ মিনিট একের পর এক পরীক্ষা দেন তিনি। একটিতেও ব্যর্থ হননি। ইন্টারের সুবর্ণ সুযোগগুলো একে একে নষ্ট করে দিতে থাকেন এই গোলকিপার। ৮৮ মিনিটে রোমেলু লুকাকুর হেড দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন তিনি।

সমতায় ফিরতে মরিয়ে হয়ে থাকা ইন্টার কর্নার পায় ম্যাচের শেষ মিনিটে। দিমাক্রোর নেওয়া সেই শট পোস্টের দিকেই এগোচ্ছিল। কিন্তু তা ঠেকিয়ে দেন এডেরসন। ঠিক এর পরেই বেঁজে উঠে রেফারির শেষ বাশি। সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠেন সিটি ফুটবলাররা। স্বাদ পেলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম শিরোপার। একইসঙ্গে ট্রেবলেরও। ১৯৯৯ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যেই কীর্তি প্রথম ইংলিশ ক্লাব হিসেবে গড়েছিল।

তখন কে ভেবেছিল, তার পরের লাইনটা সিটির হাত ধরে লেখা হবে! ইউরোপের ইতিহাসে দশম ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জিতল তারা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

ten + two =