আরো একটি টেস্ট জয়ের বসন্ত বাতাসে বাংলাদেশ

সালেক সুফী
সকালের সেশনে ব্যাটিংয়ে উল্কাপাতের পর এবাদত, শরিফুল, তাইজুল, মেহেদীদের তুখোড় বোলিংয়ে আফগানদের ধসিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচের তৃতীয় দিনেই টেস্ট জয় করার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। সকালের সেশনে আজ মাত্র ২০ রানেই বা বলতে গেলে ৯ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অভিষিক্ত আফগান তরুণ নিঝাত মাসুদের নিখুঁত নিশানা এবং লেংথে বোলিং করে বাংলাদেশের ইনিংস ৩৮২ রানে সীমিত রাখাকে অবশ্যই কৃতিত্ব দিবো। কিন্তু এভাবে সুবিধাজনক অবস্থা থেকে বাংলাদেশ ঝরে পড়া বড় দল হয়ে পড়ায় বাধা হিসাবে বিবেচনা করাও প্রাসঙ্গিক। উইকেটে পেস, বাউন্স, মুভমেন্ট সব ছিল। সকালের সেশনে আফগানিস্তান বোলিংয়ে শৃঙ্খলা ছিল। নিঝাত মাসুদ এবং যামিন আহমেদজাই উইকেট অনুযায়ী নিখুঁত বোলিং করে আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মিরাজ, মুশফিককে সহসা ফিরিয়ে দিলে বাংলাদেশ ব্যাটিং লেজ সহজেই ঝরে পরে। তবুও ৩৮২ রান এই উইকেটে বিশাল হয়ে দেখা দেয় বদলে যাওয়া বাংলাদেশ বোলিং আক্রমণের তীব্রতায়। বেশ কিছু দিন খেলার বাইরে থেকে ফিরে এসে তাসকিনের বোলিং কিছুটা মরচে ধরা ছিল। কিন্তু শরিফুল এবং বিশেষত এবাদত ছিল এক কথায় বিধ্বংসী। ওদের যৌথ চাপের সঙ্গে তাইজুল, মেহেদির ঘূর্ণি যোগ হওয়ায় আফগানিস্তান ইনিংস ৩৯ ওভারে ১৪৬ রানে শেষ হলে বাংলাদেশ ফলো ওন করানোর সুযোগ পায়।  হয়তো ব্যাটসম্যানদের আরো আত্মবিশ্বাসী করে তোলা এবং স্পোর্টিং উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করার ঝুঁকি নেয় নি বাংলাদেশ। দিন শেষে শান্ত (৫৪*) এবং জাকির (৫৪*) জুটির অপরাজিত ১১৬ রানের সুবাদে ১৩৪/১ রান করে ৯ উইকেট হাতে রেখে ৩৭০ রানে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বৃষ্টি বিঘ্ন না হলে  তৃতীয় দিন সকালে একটি সেশন খেলে ৪০০ রানের টার্গেট ছুড়ে এই টেস্ট তৃতীয় দিনে জিতে নেয়ার সমূহ সম্ভাবনা এখন বাংলাদেশের আয়ত্তে।

সবচেয়ে ভালো লেগেছে চার স্লিপ, একজন গালি, সিলি মিড্ ওন নিয়ে বাংলাদেশের ফিল্ডিং সাজানো। স্পোর্টিং উইকেটে খেলে এভাবেই বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট।
কেন বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন সকালে মুড়ি মুড়কির মতো ঝরে পড়লো এটির নানা ব্যাখ্যা থাকতে পারে। আমি বাংলাদেশ লেট্ মিডল অর্ডার ব্যার্থতার চেয়ে আফগান বোলারদের বোলিংকে কৃতিত্ব দিব।  উইকেটের প্রাপ্ত সুবিধা এবং মেঘলা আকাশের আকাশের অবস্থার যথাযথ ব্যবহার করেছে আফগান বোলাররা।  আগের দিনের শেষ সেশন থেকেই শুরু করেছিল।  দ্বিতীয় দিন সকলে সেটা পূর্ণ করে। তবে মেহেদী মিরাজ কিছুটা  যত্ন শীল হলে হয়তো ইয়ামিন আহমেদজাইয়ের বলে অভাবে আত্মাহুতি দিতেন না। মুশফিকের ক্ষেত্রে হটাৎ গুড লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বল থেকে কিছু করার ছিল না। আর বাংলাদেশের লম্বা লেজ নিয়ে স্পোর্টিং উইকেটে মানসম্পন্ন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে এমন সমস্যা হবেই।  আমি উপযোগী উইকেট এবং পরিবেশে ভালো বোলিংয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ব্যাটিং লেজ ঝরে পড়তে দেখকে বিস্মিত হই নি। তবে ৩৭৩ থেকে ৩৮২ মাত্র ৯ রানে ৫ উইকেট হারানো নিয়ে টিমের থিঙ্ক ট্যান্ক অবশ্যই বিচার বিশ্লেষণ করবে। একই ধরণের উইকেটে বড় দলের বিরুদ্ধে ব্যাটিং করে অনেক উন্নতির সুযোগ আছে।


বাংলাদেশ ইনিংস শেষ হবার সময় থেকেই অনেকটা আশ্বস্ত ছিলাম এই উইকেটে আগুন ঝরাবে বাংলাদেশ বোলিং। কিছু সময় পর ম্যাচে ফেরা তাসকিন কিছুটা ছন্দ হীন থাকলেও দুর্দান্ত বোলিং করেছে এবাদত এবং শরিফুল। ওদের তোপের মুখে আফগান ব্যাটিং তাসের ঘরের মতোই ঝরে পড়েছে। দলের তিন ব্যাটিং কান্ডারি ইব্রাহিম জারদান, রহমাত শাহ, হাসমাতুল্লাহ দাঁড়াতেই পারে নি। কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিল নাসির জামাল (৩৫) এবং আফসার জাজাই ( ৩৬)। তবুও ইবাদাতের (৪/৪৭) গতি এবং সুইং এর সঙ্গে শরিফুলের (২/২৮)  পেনিট্রেশন আফগান ইনিংসকে গতিহীন করে দেয়। এর সঙ্গে তাইজুল (২/৭) এবং মিরাজের (২/১৫) টার্ন এবং ড্রিফট যোগ হয়ে আফগান ইনিংসকে ১৪৬ রানে সীমিত করে।  ২৩৬ রানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ অবশ্যই ফলো ওন করাতে পারতো। ৫ বলার মাত্র ৩৯ ওভার বোলিং করে ক্লান্ত ছিল বলা যাবে না। কিন্তু হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট ভঙ্গুর উইকেটে সম্ভাব্য চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং ঝুঁকি নিতে চায় নি। দ্বিতীয় ইনিংসে আবারো ভালো খেলছে শান্ত। এবার সঙ্গী প্রথম ইনিংস প্রথম বলে উইকেট হারানো জাকির। ৯ উইকেট হাতে রেখে ৩৭০ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ। আজ প্রথম সেশন ব্যাটিং করে ৪২০-৪৫০ রান লিড নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করলে দিনশেষে আরো একটি জয়ের আশা করতেই পারে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশকে ফিল্ডিং আরো তুখোড় করতে হবে।  প্রথম ইনিংসে কয়েকটি ক্যাচ ফস্কে গাছে, কিছু রান আউট সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

20 − fifteen =