সংশপ্তক হাসান
সম্পর্কের কথা গোপন রাখা তারকাদের জন্য নতুন কিছু না। একসময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেলিব্রেটিরা নিজেদের প্রণয় ও পরিণয়ের কথা গোপন রাখতেন। বাংলাদেশের তারকারাও এর ব্যতিক্রম নন। তবে আজকাল এই রীতি অনেকটাই বদলে গেছে। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় নিজেদের নতুন জীবনের কথা আজকাল তারা গোপন করেন না। বরং ভক্তদের নিয়েই তা উদযাপন করেন। বলিউডের আলিয়া ভাট-রণবীর কাপুর, ক্যাটরিনা-ভিকি, দীপিকা-রণবীর কিংবা বাংলাদেশের বিদ্যা সিনহা মিম তার উদাহরণ।
কিছু তারকা আছেন যারা গোপন রাখতে চান নিজেদের জীবনের নতুন অধ্যায়ের গল্প। উদাহরণ হিসেবে ঢালিউড অভিনেতা জিয়াউল রোশানের কথা বলা যায়। সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে তার বিয়ের সংবাদ। এর সাতদিনের মাথায় জানা যায়। মা হতে চলেছেন তার স্ত্রী তাহসিনা ওয়াজেদ এশা। এরপরই রোশান-এশা দম্পতির কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে কন্যা সন্তান। এ থেকে বোঝা যায় দুটি সংবাদ অল্পদিনের ব্যবধানে প্রকাশ করলেও তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন অনেক আগে।
রোশানের বিয়ে ও তার স্ত্রীর বেবি বাম্পের ছবি সম্প্রতি সামনে এলেও মিডিয়াপাড়ায় আগে থেকেই গুঞ্জন ছিল এ নিয়ে। রোশান তার দীর্ঘদিনের প্রেমিকার সাথে গাটছড়া বেঁধেছেন। কয়েক বছর চুটিয়ে প্রেমের পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তারা। তবে এ অভিনেতা জানিয়েছেন, নিজের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে তিনি গোপন রাখেননি বিয়ের খবর। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ছিল পারিবারিক সমস্যা। এশার বাবা জানতেন না তাদের এই বিয়ের কথা। আর রোশানের ভয়টা ছিল ওখানেই। তাদের এই গোপন বিয়ের খবর জেনে তিনি যদি অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। এই ভয় থেকেই এ নায়ক গোপন রেখেছিলেন নিজের বিয়ের খবর। তবে শশুরবাড়ির অন্যরা ঠিকই জানতেন। এদিকে বিয়ের পর মাঝে মাঝেই একসাথে বেরিয়ে পড়তেন এশা-রোশান। মনের মতো করে সময় কাটাতেন। ফলে আত্মীয় স্বজনদের বিষয়টি আঁচ করতে সময় লাগেনি। শুধু বুঝতে পারেননি রোশানের শশুর। কিন্তু রোশান চাইছিলেন বিষয়টা তাকে জানাতে। কীভাবে জানাবেন উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সেই উপায় ভাবতে ভাবতেই কেটে গেছে আড়াই বছর। অতঃপর যেদিন মনে সাহস নিয়ে জানাতে গেলেন সেদিন এ নায়ক জানতে পারলেন, শশুর মশাই তাদের বিয়ের খবর আগে থেকেই অবগত। মোটেও রাগ করেননি তিনি। বরং জামাইকে সানন্দে বরণ করে নেন। সেইসঙ্গে আত্মীয় স্বজনদের সাথে রোশানকে পরিচয় করিয়ে দিতে এক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন তিনি।
ঢাকা সেনানিবাসসংলগ্ন বালুঘাট এলাকায় এশাদের বাসা। সেখানেই মেহেদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তাদের। পরদিন বিবাহোত্তর সংবর্ধনা দেওয়া হয় এ দম্পতিকে। এদিকে বিয়ের খবর গোপন রাখা প্রসঙ্গে রোশান বলেন, ‘আমার ওয়াইফও চাচ্ছিল না হুট করে বিয়ের বিষয়টি জানাতে। কারণ, এতে কী ধরনের রিঅ্যাকশন হয়, সেটাও একটা ব্যাপার ছিল। এশার বাবা সম্প্রতি আমাদের বিয়ের খবর জানতে পেরেছেন, খুব খুশিও হয়েছেন। পাত্র হিসেবে আমাকে পছন্দও করেছেন। তিনি এ-ও জানতেন, আমার সঙ্গেই ওর বিয়ে হবে। বিয়ে হয়ে গেছে শুনে তিনিও স্বাভাবিকভাবে বিষয়টা গ্রহণ করেছেন। আমাকে ভীষণ স্নেহ করছেন।’ রোশানের স্ত্রী তাহসিনা এশা বিজ্ঞানের ছাত্রী। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং শেষবর্ষে অধ্যয়নরত আছেন।
এশা-রোশানের পরিচয় হয়েছিল ফেসবুকে। ধীরে ধীরে একে অন্যের সম্পর্কে জানতে জানতে কাছাকাছি হন তারা। দুই মাস ফোনে কথা বলেন। এভাবেই একসময় তা রূপ নেয় প্রেমে। সিদ্ধান্ত নেন দেখা করার। রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় দেখা করেন তারা। সম্পর্কের বিষয়টি তখনও প্রকাশ করেননি কেউ, বলেননি ভালোবাসি। আরও কিছুটা সময় নিচ্ছিলেন তারা। এভাবে কেটে যায় আরও দুই মাস। রোশান-এশার ফোনালাপ চলতে থাকে। এবার তারা একে অপরকে বলে দেন মনের কথা। সেই থেকে শুরু একসাথে পথচলার। তা পূর্ণতা পায় ২০২০ সালের ১১ জুন। উত্তরায় রোশানের এক বন্ধুর বাসায় কাজী ডেকে বিয়ে করেন তারা।
ঐশীর যৌথজীবন
সম্প্রতি যৌথজীবনে পা রেখেছেনন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা ঐশী। ঐশীকে যারা জানেন ও চেনেন তারা নিশ্চয়ই বলবেন, চোখের সামনে মেয়েটা ছোট থেকে বড় হলো। বিয়েও করে ফেললো! বিষয়টি অনেকটা এরকমই। সংগীতাঙ্গনে ঐশীর আগমন ও জনপ্রিয়তা একেবারেই কম বয়সে। তাই দর্শক ও সংগীতাঙ্গনের মানুষের চোখের সামনেই ছোট থেকে পরিণত বয়সে পা রেখেছেন তিনি। ফলে এ তারকার বিয়ের খবর শুনে এমন প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক। তার নতুন জীবন শুরুর খবর অনেকটা হুট করেই শোনা গিয়েছিল। মাস দুয়েক আগে ঐশী সামাজিকমাধ্যমে একটি ছবি প্রকাশের মাধ্যমে তার বাগদানের খবর জানিয়েছিলেন। সেখানে সংগীর হাতের মুঠোয় নিজের হাত রেখে একটি ছবি দিয়েছিলেন ঐশী।
সে সময় জানা গিয়েছিল, ঈদের পর বাজবে তার বিয়ের সানাই। নতুন জীবনের জন্য ঐশীর বেছে নেওয়া মানুষটির নাম আরেফিন জিলানী সাকিব। বাগদানের জন্য এপ্রিলের এক রোববার বেছে নিয়েছিলেন তারা। সেদিন দুই পরিবারের সদস্যই উপস্থিত ছিলেন ঐশী-জিলানীর বাগদান আয়োজনে। ওই আংটি বদলের ছবিই পোস্ট করে গায়িকা লিখেছিলেন, বারাকাল্লাহ ফিকুম। জিলানীও সে আনন্দের দিনে ছবিটি শেয়ার করে দিয়েছিলেন একই ক্যাপশন। সে সময় জানা গিয়েছিল, আড়াই বছর ধরে একে অপরের হৃদয়ে দোলা দিচ্ছিলেন ঐশী-জিলানী। একটি গেট টুগেদারে প্রথম দেখা হয়েছিল তাদের। কথা বলার শুরু সেখান থেকে। প্রথমে বন্ধুত্বে সীমাবদ্ধ ছিল সম্পর্ক। পরে কথা বলতে বলতে তা রূপ নেয় গভীর প্রেমে। তার পরিণয় স্বরুপ এই আংটি বদল। জানা গেছে, জিলানী নর্থ সাউতে পড়াশুনা শেষ করে বর্তমানে চাকরিরত আছেন একটি ওষুধ কোম্পানিতে। চাকরির পাশাপাশি মডেলিংও করেছেন তিনি।
এদিকে ঈদ শেষ হতেই বিয়ের ঘনঘটা বাজার কথা থাকলেও ঈদ শেষে সাজ সাজ রব ওঠেনি। বরং ধীরে সুস্থে আয়োজন করা হয় গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে। গত ৩১ মে এ আয়োজন করা হয়েছিল গান বাংলা পরিবারের পক্ষ থেকে। এতে নিজের পরিবারের বাইরে সংগীতশিল্পীদের নিয়ে আরও একটি পরিবার সাথে ছিল ঐশীর। হলুদ আয়োজনের শুরুটা ছিল অন্যরকম। এক বছর হলো মারা গেছেন ঐশীর বাবা। তাই মেয়ের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শুরু করা হয় ঐশীর উদ্দেশে তারই লেখা একটি চিঠি দিয়ে। এদিকে বাবার লেখা এ চিঠি পড়ে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি ঐশী। ভরা আসরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনার ভার ছিল কণ্ঠশিল্পী লুইপার। তার মজার উপস্থাপনায় মঞ্চে আসেন কণ্ঠশিল্পী পারভেজ সাজ্জাদ। পারভেজ বড় মজার মানুষ। অনুষ্ঠান জমাতে সময় লাগেনি তার। এরপর মঞ্চে আসেন আনিকা, লুইপা, তূর্য, নাবিলা, সজল, পূজা, নাদিয়া ডোরা, নিলয় প্রমুখ। তাদের হাস্যরসাত্মক পরিবেশনায় আলো ঝলমলে হয়ে ওঠে এ গায়িকার গায়ে হলুদের আসর। গানে নাচে রঙিন হয়ে ওঠে সে আয়োজন। এক সময় ঐশী ও তার বর জিলানীও অংশ নেন নাচ গানে। এরপর নৈশভোজ হয়ে গেলে গিটারের মূর্চ্ছনায় আসর মোহিত করেন কৌশিক হোসেন তাপস। তার সঙ্গে সুর মেলান অন্যান্য শিল্পীরাও। ঐশীও কণ্ঠে তোলেন গান।
পরদিন শুক্রবার রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত কনভেনশন সেন্টারে বিয়ে হয় ঐশীর। এদিন ঐশীর পরনে ছিল লাল টুকটুকে বেনারসি। আর তার স্বামী সেজেছিলেন অফ হোয়াইট শেরওয়ানিতে, সঙ্গে লাল দোপাট্টা। দুজনকে ভীষণ মানিয়েছিল। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা মুক্ত কণ্ঠে প্রশংসা করেছিলেন তাদের। বাবার বড় আদরের সন্তান ঐশী। কিন্তু মেয়ের এই আনন্দের মুহূর্ত দেখে যেতে পারলেন না। তবে ঐশী তার বাবাকে ঠিকই রেখেছিলেন। বিয়ের আসরে বড় করে টাঙিয়ে রাখা হয়েছিল বাবা আবদুল মান্নানের ছবি। বাবাকে পাশে রেখেই স্বামীকে নিয়ে বিয়ের আনন্দে মেতেছিলেন তিনি। ছিলেন ভীষণ প্রাণোচ্ছল। বিরতিহীন ফটোসেশন, নাচ, গান কোনো কিছুতেই ক্লান্তির ছাপ পড়েনি চেহারায়।
এমন দিনে ঐশীর মায়ের হাতে কতো দায়িত্ব। সদ্য স্বামী হারিয়েছেন তিনি। যিনি বেঁচে থাকলে এসব ঝাক্কি তাকে সামলাতে হতো না। কিন্তু এখন তো তিনিই বাবা তিনিই মা। এ বিয়েতে সব একহাতে সামলাতে হয়েছে। সেইসঙ্গে থাকতে হয়েছে হাসিখুশি। যেন ঐশীর ওপর এর কোনো প্রভাব না পড়ে। এদিন উপস্থিত ছিলেন ঐশীর মা’সহ দুই পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি ঐশীর বিয়ের অনুষ্ঠানে বসেছিল তারার মেলা। শোবিজের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। খুরশিদ আলম, রফিকুল আলম, আবিদা সুলতানা থেকে শুরু করে আঁখি আলমগীর, এলিটা করিম, কোনাল, পুতুল, ঝিলিক, টিনা রাসেল, রন্টি দাস, সাব্বির, মেহরাবসহ কতজন এসেছিলেন। তাদের গান হাসি আড্ডায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল নবদম্পতির যৌথ জীবনের প্রথম দিন।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: দাম্পত্য