কবি সুফিয়া কামালের ১১২তম জন্মবার্ষিকী আজ

নারী জাগরণের অগ্রদূত কবি বেগম সুফিয়া কামালের ১১২তম জন্মবার্ষিকী আজ। ‘জননী সাহসিকা’ হিসেবে খ্যাত এ কবি ১৯১১ সালের ২০ জুন জন্মগ্রহণ করেন।

সুফিয়া কামাল আজীবন মুক্তবুদ্ধির চর্চার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় মারা যান এ কবি।

সৈয়দা সুফিয়া বেগম (সুফিয়া কামাল) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের বাকেরগঞ্জ জেলার শায়েস্তাবাদে মামার বাড়ি রাহাত মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একটি সম্ভ্রান্ত বাঙালি মুসলমান জমিদার খান্দানের মেয়ে ছিলেন, যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্তর্গত​শিলাউরের সৈয়দ বংশ হিসেবে পরিচিত।

সাত বছর থাকতে তার বাবা সৈয়দ আব্দুল বারী আইন পেশা এবং ঘরবাড়ি ছেড়ে সন্ন্যাসি-সুফি হয়ে যান। তাই সুফিয়া তার মা সৈয়দা সাবেরা বেগমের সাথে মামার বাড়িতে চলে আসেন। আর সেখানেই বড় হন তিনি। সুফিয়ার নানা খান বাহাদুর নবাব সৈয়দ মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন একজন জমিদার এবং ম্যাজিস্টেট।

সুফিয়া কামালের জন্মদিন উপলক্ষে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ কবি সুফিয়া কামালের জন্মবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

কর্মসূচি

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও কবি সুফিয়া কামালের ১১২তম জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে  ‘সুফিয়া কামাল ও তরুণ প্রজন্ম’ বিষয়ক স্মারক বক্তৃতা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান মঙ্গলবার (২০ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টায় বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্মারক বক্তৃতা প্রদান করবেন আজকের পত্রিকার ডেপুটি এডিটর জাহিদ রেজা নূর।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনকে এ বছর সুফিয়া কামাল সম্মাননা প্রদান করা হবে।

সমাজ সেবায় বিচরণ

বাংলার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সুফিয়া কামালের ছিল আপোষহীন এবং দৃপ্ত পদচারণা। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এই আন্দোলনে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন।

পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধ করলে তার প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন এবং ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেন। স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণ ও নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন।

সৃষ্টি

সাঁঝের মায়া, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী ইত্যাদি সুফিয়া কামালের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। এছাড়া সোভিয়েতের দিনগুলি এবং একাত্তরের ডায়েরি তার অন্যতম ভ্রমণ ও স্মৃতিগ্রন্থ। সুফিয়া কামাল দেশ-বিদেশের ৫০টিরও বেশি পুরস্কার লাভ করেছেন।

মৃত্যু

সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশি নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই সম্মান লাভ করেন। প্রতি বছর এই দিনটিতে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করা হয়।

সূত্র: বাসস, উইকিপিডিয়া।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

1 × 2 =