সালেক সুফী
কেউ জিতেনি, কেউ হারেনি। তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজ ফলাফল ১-১। তৃতীয় ম্যাচটি হয়েছে টাই। দুই দল করেছে ২২৫। বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। বিশেষ করে এই ম্যাচে ফারজানা হক পিঙ্কি প্রথম নারী ব্যাটার হিসাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাইল ফলক অর্জন করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ভারতের অধিনায়ক হারমান প্রীত কাউর ম্যাচ চলাকালে এবং শেষে যা করেছেন সেটা প্রমাণ করে ক্রিকেটে এখন দাদাগিরি দিদিগিরি চলছে অবিরত।
সবাই জানে বিশ্ব ক্রিকেটে এখন তিন মোড়লের দাপট, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্ষেত্রে ভারত অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে। ক্রিকেটে আম্পায়ারদের সকল সিদ্ধান্ত ১০০% সঠিক মেনে নেওয়ার কারণ নেই। কিন্তু এগুলো সব দল অধিকাংশ ক্ষেত্রে খেলার অংশ হিসাবে মেনে নেয়। কিন্তু ভারত বিশেষ করে এই ক্ষেত্রে অক্রিকেটীয় সুলভ মনোভাব দেখায় যা কাল আবার দেখলো ক্রিকেটবিশ্ব।
ভারতের নারী দলটি এবার বাংলাদেশ সফরে এসেছিলো টি২০ এবং ওডিআই সিরিজে ফেভরিট হিসাবেই। বাংলাদেশ কিন্তু দুটি সিরিজেই চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছে। প্রতাপশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিনা যুদ্ধে হার মানেনি। প্রথম দুটি টি২০ ম্যাচ হেরে যাবার পর পর তৃতীয় ম্যাচ দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ধবল ধোলাই এড়িয়েছে। ওডিআই সিরিজের প্রথম ম্যাচটিও দাপুটে জয় তুলে নিয়ে হকচকিয়ে দিয়েছে ভারতের দিদিদের।
কাল তৃতীয় ম্যাচে শুরু থেকেই যুদ্ধ মেজাজে খেলে বাংলার বাঘিনীরা ২২৫/৪ লড়াকু সংগ্রহ অর্জন করে। কাল যেভাবে বাংলার মেয়েরা সামর্থের সবকিছু দিয়ে ব্যাটিং করেছে তার প্রশংসা করার ভাষা আমার সীমিত। ওপেনিং জুটিতে ফরিদপুরের শামীমা সুলতানা (৫২) আর গাইবান্ধার ফারজানা হক পিঙ্কি (১০৭) ৯৩ রান জুড়ে শুভ সূচনা করার পর অধিনায়ক নিগার সুলতানা এসে রানের গতি বাড়িয়ে দিয়েছিলো ২৪ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে। পিঙ্কি শুরু থেকে শেষ অবধি নিজেকে প্রয়োগ করে খেলে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ক্রিকেটার হিসাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শত রানের মাইল ফলক অর্জন করে। শেষ দিকে সুবহানা মোস্তারী দ্রুত অপরাজিত ২৩ রান তুলে যোগ্য সহায়তা দিয়েছিলো। ধীর গতির ঘূর্ণি উইকেটে ২২৬ রান তাড়া করে জয় সহজ ছিল না।
ভারত গুণে মানে দক্ষতা অভিজ্ঞতায় অনেক বড় দল সন্দেহ নেই। কিন্তু মাঠের খেলায় বাংলাদেশ কিন্তু দ্রুত এগিয়ে আসছে। কিষাণী থেকে ক্রিকেটার বনে যাওয়া মারুফা আক্তারের প্রথম ওভারে ভারতের অন্যতম সেরা বাটার স্মৃতি মান্দানার ক্যাচটি বাংলার অধিনায়ক জ্যোতির হাত ফস্কে না গেলে ভারত হয়তো আরো বিপদে পড়তো। একই ওভারে নিজের বলে যেভাবে মারুফা ওপর ওপেনার শেফালী ভার্মাকে ফেরালো সেটি দেখা বলা যায় মেয়েটি বাংলাদেশকে দীর্ঘ দিন সেবা দিবে।
ভারতকে কিন্তু স্মৃতি এবং দেওল তৃতীয় উইকেট জুটিতে উজ্জীবিত ক্রিকেট খেলে জয়ের পথেই এগিয়ে নিচ্ছিলো। কিন্তু যেই না স্মৃতি ৫৯ করে আউট হলো বাংলার বাঘিনীরা রক্তের স্বাদ পেলো। দেউলকে ৭৭ রানে রান আউট করার পর বাংলাদেশের পালে হাওয়া লাগলো। এই সময় ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কাউর নিজের আউট হবার সিদ্ধান্ত খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব নিয়ে মেনে পারেনি। মাঠেই অসৌজ্জনমূলক আচরণ করে যা দৃষ্টিকটু লেগেছে।
যা হোক বাংলাদেশ ভারত সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করে ম্যাচটি শেষ ওভারে নিয়ে যায়। বল হাতে সেই কিষানী মেয়েটি মারুফা স্কোর ২২৫/৯ সমান দেখেও হাল ছাড়েনি। ওই অবস্থায়ও শেষ উইকেট তুলে ম্যাচটি জিততে দেয় নি ভারতকে। ম্যাচটি হয়েছে টাই। সিরিজের ফলাফল ১-১।
দুই দলের যে কোনো খেলায় কেউ জিতবে কেউ হারবে। কিছু সিদ্ধান্ত দলের বিরুদ্ধে যেতেই পারে। এগুলো খেলার অংশ। বড় দলগুলো বিশেষ করে ভারত এই ক্ষেত্রে উদাহরণ সৃষ্টি করা সঙ্গত। কিন্তু কাল সেটি ভারত অধিনায়ক না করে বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।
সাবাশ বাংলাদেশ সীমিত সুযোগ পেয়েও বাংলাদেশে ক্রিকেট ফুটবলে বাংলার মেয়েদের অব্যাহত অগ্রগতি জাতিকে অনুপ্রাণিত করছে অহরহ। কাল যেভাবে পিঙ্কি সহ গোটা বাংলাদেশ খেলেছে সেটি অনুকরণীয় গোটা জাতির জন্য।
সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক