অফিসের সাজসজ্জা

নীলাঞ্জনা নীলা

পোশাক মানুষের পরিচয় ও রুচির প্রকাশ ঘটায়। পোশাক বলে দেয় আপনার গন্তব্য কোথায়। তাই স্থান ভেদে সঠিক পোশাক বেছে নেওয়া ভীষণ জরুরি। বিয়ে বাড়ি ও যেকোনো আয়োজনে পোশাক কেমন হবে তা খুব সহজে সবাই বুঝলেও অনেক সময় অফিস আউটফিট বা মেকআপ কেমন হবে তা নিয়ে প্রায় দ্বিধায় পড়েন। বিশেষ করে যারা পড়ালেখা শেষ করে সদ্য অফিসে কাজ শুরু করেছেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে অনেকটা সময় চলে যায় পোশাক বাছাই করতে, আবার বাইরে বের হয়ে আটকে পড়তে হয় জ্যামে। তাই আগে থেকেই যদি ধারণা থাকে কেমন হবে আপনার অফিসের পোশাক, তাহলে পোশাক বাছাইয়ের পেছনে আর সময় নষ্ট করতে হবে না।

অফিসে চাইলেই যা খুশি পরিধান করে যাওয়া যায় না। অফিসের পরিবেশ ও কেমন ধরনের পেশায় আছেন সে অনুযায়ী পোশাক বেছে নিতে হবে। আপনি অফিসে যাচ্ছেন বলে কোনো ট্রেন্ডি কিংবা ফ্যাশেনেবল পোশাক পরতে পারবেন না, ব্যাপারটা এমন না। তবে মাথায় রাখতে হবে ট্রেন্ডি হতে গিয়ে যাতে অফিস পরিবেশের সাথে যাচ্ছে না এমন পোশাক যেন পরিধান না করি। আবহাওয়ার কথাও মাথায় রাখতে হবে। গ্রীষ্ম ও শীতের পোশাকে অবশ্যই অনেক তফাত থাকবে। কিছু অফিসের ড্রেস কোড থাকে। তাদের একই ধরনের পোশাক পরিধান করতে হয়। তবে এমন অফিস সংখ্যা কম। বেশিরভাগ অফিসেই পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয় নিজের মতো পোশাক পরার। সে স্বাধীনতা কীভাবে ব্যবহার করবেন তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আপনার উপর।

অফিসে নারীদের পোশাক

পোশাক ঠিক করার আগে রঙের কথা মাথায় রাখতে হবে। অফিসে খুব বেশি গাঢ় রঙ বেছে না নিয়ে হালকা রঙের পোশাক বেছে নিতে হবে। এতে দেখতে কিছুটা স্নিগ্ধ লাগবে। চোখে খুব বেশি কটকটে মনে হবে না। আজকাল কর্পোরেট অফিসে পশ্চিমা পোশাককে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে লং শার্ট ও ফরমাল প্যান্ট পরা যেতে পারে। অফিসে ওয়েস্টার্ন পরতে চাইলে জিন্স না পরে ফরমাল প্যান্ট বেছে নেওয়া উচিত। স্কার্ট পরতে চাইলে এক রঙের স্কার্ট বেছে নিন। স্কার্টের সাথে পরতে পারেন ফরমাল শার্ট। এখন বাজারে পাতলা ফরমাল শার্ট পাওয়া যায়, যা গরমে আরামদায়ক। অফিসে সালোয়ার কামিজ পরে গেলে সুতি কিংবা লিলেনের পরা যেতে পারে। কারণ সুতি কাপড় পরতে যেমন আরাম তেমনি খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ না হবার কারণে অফিসের পরিবেশের সাথে বেশ মানিয়ে যায়। এছাড়া ওয়ান পিস কামিজ, কাফতান, কুর্তি পরা যেতে পারে। এতে যেমন ট্রেন্ডি লাগবে তেমনি অফিসের সাথেও মানানসই হবে।

অনেক অফিসে শাড়ি পরেন যেতে হয়, কারণ দেশের প্রেক্ষাপটে শাড়ি একটি ফরমাল পোশাক। শাড়ির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কারুকাজ করা শাড়ি বেছে নেওয়া যাবে না। সুতির সাদামাটা শাড়ি অফিসের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত আর আরামদায়ক। এছাড়া লিলেন শাড়িও পরা যেতে পারে। কারণ লিলেন শাড়ি সামলানো তুলনামূলক সোজা। এতে অফিসের কাজে ব্যাঘাত ঘটে না। অফিসে জুতার ক্ষেত্রেও বুঝে পরিধান করতে হবে। ওয়েস্টার্ন পরলে হাই হিল পরা যেতে পারে। শাড়ি পরলে বেছে নিতে পারেন সেমি হিল, আবার কামিজ কিংবা কাফতানের সাথে সিøপার মানানসই। অফিসে খুব ভারী গয়না পরে যাওয়া উচিত না। এক্সেসোরিসের মধ্যে পরা যেতে ঘড়ি। আর কানে ছোট কোনো টপ পরা যেতে পারে। হাতে কয়েকটি রিং পরে নিতে পারেন। অথবা এমন কোনো ব্রেসলেট যাতে শব্দ কম হয়। অফিসে হাত ভর্তি চুড়ি পরা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। সবশেষে পারফিউম দিতে ভুলবেন না। সুন্দর সুগন্ধি আপনাকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারে। তবে এক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে খুব কড়া গন্ধযুক্ত পারফিউম যাতে না হয়। এতে আপনার পাশের কলিগ অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। অফিসের জন্য এমন পোশাক বেছে নিতে হবে যা ফ্যাশন ও আরাম দুটিই দেয়।

অফিসের মেকআপ

অফিসের মেকআপ হবে হালকা। বর্তমানে জনপ্রিয় ট্রেন্ড ‘মেকআপ নো মেকআপ লুক’। অফিসের ক্ষেত্রে এটিই করতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ভালো একটি ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এরপর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে, হাতে যথেষ্ট সময় থাকলে টোনার অ্যাপ্লাই করতে পারেন। অফিসের মেকআপে ফাউন্ডেশন এড়িয়ে যাওয়া উচিত সেক্ষেত্রে বিবি ক্রিম অ্যাপ্লাই করতে পারেন। ফাউন্ডেশন দিতে চাইলে ন্যাচারাল ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন।

এরপর ফেইস পাউডার ব্যবহার করে, গালে ও নাকে হালকা করে ব্লাশন অ্যাপ্লাই করে নিন। ঠোঁটে নুড শেইডের লিপস্টিক ব্যবহার করুন। লাল, খয়েরির মতো রঙের লিপস্টিক না পরা ভালো। চোখের ক্ষেত্রে অফিসে যাওয়ার আগে কাজল ও আইলাইনার ছাড়া অন্যকিছু ব্যবহার না করাই ভালো, তবে ঘন করে মাশকারা দিতে পারেন। পরিশেষে সেটিং স্প্রে দিয়ে মেকআপ লক করে দিন। আবার আপনাকে মেকআপ যে করতেই হবে এমন না। ভালো করে সানস্ক্রিন ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে ফেইস পাউডার আর শুধু লিপবাম দিয়েও চলে যেতে পারেন অফিসে।

অফিসে পুরুষদের পোশাক

পুরুষদের অফিসের পোশাকে ক্যাজুয়াল ভাব থাকতে হবে। ধারণা করা হয় পুরুষদের অফিস লুক মানেই ফরমাল পোশাক, আসলে তা নয়। নারীদের মতো পুরুষদেরও হালকা রঙের পোশাক বেছে নিতে হবে। অফিসের জন্য কালো, সাদা, আকাশি রং মানানসই। অফিসে সবসময় চেষ্টা করতে হবে শার্ট পরতে। পরিবেশ বুঝে আপনি কলারযুক্ত টি শার্টও পরতে পারেন। তবে মিটিং বা অফিসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো দিন হলে অবশ্যই ফরমাল পোশাক পরতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শার্টে যাতে অতিরিক্ত প্রিন্ট না থাকে। প্যান্টের ক্ষেত্রে অফিসের জন্য ফরমাল প্যান্ট বেছে নিন। জিন্স পরতে চাইলে খেয়াল রাখতে হবে যাতে প্লেইন জিন্স হয়।

অফিসের পর দাওয়াত

মাঝে মধ্যেই অফিসের পর দাওয়াত পড়ে যায় এবং সামাজিকতা রক্ষায় সেখানে অংশগ্রহণও করতে হয়। অফিস থেকে বাসায় এসে আবার রেডি হয়ে যাওয়ার সময় হয়তো সবসময় থাকে না। তাই অফিসের পর দাওয়াত থাকলে সে প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে। অফিসে আমরা সাধারণত খুব বেশি মেকআপ করে যাই না, সেক্ষেত্রে ব্যাগে করে মেকআপ কিট নিয়ে যেতে পারেন। অফিস থেকে বের হওয়ার আগে টাচ আপ করে নিবেন। ব্যাগে একটি পারফিউম রাখবেন, অফিস শেষে পারফিউম দিয়ে বের হলে ফ্রেশ অনূভুতি হবে। চেষ্টা করবেন, এমন পোশাক অফিসে পরে যেতে যা অফিস এবং দাওয়াত দুটোর জন্যই মানানসই হয়। কিংবা ব্যাগে করে আরেকটি পোশাক নিয়ে যাওয়া যেতে পারে, ওয়াশরুমে গিয়ে তা বদলে নিতে হবে। চুলে ভিন্ন কিছু করতে চাইলে খোঁপা করা যেতে পারে, এই গরমে খোঁপা স্বস্তিও দিবে।

পুরুষদের ক্ষেত্রে খুব একটা ঝামেলাতে পড়তে হয় না। ফরমাল লুকেই অফিস থেকে দাওয়াতে চলে যাওয়া যায়। তবে বডি স্প্রে সাথে রাখতে হবে। যদি অনুষ্ঠানে পাঞ্জাবি পরে যেতে চান তবে আলাদা করে নিয়ে যাবেন।

কিছু টিপস

চেষ্টা করবেন অফিসের পোশাক আগের দিন রাতে ঠিক করে রাখতে। এতে সকালে তাড়াহুড়া করতে হবে না। অফিসের পোশাক যে দামি বা ব্রান্ডের হতে হবে এমন না। নূরজাহান, নিউ মার্কেট, মৌচাক, তালতলা মার্কেটের মতো বিভিন্ন জায়গা সাশ্রয়ী মূল্যে ফরমাল প্যান্টসহ যাবতীয় পোশাক পাওয়া যাবে। একবারে অনেক পোশাক না কিনে প্রতি মাসে কিছু বাজেট রাখতে পারেন অফিসের পোশাকের জন্য। অফিসে পরিপাটি হয়ে যাবার জন্য হাতে কিছুটা সময় রেখে ঘুম থেকে উঠবেন। মিটিং বা অফিসে কোনো প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময় রোজকার সাজ থেকে কিছুটা ভিন্ন সাজে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে বোঝা যাবে আপনি দিনটিকে বিশেষভাবে গ্রহণ করছেন।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আরশী

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

seven + 3 =