অবশেষে জয় এলো নতুনের কেতন উড়িয়ে

সালেক সুফী

অনেক প্রতীক্ষার পরে কাঙ্ক্ষিত জয় এলো নতুনের কেতন উড়িয়ে। তৌহিদ হৃদয়, তানজিম শাকিব, মাহেদী হাসান, নাসুমদের সাহসী লড়াকু অবদানের সঙ্গে বিশ্বসেরা চৌকষ সাকিবের দুর্দান্ত ব্যাটিং সংযুক্ত হয়ে টুর্নামেন্ট সেরা দল প্রতাপশালী ভারতের বিরুদ্ধে এনে দিলো তৃপ্তির জয়। অনেক কিছু হারানোর পর অবশেষে এই জয় অবস্যই দুয়ারে কড়া নাড়তে থাকা বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে অনেক শক্তি সাহস যোগাবে।

টুর্নামেন্টের জন্য গুরুত্বহীন ম্যাচে কাল বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দল ৫ জন করে পরিবর্তন করে একাদশ সাজিয়েছিল। বাংলাদেশ সুযোগ দিয়েছিলো তানজিদ তামিম, আনামুল বিজয়, শেখ মাহেদী, মুস্তাফিজুর রহমান এবং ডেবু করলো তানজিম হাসান  সাকিবকে। টস হেরে ব্যাটিং  করতে নেমে ২৬৫/৮ প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক স্কোর গড়েছিল।

ভারত ফাইনালের আগে প্রথম একাদশের ৫ জনকে বিশ্রাম দিয়ে সুযোগ দিয়েছিলো  ভার্মা, সূর্যকুমার যাদব, মোহাম্মদ সামি  এবং প্রাদিস কৃষ্ণকে। ফ্লাড লাইটের নিচে উজ্জীবিত বাংলাদেশ বোলিং এবং ফিল্ডিং মোকাবিলা করে ভারত পারেনি বাংলাদেশ ছুঁড়ে দেয়া টার্গেট উৎরে যেতে।

২৫৯ রানে ৪৯.৫ ওভারে ভারতের ইনিংস সাঙ্গ হওয়ায় ৬ রানের জয় পায় টাইগার বাহিনী। স্বস্তির জয় নিয়ে এখন দেশে ফিরবে বাংলাদেশ। অনেক প্রতীক্ষার এই জয় অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপ মিশনে টনিক হয়ে উৎসাহ যোগাবে।

বাংলাদেশের জন্য কাল কিন্তু হারাবার কিছু  না। কিন্তু অর্জনের ছিল অনেক কিছু। এক জয়ে অনেক কিছু অর্জিত হয়েছে। ওপেনিং সমস্যা কিন্তু রয়েই গেছে।  হয়তো তামিম ফিরলে কিছুটা স্বস্তি মিলবে। কিন্তু লিটনকে আস্থাহীন মনে হচ্ছে।  আবারো ব্যর্থ হয়ে কাল শামীম হোসেন প্রমাণ করেছে আফিফকে উপেক্ষা করা ঠিক হচ্ছে না।

আর হুট্ করে আনামুলকে পত্রপাঠ উড়িয়ে নেওয়া ঠিক হয়নি সেটিও কাল প্রমাণিত হয়েছে। সাকিব কাল খেলেছে স্বভাবসুলভ সহজাত ইনিংস।  বাহারি স্টোকস সাজানো ইনিংসটি পানি পানের বিরতিতে ছন্দ না হারালে ৮০ তে না থেমে শত রান পেরিয়ে যেতে পারতো।

তরুণ প্রতিভাবান তাওহীদ হৃদয় খেলেছে আরো একটি প্রতিশ্রুতিপূণ ৫৪ রানের সাহসী ইনিংস। ওকে এখন জানতে  কিভাবে উইকেটে স্থিতু হয়ে ইনিংস গভীরে নিতে হয়। সাকিব-হৃদয়ের ১০১ রানের পার্টনারশিপ কাল ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে।

শেষদিকে নাসুম আহমেদ (৪৪), শেখ মেহেদী (২৯*) এবং প্রথম খেলতে আসা তানজিম শাকিব (১৪*) সাহসী ব্যাটিং করে বাংলাদেশ ২৬৫/৮ রানের লড়াকু ইনিংস গড়ে তোলে।  প্রমাণ হয় ভুমরা, কুলদীপ যাদব বিহীন ভারতের আক্রমণ শেষ স্লগ ওভারে নখদন্তহীন শার্দুলের মত।

বরাবর বলেছি বাংলাদেশ ব্যাটিং করে পর্যাপ্ত পুঁজি দিলে পরিবর্তিত বোলিং আক্রমণ কোমড় কষে লড়বে। কাল অভিষিক্ত তানজিম শাকিব প্রথম দুই ওভারে দৃষ্টি নন্দন বোলিং করে রোহিত শর্মা এবং তিলক ভার্মার উইকেট তুলে নিয়ে ঝড় তোলে।

সেই ঝড়ের তান্ডবে কোহলি, পান্ডিয়া বিহীন ভারত ব্যাটিং হাল ধরেছিলো অসামান্য প্রতিভাবান শুভমান গিল।  ওর ১৩৩ বলে করা ১২১ রানের ইনিংস একমাত্র আক্সার প্যাটেল (৪২) ছাড়া আর কারো সহায়তা পায়নি। বাংলাদেশের মুস্তাফিজ (৩/৫০)। মেহেদী হাসান (২/৫০) এবং তানজিম সাকিবের (২/৩২) সঙ্গে সাকিব আল হাসান (১/৪৩) এবং (মিরাজ  ১/২৯) অবদান রাখায় ভারত ২৫৯ রানে গুটিয়ে যায়। স্বস্তির জয় পায় বাংলাদেশ ৬ রানের।

একটি জয় কিছু প্রশ্নের জবাব দিলেও বাংলাদেশকে কিন্তু ব্যর্থ এশিয়া কাপ মিশন থেকে অনেক কিছুই শিখতে হবে। জয়টি যেন ভুল কৌশলের ক্ষতগুলোর মলম হিসাবে কাজ না করে।

ভারতের জন্য পরাজয়টি ঘুম ভাঙার সংগীত হয়েছে। ওরা যে অজেয় দল নয় বিশ্ব দেখেছে কাল।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

19 − five =