সালেক সুফী
আজ ১৭ সেপ্টম্বর ২০২৩ শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এশিয়া কাপ ক্রিকেট ২০২৩ ফাইনাল খেলা। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল হলো ৭ বারের চ্যাম্পিয়ন ভারত আর ৬ বারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকা। জনপ্রিয়তা এবং সাম্প্রতিক ফর্মের বিবেচনায় অনেকেই আশা করেছিল পাকিস্তান -ভারত প্রথম বারের মত ফাইনাল খেলবে। কিন্তু মানুষ চায় এক. বিধাতা নির্ধারণ করে রাখেন ভিন্ন কিছু। টুর্নামেন্টে ধারাবাহিক ভাবে ভালো খেলেই ফাইনালে এসেছে শ্রীলংকা। গ্রুপের ম্যাচে ওরা বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানকে হারিয়েছে। গ্রুপ অফ ফোর পর্বেও হারিয়েছে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানকে। ভারতের খেলায় অবশ্য উত্থান পতন ছিল। গ্রুপ পর্বে সহজ প্রতিপক্ষ নেপালকে হারানোর পর পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচটি বৃষ্টি বিঘ্নিত হয়ে পরিত্যাক্ত হয়। গ্রপ ফোর পর্বে ভারত পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিলেও শ্রীলংকাকে পরাজিত করে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে। শেষ ম্যাচে ভারত বাংলাদেশের কাছে হেরে যায়। আজ ফাইনালে গাণিতিক হিসেবে ভারত এগিয়ে। কিন্তু গণিত দিয়ে ক্রিকেট ফলাফল নির্ধারণ হয় না। পরিবেশ, পরিস্থিতি, নিদৃষ্ট দিনে পরিকল্পনাগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন করে অপেক্ষাকৃত কম শক্তির দল বাজিমাত করতে পারে। আজ আমার মন বলছে শ্রীলংকা যদিও মাথা সায় না দিয়ে ইঙ্গিত করছে ভারত।
ভারত তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বী দল হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে পরাজিত হয়ে কিছুটা হলেও ছন্দ হারিয়েছে। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ম্যাচ দেখেও ওদের অজেও মনে হয় নি। ধারাবাহিক খেলতে থাকা শ্রীলংকা আজ ভারতকে চমকে দিলে বিস্মিত হবো না। তবে ভারত কিন্তু বিধ্বংসী ব্যাটিং এবং সুষম বোলিং নিয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী দল। অধিনায়ক রোহিত শর্মা সমসাময়িক বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ঝুলিতে আছে তিন তিনটি ওডিআই দ্বিশতক। এই টুর্নামেন্ট দুটি ম্যাচে শুরুতে আউট হলেও দুটি ম্যাচে ভালো খেলেছে। রোহিত কিন্তু বড় ম্যাচে বরাবর ভালো খেলে। সঙ্গী তরুণ শুভমান গিল বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম সেরা আক্রমনাত্মক ওপেনিং ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সর্বশেষ ম্যাচেও করেছে শত রান। তিন নম্বরে ব্যাটিং করা বিরাট কোহলি সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ট ব্যাটসম্যান হিসাবে বিবেচিত। আছে তুখোড় ফর্মে। পাকিস্তানের সঙ্গে গ্রপ ফোর ম্যাচে তুলোধুনো করেছে পাকিস্তান বোলিং। শ্রীলংকা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে রোহিত, গিল এবং কোহলির উইকেট দ্রুত নিতে হবে। তার পর ব্যাট করবে কে এল রাহুল এবং ঈশান কিষান। দুজনই উঁচু মানের ব্যাটসম্যান। আছেও ভালো ফর্মে। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে দলের হাল ধরার সক্ষমতা আছে. চৌকষ ক্রিকেটার হার্দিক পান্ডিয়া এমনকি রবীন্দ্র জাদেজা ম্যাচের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিতে পারে। ভারত ১-৯ পর্যন্ত ব্যাটিং গভীরতা আছে. কিন্তু এই বাটিংও মড়ক ধরতে পারে। শ্রীলংকার কিন্তু সক্ষমতা আছে ভারত বাটটিংকে মড়ক ধরানোর। ভারত কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোহলি,পান্ডিয়াদের বিশ্রাম দিয়ে চাঙ্গা হবার সুযোগ দিয়েছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত জসপ্রীত বুমরা, মোহাম্মদ সিরাজ এবং কুলদীপ যাদবকে বিশ্রাম দিয়েছিলো। বুমরা এবং যাদব ভারত বোলিংয়ের তুরুপের তাস। শ্রীলংকার সাফল্য অনেকটা নির্ভর করবে ওরা এই দুজনকে কিভাবে মোকাবিলা করে। অবশ্য রবীন্দ্র জাদেজাও স্পিন ধরা উইকেটে কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে শ্রীলংকার ব্যাটসম্যানদের তুলনামূলক হাক ডাক কম থাকলেও পরিস্থিতি অনুযায়ী মানিয়ে নিয়ে কাৰিকৰী ইনিংস খেলায় কিন্তু দক্ষতা আছে। দেখতে হবে আজ পিথুন নিশাঙ্কার সাথে কুশাল পেরেরা নাকি করুনারত্নে সূচনা করে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে করুনাকে খেলানো হয় নি। আজ কিছু ভারতের বিরুদ্ধে করুনারত্নে, কুশল মেন্ডিস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে লম্বা ইনিংস খেলতে হবে. স্বস্তির কথা সাদীরা সামারাবিক্রমা ধারাবাহিক ভাবে ভালো খেলছে। এমনকি তরুণ দিনুথ ওয়ালালাগে রান পাচ্ছে। ফাইনালের স্নায়ুর চাপ মানিয়ে নিয়ে শ্রীলংকা ভারতের উঁচু মানের বোলিংয়ের মোকাবিলায় ভালো ব্যাটিং করে ২৮০-৩০০ রান করতে পারলে ওদের ভালো বোলিং এবং শ্রেয়তর ফিল্ডিং কিন্তু শিরোপা জয় কঠিন করে দিবে ভারতের জন্য। ভারত কিন্তু ভালো ফিল্ডিং করছে না।
পরিশেষে বলি ক্রিকেট নিয়ে আগাম ভবিষ্যৎ নিশ্চিত ভাবে বলা বোকামি। ফাইনালে অবশ্যই ফেভারিট ভারত কিন্তু শ্রীলংকার জয়ের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।