ইশ সোধির দুর্দান্ত চৌকষ নৈপুণ্যে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ

সালেক সুফী

নিউ জিল্যান্ডের কৃতি লেগ স্পিনার ইশ সোধির চৌকষ নৈপুণ্যে ( ৬/৩৯ এবং ৩৫ রান) বাংলাদেশ বিপর্যস্ত হয়ে ৮৬ রানের বিশাল ব্যাবধানে হেরেছে কাল নিজেদের ডেরা শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। আসন্ন বিশ্বকাপ সামনে রেখে খর্ব শক্তির নিউজিল্যান্ডের কাছেই এখন সিরিজ হারের শঙ্কা। স্মরণীয় যে পূর্ণ শক্তির ব্ল্যাক ক্যাপ দল অতীতে দুবার বাংলাদেশ সফরে ধবল ধোলাই হয়েছিল। সর্বশেষ ২০২২ টি ২০ বিশ্বকাপের প্রাক্কালেও হেরেছিল ৩-২ ব্যাবধানে। চলতি সিরিজের প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যাক্ত হওয়ার পর কাল জিতে সফরকারী দল ১-০ এগিয়ে গেলো। ২৬ তারিখ শেষ ম্যাচে এখন বাংলাদেশ সিরিজ পরাজয়ের শংকায়।  সিরিজ রক্ষা করতে বাংলাদেশকে তৃতীয় ম্যাচটি জিতেই হবে.

এশিয়া কাপ ২০২৩ মিশ্র সাফল্যের পর বাংলাদেশের চলতি সিরিজ থেকে বেশ কিছু অর্জনের ছিল. বিশেষত অসময়ে পরীক্ষা নিরীক্ষায় নিয়োজিত টীম ম্যানেজমেন্ট কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলো।  সেগুলো সমাধানের কিছু ইঙ্গিত মিলেছে। কিন্তু দলের শোচনীয় ব্যাটিং ব্যার্থতায় ৪১.১ ওভারে ১৬৮ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ হতাশ করেছে ভক্ত অনুরাগী সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে। ঘরের মাঠের চির চেনা পরিবেশে ইশ সোধির কাছেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। ধীর ,নিচু উইকেটে লেগ স্পিন আর গুগলির সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাটিং।  অর্জন শুধুমাত্র বেশ কিছু দিন পর খেলতে নামা তামিম ইকবাল এবং দলে ফেরা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নিজেদের চেনানো।

২১ সেপ্টেম্বর রাতের প্রবল বর্ষণের পর কালকের খেলাটিতেও বৃষ্টি শঙ্কা ছিল. সৌভাগ্য বৃষ্টি কাল বাদ সাধে নি. আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল ,উইকেটে সবুজ ঘাস ছিল।  কিছু বাউন্স থাকলেও এমন কোনো কঠিন ছিল না মানিয়ে নিয়ে ব্যাটিং করায়।  সফরকারী দল অপরিবর্তিত থাকলেও বাংলাদেশ দলে ছিল দুটি পরিবর্তন। তাজিম সাকিব আনফিট থাকায় অভিষেক হলো খালেদ আহমেদের।  উইকেট রক্ষক নুরুল সোহানের স্থানে াণ হলো হাসান মাহমুদকে। খর্ব শক্তির  ব্যাটিং আরো সীমিত হয়েছিল।

টস জয় করে ব্যাটিং করার সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরুতেই মুস্তাফিজের সংহারী মূর্তির সামনে সফরকারী দল সংকটে পড়েছিল। নতুন বলের সুইং এবং উইকেটের বাউন্স কাজে লাগিয়ে শুরুতেই “ফিজ” ফেরালো উইল  ইয়ং (০) আর ফিন অ্যালেন (১২)  কে।  অপরদিকে ভালো বোলিং করে চাপ সৃষ্টি করেছিল হাসান মাহমুদ।  কিছু ওভার পরে আক্রমণে এসেই ভালো সূচনা করা চাদ বয়েসকে (১৪) ফেরালো এই ম্যাচে অভিষিক্ত খালেদ। ৭.৫ ওভারে ৩৬ রানে ৩ উইকেট হারানো নিউ জিলান্ডের পিঠ তখন দেয়ালে থেকে গেছে।  সেই অবস্থান থেকে সংগ্রাম করে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৯৫ রান যুক্ত করলো টম ব্ল্যানডেল (৬৮) এবং হেনরি নিকলস (৪৯) . খালেদের সক্রিয়তায় একসময় মিডল অর্ডার ধসে পড়লেও শেষ দিকে ইশ সোধি (৩৫) , কোল মাকন্চি (২০ ) এবং কাইল জেমাইসন (২০) ঘুরে দাঁড়ানোয় ২৫৪ রানের ভালো পুঁজি পেলো ব্ল্যাক কাপস।  বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক রাঙিয়েছে খালেদ ( ৩/৫০ ) . ভালো বোলিং করেছে শেখ মাহেদী (৩/৪৩) . মুস্তাফিজের ( ২/৫৩) কথা আগেই লিখেছি।

এই ম্যাচটি অনেকটাই ছিল তামিম এবং বিশেষ করে অনেক দিন পর খেলতে নাম মাহমুদুল্লাহকে পরখ করার।  সূচনায় লিটন আবারো নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে বার্থ হলো. আরো বার্থ হলো সৌম্য সরকারকে নিয়ে টিম মানাজেমেন্টের পরীক্ষা।  লিটন জামাইসনের বাউন্সারে কুপোকাত হলেও সৌম্য এবং তাওহীদ হৃদয় বিভ্রান্ত হলো ইশ সৌদির স্পিনে। মাঝে তরুণ তানজিদ তামিম সংক্ষিপ্ত সময় তামিম ইকবালকে সঙ্গে দিলেও সামাল দিতে পারে নি ইশ সোধিকে। ৭০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর দীর্ঘ দিন পর জুটি বাধলো বাংলাদেশকে অনেক ম্যাচে জয় এনে দেয়া তামিম এবং রিয়াদ।  ভালো খেলতে থাকা তামিম (৪৪) সৌদির লেগ স্টাম্পের বাইরের বল গ্লান্স করার প্রয়াসে উইকেট রক্ষকের হাতে ধরা পড়ায় বাংলাদেশ ইনিংস (৫/৯২) পড়লো সংকটে। রিয়াদের  জন্য পরিচিত পরিস্থিতি। বহুবার রিয়াদ নীরব ঘাতক হয়ে লেজের সারির ব্যাটসম্যানদের নিয়ে বাংলাদেশকে জয় উপহার দিয়েছে। কাল শুরু করেছিল ভালো। ওকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মনে হচ্ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের লেট্ মিডল অর্ডার এবং লেজ ইদানিং অনেক বেশি নড়বড়ে আস্থা হীন।  কাল আবার নুরুল সোহানের স্থানে বাড়তি বলার নিয়ে ব্যাটিং শক্তি আরো খর্ব করা হয়েছিল। মাহমুদুল্লাহ নিজেও ৪ টি চার একটি ছক্কায় ৪৯ রান করার পর পার্ট টাইম বোলার কোল মাকঞ্চির স্ট্যাম্পের বাইরের বল পুল করতে চেষ্টা করে উইকেট বিলিয়ে দিলো। ধসে পড়লো বাংলাদেশ ইনিংস ১৬৮ রানে। আরো একবার বাংলাদেশ ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে বার্থ হলো. ফলশ্রুতি ৮৬ রানের বিশাল পরাজয়। জানিনা এই ম্যাচ থেকে টিম মানাজেমেন্টের সব প্রশ্নের জবাব মিললো কিনা? তবে সাকিব এশিয়া কাপে বলেছিলো রিয়েলিটি চেক. লেগ স্পিনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের আনাড়িপনা আবারো রিয়ালিটি চেক হলো।

সফরকারী নিউজিল্যান্ডকে অভিনন্দন। ওদের সীমিত মিশনে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকা একমাত্র ফিন আলান ছাড়া সবাই পরিবেশ এবং উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। দেখা যাক শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ কিভাবে ঘুরে দাঁড়ায়? ইশ সোধি বিশ্বকাপে ব্ল্যাক ক্যাপসদের তুরুপের তাস হবে সন্দেহ নেই।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twenty + two =