৭ লালন গবেষক-সাধক পেলেন সম্মাননা

মেঘযুক্ত আকাশে সূর্যটা ডোবার পর ভাবসাগরে ডুব দিলেন লালন সাঁইজির ভক্তরা। গভীর তত্ত্বকথা আর মন আকুল করা সুরে মন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলেন চারপাশ। শ্বেতবসনের সাজ, আর হাতে একতারা উঁচিয়ে সাঁইজির বাণীতে শারদীয় সন্ধ্যাকে উপভোগ্য করে তোলেন সাধকরা। জমে ওঠে লালন ফকিরের ১৩১তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির ‘লালন স্মরণোৎসব’ ও ‘সাধুমেলা’র আসর।

পড়ন্ত বিকেলে সুরের বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ভাবের জগতে যখন দুলতে থাকেন শ্রোতারা, তখনই শরতের অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি বাগড়া দেয় আসরে। ক্ষণিকের জন্য ছেদ ঘটে মনোসংযোগে। পরে শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে শুরু হয় সাঁইজির কীর্তন। চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।

এর আগে লালন ফকিরের তিরোধান দিবস উপলক্ষে সাতজন লালন গবেষক ও সাধককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। লালন গবেষণার জন্য সম্মাননা দেওয়া হয় অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী এবং অধ্যাপক ড. শক্তিনাথ ঝাঁকে (ভারত)। লালন সাধনায় সম্মাননা পান পার্বতী দাস বাউল (ভারত), ফকির মোহাম্মদ আলী শাহ (কুষ্টিয়া), ফকির আজমল শাহ্‌ (ফরিদপুর), নিজাম উদ্দিন লালনী (মাগুরা), সুরবালা রায় (ঠাকুরগাঁও)। সম্মাননা স্মারক হিসেবে প্রত্যেককে দেওয়া হয় একটি করে ক্রেষ্ট, স্মারকপত্র ও ২৫ হাজার টাকা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব মো. আছাদুজ্জামান। আলোচনা করেন ফকির নহীর শাহ্‌ ও দেবোরাহ জান্নাত।

বক্তারা বলেন, ফকির লালন সাঁইজির অবদান মূল্যায়ন এবং জাতীয় পর্যায়ে এ মহৎ পদকর্তার সংগীত ভান্ডারকে আরও জনপ্রিয় ও লোকগ্রাহ্য করে। সাঁইজি আজীবন মানবতা ও অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেছেন। সব ভেদাভেদ ভুলে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাঁইজির আদর্শ অনুসরণ করে চললে সহিংসতা থাকবে না। সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্র গঠিত হবে।

‘সুইজারল্যান্ড কর্নার’:সুইজারল্যান্ডের সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা সমাহারে জাতীয় জাদুঘরের বিশ্বসভ্যতা গ্যালারিতে চালু হয়েছে ‘সুইজারল্যান্ড কর্নার’। এতে দেশটির ভূদৃশ্য, রন্ধন ঐতিহ্য, নকশার ঐতিহ্য, বয়ন শিল্প, গরুর ঘণ্টা বাজানোসহ বিভিন্ন বিষয়ের শতাধিক সংগ্রহ রয়েছে।

গতকাল শনিবার এই কর্নারটির উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান ও বেসরকারি সংগঠন ‘ফ্রেন্ডশিপ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রুনা খান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুইজারল্যান্ড একটি চমৎকার, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ দেশ। তারা কোনো দেশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় না ও কোনো সামরিক জোটেরও সদস্য নয়। বাংলাদেশও সে রকম একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ দেশ। আশা করছি, দুই দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত আরও প্রশস্ত হবে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় জাদুঘরের সচিব গাজী ওয়ালিউল হক, প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপসচিব) মো. জাহিদুল ইসলামসহ সুইজারল্যান্ড দূতাবাস ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জাদুঘরের বিশ্বসভ্যতা গ্যালারিতে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও সুইজারল্যান্ড এই চারটি দেশের কর্নার রয়েছে। সুইজারল্যান্ড কর্নারটি ২০০৬ সালে স্থাপনের পর নতুন কয়েকটি নিদর্শন যুক্ত করার মাধ্যমে এটিকে বর্তমানে নতুনরূপ সাজানো হলো।

বঙ্গবন্ধু লোকশিল্প প্রদর্শনী :বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরে শুরু হয়েছে দশ দিনের ‘বঙ্গবন্ধু লোকশিল্প প্রদর্শনী’। জাদুঘরের জাতিতত্ত্ব ও অলংকরণ শিল্পকলা বিভাগের উদ্যোগে গতকাল প্রতিষ্ঠানটির নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে শুরু হয় এ প্রদর্শনী। উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড। পাটশিল্প, সূচিশিল্প, ফোক পেইন্ট, টেরাকোটা ও মাটি, রিকশা পেইন্টিং, নকশিকাঁথা, পাটিশিল্প, বাঁশ ও বেতশিল্প, ধাতব শিল্প, শোলাশিল্প, সিনেমা ব্যনার, কাঠের শিল্পের নানা কর্ম তুলে ধরা হয়েছে। ২৬ অক্টোবর শেষ হবে এই প্রদর্শনী।

প্রদর্শনীর উদ্বোধন শেষে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘লোকগানে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে এক মনোজ্ঞ সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সংগীতানুষ্ঠানে লোকগান পরিবেশন করেন আবদুল কুদ্দুস বয়াতি, শাহানাজ বাবু, গরীব মোক্তার ও পূর্ণচন্দ্র রায়।

সমকাল

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

sixteen − five =