সংবাদপত্র শিল্পের সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে: তথ্যমন্ত্রী

সংবাদপত্র শিল্পের সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ক্রোড়পত্রের বকেয়া পরিশোধে দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি নির্বাচনকে সামনে গণমাধ্যমের সহায়তা কামনা করে বলেন, বর্তমান সরকার সব সময় সাংবাদিকবান্ধব এবং সাংবাদিকদের কল্যাণে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।

গতকাল বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চলমান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরাম নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভুঁইফোড় সংবাদপত্র এবং আইপি টিভির বন্ধে তথ্য মন্ত্রনালয় থেকে ইতিমধ্যেই কার্যকর ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। তিনি সম্পাদক ফোরামের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ডিসিদের পত্রিকার ডিকলারেশনের ক্ষমতা দেওয়ায় জেলায় জেলায় অসাংবাদিক ও অযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে পত্রিকার মালিকানা যাচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে ভুঁইফোড় সাংবাদিক। সেখানে নেই কোনো অফিস, নেই ওয়েজ বোর্ড, নেই সাংবাদিকের মান এবং পত্রিকারও কোনো মান নেই। নিবন্ধন আইন বিশ্লেষণ করে বিষয়টি তিনি গুরুত্বসহকারে দেখবেন বলে জানান।

বৈঠকে বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের পক্ষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফোরামের আহবায়ক দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতন। ফোরামের পক্ষে দাবি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন সম্পাদক ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা, ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন, আমাদের নতুন সময়ের এমিরিটাস এডিটর নাইমুল ইসলাম খান, ডেইলি পিপলস লাইফ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভুইয়া, বাংলাদেশ পোস্ট সম্পাদক শরিফ সাহাবুদ্দিন, দৈনিক ভোরের ডাক সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, ফোরামের সদস্য সচিব, দৈনিক আজকালের খবর সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার, দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রিমন মাহফুজ, দৈনিক বাংলাদেশের আলোর সম্পাদক মফিজুর রহমান খান বাবু, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শামীম সিদ্দিকী, দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের মাহবুবুর রহমান, সিটিজেন টাইমস সম্পাদক নাজমুল আলম তৌফিক, সাউথ এশিয়ান টাইমস সম্পাদক দীপক আচার্য, দৈনিক ভোরের আকাশের উপদেষ্টা সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রমুখ।

বৈঠকে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি কারো বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলে, তিনি যদি আওয়ামী লীগ নেতাও হন, তবুও তাকে গ্রেপ্তার করা হবে, এমনটিই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

দুটি মামলায় পরোয়ানা থাকায় বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন এ্যানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাকে ডাকাতের মতো ধরে নেওয়া হয়েছে এবং সরকার একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি মহাসচিব কি বলতে চাচ্ছেন যে, পরোয়ানা থাকলেও তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না? পরোয়ানা থাকলে তো আওয়ামী লীগ নেতাও গ্রেপ্তার হবেন। কারও বিরুদ্ধে ভাঙচুর কিংবা অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আছে, তাকে তো গ্রেপ্তার করা হবে, এটাই স্বাভাবিক। কাজেই তারা (বিএনপি নেতারা) যে আইন ও বিচার মানেন না, তারই প্রমাণ হচ্ছে ফখরুলের এই বক্তব্য।

হাইকোর্টে অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমানের জামিন শুনানিতে একজন বিচারপতির বক্তব্য নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। বিচারকের ‘দেশকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সংবাদটি কিছু পত্রপত্রিকায় দেখেছি এবং কিছু টেলিভিশেনেও এ সংবাদটি প্রচারিত হয়েছে। আমি একজন আইনজীবী পরিবারের সদস্য। সেজন্য মাঝেমধ্যে আইনজ্ঞদের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাদের মতে এটি কোনো বিচারিক ভাষা বা বিচারকের ভাষা হতে পারে না। বিচারকার্য চলাকালে বিচারপতি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, সেটি অবিচারক সুলভ ভাষা বলে আইনজ্ঞরা মতপ্রকাশ করেছেন। যেহেতু বিষয়টি বিচারালয়ের, সেজন্য বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে এসেছে। বিষয়টি প্রধান বিচারপতি দেখবেন। তিনি যদি মনে করেন, এটা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠাবেন, তাহলে সেটা তার এখতিয়ার।

আইএমএফ এক গবেষণাপত্রে জানিয়েছে, সারা বিশ্বে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ হবে, তখনও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হবে এবং এটা বেড়ে ২০২৮ সালের মধ্যে ৭ শতাংশ হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী মন্দা চলছে। এর মধ্যেও আমাদের প্রবৃদ্ধি বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো। এখন নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে অনেক কথা হয়। পৃথিবীর সব দেশে নিত্যপণ্যের দাম বেশি। নিত্যপণ্যের দাম বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। সরকার চেষ্টা করছে টিসিবির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সহায়তা করার জন্য, যে কারণে বাংলাদেশে কোনো হাহাকার নেই। নিত্যপণ্যের ঘাটতি ঘটেনি। ইউরোপ আমেরিকায় নিত্যপণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর সুপারমলে এক লিটারের বেশি তেল কিনতে দেওয়া হয়নি। ছয়টির বেশি ডিম কিনতে দেওয়া হয়নি। আমাদের দেশে সে ধরনের পরিস্থিতি হয়নি। করোনার সময় ২০টি দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তিন নম্বরে।

তিনি বলেন, এখনও বিশ্বময় প্রবৃদ্ধি নিচে। সেখানে বিশ্বের গড় প্রবৃদ্ধির থেকে আমাদের প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণেরও বেশি। এটি আইএসএফ এর প্রতিবেদন। এখন আমি অপেক্ষায় আছি এই প্রতিবেদনের ওপর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব কি বলবেন। বা বিএনপির নেতারা কি বলবেন সেটা শোনার অপেক্ষায় আছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

20 + 2 =