আজ আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে পাক – ভারত ক্রিকেট যুদ্ধ

সালেক সুফী

অনেক জল্পনা কল্পনার অবকাশ ঘটিয়ে আজ ১৪ অক্টোবর ভারতের গুজরাটে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বহুল কাঙ্খিত পাক-ভারত মহাযুদ্ধ।  আজ থেকে বহু বছর আগে দূরপ্রাচ্যের উজবেকিস্তানের সমরকন্দ থেকে জহিরউদ্দিন শাহ বাবর এসে ভারত জয় করে মোঘল রাজ্ কায়েম করেছিল। আজ আরো এক বাবর আজমের নেতৃত্বে শক্তিশালী পাকিস্তান বাহিনী লড়াই করবে ক্রিকেট যুদ্ধ বিশ্ব ক্রিকেট মোড়ল তুখোড় ভারত দলের বিরুদ্ধে।

বিশ্ব কাপ ক্রিকেটে আগের সাত বারের মোকাবিলায় কিন্তু ভারত জিতেছে প্রতিবার। তবে টি ২০ বিশ্বকাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তান জয়ী হয়েছে। বিশ্বসেরা বোলার ব্যাটসম্যানদের সমন্বয়ে দুটি সুসমন্বিত দল এবারে বিশ্বকাপে পর পর দুটি ম্যাচ জিতে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। দুই জনপ্রিয় এই দুই দলের খেলা আজ নানা মাধ্যমে বিশ্বজোড়া কোটি কোটি মানুষ উপভোগ করবে। ১ লক্ষ ২০ হাজার দর্শক ধারণক্ষম স্টেডিয়ামের টিকেট নিয়ে চারিদিকে হাহা কার।  আহমেদাবাদের সব হোটেল, রিসোর্ট নাকি বহু আগেই বুকড হয়ে গাছে। এমনকি হাসপাতালগুলোতেও জরুরি চিকিসৎসার নামে অনেকে আবাসন সুবিধা আগাম বুকিং দিয়েছে। সচ্ছল পরিবারের অনেকে প্লেন  চার্টার করেছে আহমেদাবাদে যাওয়া আসার জন্য।

রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে দীর্ঘদিন দুটি দেশ দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ খেলে না। আইপিএলে পাকিস্তানী খেলোয়াড় বা পিসিএলে ভারতীয় খেলোয়াড়  নেই। অথচ দুই দেশেই অপর দেশের ক্রিকেট তারকাদের আছে অসামান্য জনপ্রিয়তা।  এবারে হায়দ্রাবাদে পাকিস্তান দল ইতিমধ্যেই অনুভব করেছে। আজ কিন্তু বাবর বাহিনীকে নিলে নীলাকার গ্যালারির মুহুর্মুহু ধোনি তোলা ভারতীয় সমর্থকদের সামনে খেলতে হবে। শুনছি অবশেষে পিসিবি প্রধান সহ ৬০ জন পাকিস্তানী সাংবাদিককে ভিসা দেয়া হয়েছে।

ভারত কিন্তু এবারের টুর্নামেন্ট জয়ের জন্য অত্যন্ত সুসমন্বিত তুখোড় দল নিয়ে প্রস্তুত হয়ে আছে, নিজেদের মাঠ, প্রতিটি ঘাসের সঙ্গে প্রতিটি  পরিচিত। আইসিসির প্রধান মোড়ল। ভেন্যু নির্ধারণ, উইকেট তৈরিতেও প্রভাব থাকবে সেটি অনুমেয়। দেখে নেয়া যাক সম্ভাব্য একাদশ

ভারত : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক) , ঈশান কিষান/সুবমান গিল, বিরাট কোহলি, কে এল রাহুল, শ্রেয়াস আয়ার, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্র অশ্বিন, কুলদীপ যাদব, মোহাম্মদ সিরাজ এবং জাসপ্রিত বুমরা।

পাকিস্তান : আব্দুল্লাহ শফিক, ইমাম উল হক, বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান, সাউদ শাকিল, ইফতিখার আহমেদ, শাদাব খান, মোহাম্মদ নওয়াজ / উসামা মীর, হাসান আলী, হারিস রউফ এবং শাহীন শাহ আফ্রিদি।

সাম্প্রতিক সময়ে দুটি দল শ্রীলংকায় দুবার এশিয়া কাপে মুখোমুখি হয়েছে, বৃষ্টি বিঘ্নিত প্রথম ম্যাচটিতে পাকিস্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়লেও অন্য ম্যাচটিতে ভারতের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। তবে আজ ভিন্ন প্রেক্ষাপট, ভিন্ন পরিবেশ।  যদিও তুখোড় পেসার নাসিম শাহ ফিট না থাকায় পাকিস্তান বোলিং কিছুটা শক্তি হারিয়েছে। তবুও শাহীন আফ্রিদি ,হারিস রউফ, হাসান আলীর সঙ্গে আজ মূল লড়াই রোহিত -কোহলি -রাহুলদের। একই ভাবে বুমরা -সিরাজ -কুলদীপ -জাদেজাদের সামাল দিতে হবে বাবার -রিজওয়ান -শফিক -সাউদ সমন্বয়ে গড়া পাকিস্তান ব্যাটিং। ভারত কিন্তু অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তানের সঙ্গে দাপুটে জয় পেয়ে উড়ছে। পাকিস্তানও কিন্তু সহজ জয় পেয়েছে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে।  সর্বোচ্চ রান তাড়া করার মাইলফলক স্থাপন করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে শ্রীলংকার কাছ থেকে। আজ কিন্তু ময়দানী লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে।

দেখা যাক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকে নাকি বাবর বাহিনী ভারত জয় করে নতুন ইতিহাস রচনা করে। যাই হক যে দল জয়ী হোক চলতি বিশ্ব কাপে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় হবে।

অনেক বিশ্লেষক বুমরা -সিরাজ -কুলদীপ -জাদেজার সমন্বিত বোলিংকে এগিয়ে রাখলেও শাহীন -রউফ -হাসান আলী কিন্তু ভারত বাটিংকে চূর্ণ করে দিতেও পারে। টুর্নামেন্টে এযাবৎ নিষ্প্রভ থাকা শাহিন আফ্রিদি এবং বাবর আজম আজ জ্বলে উঠলে বিস্মিত হবো না। রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি ইতিমধ্যেই জ্বলন্ত আগ্নেয় গিরি হয়েই জ্বলছে।  হয়তো আজ এদের বাইরে নতুন কেউ তারকা বনে যাবে।

আমরা নিরপেক্ষ ক্রিকেট অনুরাগী হিসাবে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই দেখতে চাই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

7 − seven =