সালেক সুফী
কাল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীর অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ শিরোপাধারী শক্তিশালী ইংল্যান্ড দলকে স্পিন জাদুতে ধরাশায়ী করে চমক দিয়েছে আফগানিস্তান। ৬৯ রানের ঐতিহাসিক এই জয়ে বিশ্বকাপ ২০২৩ সেমি ফাইনাল উন্নীত হওয়া তথা শিরোপা ধরে রাখা এখন ইংল্যান্ড দলের জন্য কঠিন এবং অনিশ্চিত হয়ে গেলো।
টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করা আফগানিস্তান ২৮৪ রানের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক স্কোর গড়েছিল। উইকেটে স্পিন ছিল, বল পড়ে ধীর গতিতে আসছিলো। এহেন উইকেটে ২৮৫ রান তারা করে জয় ইংল্যান্ডের মত তুখোড় ব্যাটিং সমৃদ্ধ দলের জন্য ছিল বিশাল চ্যালেঞ্জ। পারেনি ইংল্যান্ড।
মুজিব, রশিদ, নবী স্পিন ত্রয়ীর মোহনীয় স্পিন জাদুতে ধরা পড়ে ২১৫ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। আফগান ঐতিহাসিক জয় পায় ৬৯ রানের। বিশ্বকাপ ২০২৩ উল্কা পতন। তিন খেলায় দ্বিতীয় পরাজয় ইংল্যান্ডের। সেমি ফাইনালে উন্নীত হওয়াই এখন অনিশ্চিত হয়ে গেলো ২০১৯ বিশ্বকাপ জয়ী ইংল্যান্ডের। তিন ম্যাচে প্রথম জয় আফগানিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে লাল হরফে লেখা থাকবে।
এবারের বিশ্বকাপে যারা ধরেই নিয়েছিল আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সহজ জয় তাদের টনক নড়বে। যেমন ভেবেছিলো ইংল্যান্ড। টস জয়ী হয়ে আফগানিস্তানকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানানো সঠিক হয়নি।
সূচনায় ইংল্যান্ডের পেস আক্রমণকে তুলোধুনা করে উড়ন্ত সূচনা করেছিল আফগান জুটি রাহমানুল্লাহ গুরবাজ (৮০) এবং ইব্রাহিম জাদরান (২৮)। ১৬.৪ ওভারেই এসেছিলো ১১৪ রান। ওকস, টপলি, কুরানদের বেধড়ক পেটালো গুড়বাজ। উইকেটে কিন্তু পেস বোলারদের জন্য সহায়তা ছিল না।
গুড়বাজ মারকাটারি ব্যাটিং করে ৮ চার আর ৪ ছয়ে ৫৭ বলে করেছিল ৮০। লেগ স্পিনার আদিল রাশিদ এসে ইব্রাহিম জাদরানকে ফিরিয়ে আফগান ঝড় থামিয়েছিলো। রহমত শাহ উইকেটে আশা মাত্রই বিদায় নিয়েছিল আদিল রশিদের বলে। এর পরেই দুরন্ত গতিতে আগুয়ান গুরবাজ রান আউট হলে আফগান বাটটিংয়ে ছন্দ পতন হয়েছিল।
কিন্তু এই সময়ে বীরের মত বুক চিতিয়ে লড়াই করলো নাজিবুল্লাহ জাদরানের বদলি হয়ে কাল খেলতে নামা ইকরাম আলিখেল (৫৮)। সঙ্গ দিল মুজিব (২৮) আর রাশিদ খান (২৩)। ৪৯.৫ ওভারে ২৮৪ রানে শেষ হলো আফগান ইনিংস।
ইংল্যান্ডের হয়ে লেগ স্পিনার আদিল রাশিদ (৩/৪২) ছিল সফল বলার। পেস বলার ওকস, টপলি, কুরান বা উড কেউ সুবিধা করতে পারেনি। বাধ্য হয়ে বাটলারকে তাই রুট, লিভিংস্টোনের মত অনিয়মিত স্পিনারদের দ্বারস্ত হতে হয়েছিল।
স্পিন ধরা উইকেটে আফগানিস্তানের তিন বিশ্বমানের স্পিনারদের মোকাবিলা করে আফগান বাধা পেরুনো সহজ ছিল না। প্রয়োজন ছিল ভালো সূচনা। শুরুতেই ফজল হক ফারুকী এলবিডব্লু ফাঁদে জড়িয়ে বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে দিয়ে জটিল করে দিলো সমীকরণ।
কিছু পরেই ইংল্যান্ড ব্যাটিং স্তম্ভ জো রুটের উইকেট তুলে নিয়ে মরণঘাতী আঘাত হানলো মুজিব। রশিদ-নবী-মুজিবের ত্রিমুখী আক্রমনের মোকাবেলায় ইংল্যান্ডের সহজাত বাজবল ক্রিকেট দূরের কথা স্বাভাবিক ব্যাটিং করতে পারেনি।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয় ৪০.৩ ওভারেই ২১৫ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড ব্যাটিং। মুজিব (৩/৫১), রশিদ (৩/৩৭) এবং নবী ( ২/১৬) ধস নামে ইংল্যান্ড বাটিংয়ে। একমাত্র হ্যারি ব্রুক (৬৬) লড়াই করেছিল। শুরুতে কিছুটা চেষ্টা করেছিল ডেভিড মালান (৩২)।
৬৯ রানের ঐতিহাসিক জয়ে অনেক হিসাব নিকাশ পাল্টে দিলো আফগানিস্তান। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মোকাবেলায় একাধিক দলের সঙ্গে পা ফস্কালে শূন্য হাতে ফিরতে হবে ইংল্যান্ডকে।
জমে উঠেছে বিশ্বকাপ। ক্রিকেট জয়ী হয়েছে কাল। অভিনন্দন বীরের দেশ আফগানিস্তানকে।
সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক