ওলন্দাজ মায়াজালে ধরা পড়লো প্রোটিয়া

সালেক সুফী

বিশ্বকাপ ২০২৩ আফগানিস্তানের কাছে শিরোপাধারী ইংল্যান্ডের বিস্ময়কর পরাজয়ের পর কাল ভূপাতিত হলো উড়তে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা। টিউলিপ ফুলের দেশ আইসিসি সহযোগী দেশ নেদারল্যান্ডস চমক সৃষ্টি করে ৩৮ রানে হারালো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ৪২৮/৫ করে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ড গড়েছে।  প্রথম বারের মত একই ইনিংসে তিন তিনটি শত রান করার মাইলফলক সহ এইডেন মার্করাম ৪৯ বলে শতরান করার গৌরব অর্জন করেছে। দ্বিতীয় ম্যাচেও শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে ১৩৪ রানে হারিয়ে রীতিমত উড়ছিল প্রোটিয়া।  শংকা ছিল বরাবরের মত চোক করবে কিনা। কাল হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় আকাশে মেঘ জমেছিলো।  খেলা শুরুর আগ মুহূর্তে বৃষ্টি শুরু হয়ে টস পিছিয়ে দিয়েছিলো। কিছু বিরতির পর টস হলো। আবার বৃষ্টি।  বেশ কিছু সময় বিরতির পর ৪৩ ওভারে সীমিত করে খেলা শুরু হলো।  টস জয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা সঙ্গত কারণে ডাচদের ব্যাটিং করতে পাঠিয়েছিল। হারাবার কিছু ছিলোনা নেদারল্যান্ডের।  বাতাসে কিন্তু অঘটন ঘটার পূর্বাভাস ছিল. ভয়ডর হীন ক্রিকেট খেলে ৪৫ ওভারে ২৪৫/৮ প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক স্কোর গড়লো নেদারল্যাড। জবাবে ব্যাট করতে এসে আগ্রাসী বিচক্ষণ বোলিং এবং তুখোড় ফিল্ডিং মোকাবেলায় ২০৭ রানে গুটিয়ে গেলো দক্ষিণ আফ্রিকা। চোকার উপাধী বজায় রেখে আবারো চোক করলো দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপ ২০২৩ শিরোপা জয়ের যুদ্ধ জমে ক্ষীর।  শত বার শুনা ” ক্রিকেট গৌরবোজ্জ্বল অনিশ্চয়তার খেলা ” আবারো শত মুখে হলো উচ্চারিত।

এমনিতে ধর্মশালা উইকেটে বাউন্স আছে।  তদুপরি মেঘে ঢাকা আকাশ।  স্বাভাবিক ভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তিশালী পেস বোলাররা ( রাবাদা , এনজিডি) নেদারল্যান্ডস বাটিংয়ে ধস নামবে সেটি প্রত্যাশিত ছিল।  কিন্তু নিজ দেশে এবং প্রতিবেশী ইংল্যান্ডে এমনি পরিবেশে নিয়মিত খেলে ওরা।  দেখুন সাগৰ সমতল থেকে ৩-৪ মিটার নিজে থাকা ডাইক পরিবেষ্টিত নেদারল্যান্ডসের ব্যাটসম্যানরা কাল সাগর পৃষ্ট থেকে সবচেয়ে উপরে থাকা ধর্মশালা স্টেডিয়ামে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে বুক চেতিয়ে ব্যাটিং করলো। এই উইকেটে ২৪৫/৮ বড় সংগ্রহ ছিল. দলনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস ৬৯ বলে ৭৮ রান করে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলো। রোয়েলফ ভেন্ডার মারিউই শেষ দিকে ২৯ এবং আরিয়ান দত্ত অপরাজিত ২৩ রান করে অবদান রাখলো। মার্কো জানসেন (২/২৭) , কাগিসো রাবাদা ( ২/৫৭), লুইজি এনজিডি (২/৫৭) ভালো বোলিং করলেও ডাচদের স্বল্প পুঁজিতে বেঁধে রাখতে পারেনি।

গতকালেরমাঠের উইকেট ,পরিবেশ এবং পরিস্থিতির বিবেচনায় ৪৩ ওভারে ২৪৬ তাড়া করে জয় সহজ ছিল না. তদুপরি কোনো কিছু হারানোর ভয় ছিল না ডাচদের।  শুরু থেকেই উইকেট অনুযায়ী যথাযথ বোলিং এবং তুখোড় ফিল্ডিং করে টুর্নামেন্টে উড়তে থাকা কুইন্টন ডি কক (২০) ,টেম্বা বাভুমা (১৬) , রাসি ভান দার ডুসেন (৪) এবং এইডেন মারকরাম (১) উইকেট গুলো ঝট পট তুলে নিয়ে কোনঠাসা করে ফেলে প্রোটিয়াদের।  ১০৯ রানে ৬ উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ দিকে ডেভিড মিলার ( ৪৩) ,কেশব মহারাজ (৪০) , হেনসন ক্লাসেন (২৮) রান করলেও সামাল দেয়া যায় নি. ৪২.৫ ওভারে ২০৭ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পরাজয় ৩৮ রানে।  ঐতিহাসিক এই জয়ে নেদারল্যান্ড প্রমান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে ,আয়ারল্যান্ডকে টপকে বিশ্বকাপে আসা দলটি শুধু সংখ্যা পুরণ  করেছে না. ওদের দিনে বড় দল গুলোকে হারানোর সামর্থ্য আছে ওদের। লোগান ভ্যান বেক (৩/৬০) , রোয়েলফ ভান দার মারউই (২/৩৪) , বাস ডি লিদি (২/৩৬) এবং পল ভান মিকরেন ( ২/৪০) চার জন সম্মিলিত ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সীমার মাঝে বেঁধে রেখে জয় নিশ্চিত করে. তিন রাউন্ড শেষে স্বাগতিক ভারত এবং কিউই পাখির দেশ নিউ জিলণ্ড ছাড়া কেউ আর অজেয় নেই. শেষ চার জনের মধ্যে থাকার লড়াই জমে উঠেছে।  ইংল্যান্ড , অস্ট্রেলিয়া ,পাকিস্তান তিনটি দলের প্রতিটির সামনে সুযোগ ভারত, নিউজিল্যান্ড ,দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শেষ চারে পৌঁছানোর. অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান আরো কিছু অপ্রত্যাশিত ফলাফল হতে পারে অবশিষ্ট ম্যাচ গুলোতে।  প্রতিটি ম্যাচ এখন গুরুত্বপূর্ণ।  যে কোনো দল ওপর দলকে হারিয়ে দিতে পারে।  এমনি না হলে বিশ্বকাপ ?

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

sixteen + sixteen =