সালেক সুফী
কাল ছিল ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া এবং ১৯৯২ এমসিজি থেকে শিরোপাজয়ী পাকিস্তানের মুখোমুখী লড়াই। ২০২৩ বিশ্বকাপে টিকে থাকার জন্য ম্যাচটি ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। দুরন্ত দুর্বার ওয়ার্নার মার্শের খুনে ব্যাটিং দিয়ে পর্যুদস্ত করলো ক্যাঙ্গারু বাহিনী। টস জয়ী বাবর আজম কি ভেবে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিং করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল জানিনা। জয় ক্ষুধার্ত অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার যুগল বেধড়ক পেটালো পাকিস্তানী বোলারদের।
ওয়ার্নার-মার্শ প্রথম উইকেট জুটিতে টর্নেডো গতিতে যুক্ত ৩৩.৫ ওভারে যুক্ত হলো ২৫৯ রান। সর্বসাকুল্যে ৫০ ওভারে ৩৬৭/৯ রানের বিশাল স্কোর। জবাবে একটা পর্যায় পর্যন্ত চোখে চোখ রেখেই লড়াই করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু ৩৬৮ বিশাল রান চূড়া পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ৪৫.৩ ওভারে ৩০৫ রানে সাঙ্গ হয় পাকিস্তান ইনিংস। ৬২ রানে ম্যাচ জিতে ভালোভাবে কক্ষপথে থাকে অস্ট্রেলিয়া। চার ম্যাচে ২ জয় ২ পরাজয় নিয়ে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ স্বপ্নে দারুন ঝাঁকুনি লাগে।
বিশ্বকাপ ২০২৩ চার ম্যাচে চারটি জয় নিয়ে সেমি ফাইনাল লড়াইয়ে অনেকটাই এগিয়ে স্বাগতিক ভারত আর দক্ষিণ গোলার্ধের প্রান্তিক দেশ নিউ জিল্যান্ড। ওদের সাথী হওয়ার যুদ্ধে এখন দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্তান। এখন থেকে প্রতিটি ম্যাচ চারটি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অচেনা বিবর্ণ মনে হয়েছিল। কাল কিন্তু শুরু থেকেই ক্রিকেট দেখলো খাঁটি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের দুরন্ত রূপ।
ওয়ার্নার, মার্শ পরিকল্পনা করেই পাকিস্তানী বোলারদের বেধড়ক পিটিয়েছে। পাকিস্তানী বোলারদের যেমন লাইন লেংথ নিশানা হারা ছিল, তেমনি ফিল্ডাররা আনাড়ির মত ক্যাচ ফসকিয়েছে অবিরত। ওয়ার্নার-মার্শ জুটির আগুনে ব্যাটিং পুড়িয়ে ছারখার করে দিলো ২৫৯ রানের আকাশ ছোয়া ওপেনিং পার্টনারশিপ করে। হতে পারতো কাল বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ স্কোর। সৌভাগ্য পাকিস্তানের। ১০৮ বলে ১২১ রান করা মার্শ বিদায় নেওয়ার পর ওয়ার্নারকে কেউ সঙ্গ দিতে পারেনি।
পাকিস্তানের ফ্যাক্টর শাহীন আফ্রিদি (৫/৫৯) নিজমূর্তিতে সক্রিয় হয়ে অস্ট্রেলিয়া দলের ইনিংস ধরা ছোয়ার মাঝে ৩৬৭/৯ সীমিত রাখলো। ওয়ার্নার এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত স্কোর ১২৪ বলে ১৬৩ করার পথে ১৪টি চার এবং ৯টি ছক্কা মেরেছে। মার্শের ১০৮ বলে করা ১২১ রানের ইনিংসে ছিল ১০টি চার এবং ৯টি ছক্কা। ওদের দুইজন ছাড়া আর কারো উল্লেখ করার মত অবদান না থাকায় দলীয় রান ৪০০ বা তার বেশি হয়নি। পাকিস্তান সহজ কিছু ক্যাচ ফেলে না দিলে হয় খেলাটি আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হত।
পাকিস্তানের জবাবটাও ভালো শুরু হয়েছিল। ইমাম উল হক (৭০) এবং আব্দুল্লাহ শফিক (৬৪) প্রথম উইকেট জুটিতে ১৩৪ রান করে শক্ত প্লাটফর্ম গড়ে তুলেছিল। ওদের একজন ওয়ার্নার বা মার্শের মত বড় শতরান করলে এবং পাকিস্তান ব্যাটিংস্তম্ভ বাবর আজম সুনামের প্রতি সুবিচার করলে পাকিস্তান হয়তো জয়ের পথে যেতে পারতো। পারেনি বাবর, পারেনি পাকিস্তানের মিডল অর্ডার। রিজওয়ান (৪৬), সৌদ শাকিল (৩০), ইফতিখার (২৬) ইনিংসগুলো বড় করতে পারেনি।
এডাম জাম্পা (৪/৫৩), মার্কাস স্তয়নিস (২/৪০ ), পাট কামিন্স (২/৬২) স্পিন-পেস যুগল চাপে পাকিস্তানের ইনিংস গুটিয়ে দেয় ৩০৫ রানে। ফলাফল ৬২ রানে পাকিস্তান জয় অস্ট্রেলিয়ার। মূল ব্যাবধান গড়ে দেয় অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিং। জমে উঠেছে সেমি ফাইনাল লড়াই।
আমি টস জয় করে পাকিস্তানের বোলিং করার সিদ্ধান্ত ভুল কিছু দেখি না। শুরুতে পাকিস্তানী ফিল্ডাররা কয়েকটি লোপ্পা ক্যাচ ফেলে না দিলে অস্ট্রিয়া দলের ইনিংস ধরা ছোয়ার মাঝে সীমিত রাখা যেত। ওয়ার্নার এবং মার্শ ছাড়া আর কেউ কিন্তু কিছু করেনি। পাকিস্তানকে টিকে থাকতে হলে চতুর্থ এবং পঞ্চম বোলারদের অনেক উন্নতি করতে হবে এবং ফিল্ডিং অবশ্যই অনেক ভালো করতে হবে। অস্ট্রেলিয়াকে কিন্তু এখন চির চেনা রূপেই দেখা যাচ্ছে।
সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক