সালেক সুফী
কার্যকরী বোলিং, দুর্দান্ত ব্যাটিং এবং তুখোড় ফিল্ডিং করে কাল ভারতের পুনে মহারাষ্ট্র ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ৭ উইকেটের বিশাল জয় পেলো সাহসী আফগানিস্তান। ওদের আদর করে ক্রিকেট প্রেমিকরা নাম দিয়েছে Blue Tigers . টস জয় করে কাল শ্রীলংকা দলকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। উইকেটে পেসারদের জন্য কিছু সহায়তা ছিল. তাই আগের ম্যাচে অভিষিক্ত বিরল প্রতিভা বাম হাতি রিস্ট স্পিনার নূর আহমেদকে বিশ্রাম দিয়ে দলে ফেরানো হলো বাম হাতি পেসার ফজল হক ফারুকীকে। ফিরেই বাজিমাত। সঠিক লেংথ লাইন বজায় রেখে ৪৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে মুক্ষ ভূমিকা রাখলো শ্রীলঙ্কা দলের ইনিংস ২৪১ রানে সীমিত রাখায়। মামুলি এই টার্গেট অতিক্রম করে হেসে খেলেই ২৪২/৩ করে আফগান বাহিনী। ৭ উইকেটের বিশাল জয়ে আফগানিস্তান এখন সেমী ফাইনালের দুয়ার প্রান্তে।
বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী ১০ দেশের অধিকাংশের মত ক্রিকেট অবকাঠামো নেই যুদ্ধ বিদ্ধস্ত আফগানিস্তানের। ভারতে বা ইউএইতে অনুশীলন করতে হয়। বাংলাদেশের মত ৬০ জন মিডিয়া কর্মী ওদের খেলা প্রচারের জন্য ভিড় করে না। ৯০০ কোটি টাকার সম্পদ নেই ওদের ক্রিকেট বোর্ডের। অথচ দেখুন একের পর এক ইংল্যান্ড, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার মত বিশ্বকাপ জয়ী দলগুলোকে পরাজিত করে ওরা এখন ১০ জাতির বিশ্বকাপে ৫ম স্থানে। ইতিমধ্যে আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিশ্চিত হয়ে গাছে। ভাগ্যের সহায়তা পেলে খেলতেও পারে সেমী ফাইনাল।
ভেবে দেখুন আফগানিস্তান ক্রিকেটাররা ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলংকা বা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক সীমিত সুযোগ সুবিধা পায়। দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ নেই। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ গুলো খেলতে হয় অন্যদেশে। কিন্তু শুধু দেশ প্রেম ,হার না মানা মানসিকতার কারণে ওরা এই বিশ্বকাপে একের পর এক চমক দিচ্ছে।
কাল কিন্তু উইকেটে কিছুটা পেস সহায়তা ছিল. উইকেট দেখে চিনেছিল আফগানিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট। তাই টস জিতে ব্যাটিং করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল শ্রীলংকাকে। আফগান পেসার্স ফজল হক ফারুকী , নাভীন উল হক ,আজমাতুল্লা আমারজাই শুরু থেকেই সঠিক চ্যানেলে বোলিং করে কোনঠাসা করে রাখে লংকান ব্যাটসম্যানদের। পিথুন নিঃশঙ্কা (৪৬), কুশল মেন্ডিস (৩৯), সাদীরা সামারাবিক্রমা (৩৬), মহেশ থাকসিনা (২৯), আঞ্জেলা ম্যাথিউস (২৩), চারিথ আসালংকা ( ২২) উইকেটে স্থিতু হয়েও স্বাধীনতা নিয়ে ব্যাটিং করতে পারেনি। যখনি চড়াও হতে চেষ্টা করেছে আফগানিস্তান ওদের প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়েছে। কাল ফজল হক ফারুকী (৪/৩৪) ছিল অপ্রতিরুদ্ধ। মুজিব (২/৩৫) নিজের মুর্তিতে সক্রিয়। রাশিদ খান, মোহাম্মদ নবি ,আজমাতুল্লাহ আমারজাই সবাই কিপ্টে বোলিং করেছে। শ্রীলংকার ২৪১ রানের পুঁজি ছিল নিতান্তই সামান্য।
জবাবে শুরুতে রামানুল্লাহ গুরবাজ সহসাই শুন্য হাতে ফিরলেও রহমত শাহ (৬২) এবং ইব্রাহিম জাদরান (৩৯) দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৭৩ রানের শক্ত প্লাটফর্ম গড়ে দেয়। সেখানে দাঁড়িয়ে আফগান ক্রিকেটের “হার্দিক পান্ডিয়া” খ্যাত আজমাতুল্লাহ আমারজাই (৭৩*), অধিনায়ক হাসমাতুল্লাহ শাহিদির (৫৮*) সঙ্গে মিলে অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১১১ রান করে ৭ উইকেটের বিশাল জয় এনে দেয় আফগানিস্তানকে। ছয় ম্যাচে তিন জয় নিয়ে আফগানিস্তানের অবস্থান এখন ৫ম. ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিশ্চিত হয়ে গাছে। ভাগ্যের সহায়তা পেলে বাকি দুই ম্যাচ জয় করে খেলতেও পারে সেমী ফাইনাল।
আফগান ক্রিকেট থেকে ইংল্যান্ড,পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের অনেক কিছুই আছে শিখবার। নিদৃষ্ট লক্ষ্য স্থির করে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে খেলে অর্জন হাতের মুঠোয় এসে ধরা দেয়। শুধু কথায় চিড়ে ভেজে না।