বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের স্বপ্নের অপমৃত্যু

সালেক সুফী

কাল পাশের বাড়ির প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আগের ৬ ম্যাচের ৫টিতে শোচনীয় পর্যায়ে বাংলাদেশকে বিবর্ণ ,বিদ্ধস্ত , ছন্নছাড়া মনে হচ্ছিলো। বিলম্বে হলেও বিসিবি সভাপতি কলকাতায় উপস্থিত হয়ে খোঁজ খবর নিলেন, দলকে উৎসাহ দিলেন ,কঠিন সময়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন। কিন্তু ময়দানে উদ্যানে বাংলাদেশের বর্ণহীন ক্রিকেটের নৌকাডুবি হলো. মাঠে উপস্থিত কয়েক হাজার বাংলাদেশী ক্রিকেট অনুরাগী আর নানা মাধ্যমে সংযুক্ত কোটি বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রেমিক দেখলো পাক ক্রিকেট বাহিনীর কাছে বাংলাদেশের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। প্রথমে ব্যাটিং করে পাকিস্তানের উঁচু মানের পেস আক্রমণের মোকাবিলায় সামান্য ২০৪ রানের পুঁজি সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। বলতে দ্বিধা নেই বর্তমান দলটি বর্তমান অবস্থায়  এর বেশি কিছু করার ক্ষমতায় রাখে না. হেসে খেলে ২০৫/৩ করে সহজেই ৭ উইকেটে জয় পেলো পাকিস্তান। ভগ্ন মন আর চূর্ণ হয়ে যাওয়া স্বপ্ন নিয়ে নিরবে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার ছিল না. ৭ ম্যাচে ৬টি হেরে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৯ম।  সম্ভাবনা আছে ১০ম হয়েই টুর্নামেন্ট শেষ করার।  ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার স্বপ্ন নীলিমায় নীল হয়ে মিলিয়ে গাছে। বাকি দুটি খেলায় শ্রীলঙ্কা এবং অস্ট্রেলিযার বিরুদ্ধে জয়ের কোনো সম্ভাবনা দেখি না দলটির।  ব্যার্থতার ব্যাবচ্ছেদ করলে দেখা যাবে অপরিণামদর্শী ,দূরভিসন্ধি দূষিত পরিকল্পনা ,স্কোয়াড নির্বাচন ,খেলার একাদশ নির্বাচনে স্বেচ্ছাচার , ব্যাটিং অর্ডার , দল পরিচালনায় দলনায়কের ব্যার্থতা ,দায়িত্ব বোধের অভাব এগুলো বাংলাদেশের ভরাডুবির নেপথ্য কারণ।

কাল কিন্তু ইডেন উইকেট কিছুটা ধীর গতির থাকলেও ব্যাটিং বান্ধব ছিল. কিন্তু টস জয় করে বাংলাদেশের টপ অর্ডার শাহীন শাহ আফ্রিদি ,হারিস রউফের সামনে দাঁড়াতেই পারলো না. ৬ ওভারে ২৩ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ হাবুডুবু খাচ্ছিলো। মেধাবী তরুণ তানজিদ তামিমকে অপরিপক্ক অবস্থায় বিশ্ব সেরাদের সামনে ছুড়ে দিয়ে ওদের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করেছে নির্বাচকরা বলা যায় এখন. নতুন বলে শাহীন আফ্রিদির দ্রুতগতির সুইং সামলানো ওর আওতার বাইরে। দুঃখ হয় মেধাবী নাজমুল শান্ত কেন বারবার বার্থ হচ্ছে? কি তালিম দিচ্ছে হেড কোচ হাতুরা। কাল বাংলাদেশ সঠিক ভাবে মুশফিককে ৪ এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ৫ নম্বরে খেলালো।  দুর্ভাগ্য মুশফিকের। এই ম্যাচের সেরা বলটি শাহীন ছুঁড়েছিলো ওর বিরুদ্ধে। দুরূহ লেংথে করা আউটসুইং বলটি খেলা এক কোথায় অসম্ভব ছিল. ২৩ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ স্বল্প রানে গুটিয়ে যাবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। এই অবস্থায় বিশ্ব কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ভালো খেলতে থাকা লিটনের সঙ্গে জুটি বেঁধে চতুর্থ উইকেটে ৭৩ রান করে ধস সামাল দিলো। অথচ এই রিয়াদকে দল থেকে ছেটে ফেলতে ষড়যন্তের জাল বুনেছিল বিসিবির অন্তরপুরে বসত করা সিন্ডিকেট।

কিজে হলো ভালো খেলতে থাকা লিটনের মতি ভ্রম ঘটলো। ৪৩ রান করে ইফতিখারের নির্বিষ স্পিন বলটি ফ্লিক করে আগা সালমানের হাতে তুলে অসময়ে প্যাভিলিয়নে ফিরলো লিটন।  ছন্দ হারালো বাংলাদেশ ব্যাটিং। উইকেটে এসে ফর্ম হীন সাকিব হালে পানি পাচ্ছিলো না. বাহারী স্ট্রোকস দূরের কথা সিঙ্গেলস নিয়ে স্ট্রাইক রোটেট করতে পারছিলো না. অপর দিকে অর্ধশত পেরিয়ে যাওয়া রিয়াদের উপর সাঁড়াশি আক্রমণ চালালো পাকিস্তান। শাহীন আফ্রিদির আরো একটি তুখোড় ইয়র্কার বলে ৫৬ রান করে আউট হলো রিয়াদ।  আগেই বলেছি হালে পানি পাচ্ছিলো না সাকিব।  খোলস থেকে বেরিয়ে এসে দুই তিনটি স্ট্রোকস নেয়ার পর হারিস রউফের দ্রুত গতির শর্ট বলে উইকেট বিসর্জন দিলো অধিনায়ক। এই সময় শুষ্ক উইকেটে দুরন্ত রিভার্স সুইং  শুরু করে পাকিস্তান। মোহাম্মদ ওয়াসিম ,রউফ ,শাহিনদের মোকাবিলা করার মত দক্ষতা আর কৌশল জানা নেই বাংলাদেশের লেট্ মিডল অর্ডার বাটিংয়ের।  সাকিবের পতনের পর তাই তাসের ঘরের মতোই ২০৪ রানে ঝরে পড়লো বাংলাদেশ। শাহীন (৩/২৩) ,মোহাম্মদ নেওয়াজ (৩/৩১) , হারিস রউফ ( ২/৩৬) গতি ছন্দ আর বিষাক্ত রিভার্স সুয়িং দিয়ে নীলমৃত্যু ঘটিয়েছে বাংলাদেশ বাটিংয়ের।  তবে প্রমান হলো আবার টপ অর্ডারে তামিম ইকবালকে ছেড়ে আসা বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাহমুদুল্লাহ আবারো প্রমান করলো বিশ্বকাপ ম্যান সম্পন্ন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের আসর.

সামান্য পুঁজি  নিয়ে ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে খুব একটা করার কিছুই ছিল না. প্রথম কয়েকটি ওভারে তাসকিন ,শরিফুল ভালো সূচনা করলেও তরুণ উদীয়মান ব্যাটসম্যান আবদুল্লাহ শফিক ( ৬৯ বলে ৬৮) এবং তুখোড় ফখর জামানের ( ৭৪ বলে ৮১) খুব একটি বেগ পেতে হয় নি ২১.১ ওভারে ১২৮ রানের শক্ত প্লাটফর্ম গড়ে তোলায়।  বাংলাদেশের হয়ে মেহেদী মিরাজ দুই ওপেনার সহ বাবর আযমের উইকেট তুলে নিলেও মোহাম্মদ রিজওয়ান ( ২৬*) এবং ইফতিখার আহমেদ (১৭*) অনায়েসে ৩২.৩ ওভারে ২০৫/৩ উইকেটে তুলে পাকিস্তানকে টুর্নামেন্টে তৃতীয় জয়  তুলে দেয়।

বাংলাদেশ ৭ ম্যাচে ৬টিতে হেরে ইতিমধ্যেই ছিটকে গাছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার সম্ভাবনা থেকে। বাকি দুটি ম্যাচে শ্রীলংকা এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের সম্ভাবনা নিতান্তই সীমিত। পাকিস্তানের সুযোগ আছে শেষ দুই ম্যাচে ইংল্যান্ড এবং নিউ জিল্যান্ডের বিরোধে জয়ী হয়ে চমক দেখানোর।

যাই হোক বাংলাদেশের ব্যার্থতার ষোলো কলা পূর্ণ করা বিশ্বকাপ মিশনের ব্যাবচ্ছেদ করে ক্রিকেট প্রশাসন অবিলম্বে পুনঃবিন্যাস করা সময়ের দাবি। একটি সাজানো গোছানো দলকে আনাড়ি হাতে লন্ড ভন্ড করার দোষে দোষী বর্ণচোরা মানুষদের চিন্নিত করে অপসারণ করা জরুরি। নাহয় পতনের অতল গহীনে অচিরেই তলিয়ে যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

18 − sixteen =