মানাম আহমেদের জন্মদিন আজ

একটি সঙ্গীতকে সুন্দর ও মধুর করতে শ্রোতাদের দৃষ্টির আড়ালে যারা নীরবে কাজ করেন মানাম আহমেদ তাদেরই একজন। তিনি খ্যাতিমান কিবোর্ডশিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় তারকা শিল্পীদের অনেক গানে আছে তার স্বাক্ষর এবং দেশের অসংখ্য তারকা শিল্পীদের গানের সুরকার ও সঙ্গীতায়োজক।

‘সঙ্গীতের প্রতিটি নোট বা স্বর হচ্ছে পানির ফোঁটার মতো। কোনো রং না থাকলেও ওর ভেতরেই আছে সব রং। রংগুলোকে নিয়ে খেলতে জানতে হয়। কিবোর্ড নিয়ে আমি সে কাজটাই করার চেষ্টা করি। এটা আমার কাছে প্রার্থনার মতো।’ এমনই বলছিলেন দেশসেরা কিবোর্ডিস্ট মানাম আহমেদ। বাবা মনসুর আহমেদ ছিলেন নামকরা সঙ্গীত পরিচালক। বাসায় তাই ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের আবহাওয়া রক্তের পাশাপাশি কানেও সারাক্ষণ ছিল গান। জানা যায় বাসায় নিয়ম ছিল, ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই রেওয়াজ করতে হবে। আলসেমি করে রেওয়াজ না করলে কপালে সেদিন নাশতা জুটত না। তবলার প্রতি ভালোবাসা দেখে বাবা ভর্তি করিয়ে দিলেন ওস্তাদ কামরুজ্জামান মনির কাছে। পাশাপাশি কিবোর্ড নিয়েও চলতে লাগল সকাল-বিকেল নিয়মিত প্র্যাকটিস। এর মধ্যেই কিবোর্ডিস্ট হিসেবে সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠলেন মানাম আহমেদ। চলচ্চিত্রের গান থেকে শুরু করে সব ধরনের গানই বাজাতে শুরু করলেন। ওটাই ছিল তার উত্থানের সময়। সব সঙ্গীত পরিচালক তাকে নিয়ে কাজ করতে চান। এমনও অবস্থা ছিল যে তিন-চার মাসের শিডিউল পকেটে নিয়ে ঘুরতে হতো। আলী হোসেন, আলম খান, আলাউদ্দিন আলী, আনোয়ার পারভেজ, সুবল দাশ, সমর দাশ, শেখ সাদী খান, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, মনসুর আহমেদ ও আজাদ রহমান থেকে প্রায় সব সুরকারের সঙ্গেই কিবোর্ডিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ‘এটা তার জন্য একটা বিশাল পাওয়া। এই বড় বড় সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে এমন এমন জিনিস শিখেছি, যা বলার নয়। সবাই নিজের মতো করে কাজ করে।’ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করলেন মানাম। এর মধ্যেই মাইলসের দলপতি ফরিদ রশিদ মনসুর আহমেদকে অনেক বলেকয়ে মানামকে নিজের ব্যান্ডে নিয়ে নিলেন। নটর ডেম কলেজে পড়ার সময় ব্যস্ততা এমনই বেড়ে গেল যে ক্লাস, কুইজ, পরীক্ষা, চলচ্চিত্রের কাজ, ব্যান্ডের কাজ, বাংলাদেশ বেতারে চাকরি, ব্যান্ডের শো-সবকিছু রীতিমতো শিডিউল করে চলতে হতো তাঁকে। তবে কোনো সমস্যাই দমিয়ে রাখতে পারেনি মানামকে। বাণিজ্যিক ধারার এসব কাজের পাশাপাশি ব্যান্ডের গানও করতেন। কভার করা গানও করতেন নিয়মিত। সব মিলিয়ে মিশ্র একটা গানের স্বাদ নিয়ে আরও পরিণত মিউজিশিয়ান হওয়ার দিকে এগিয়েছেন।

এখনকার কিবোর্ডে প্রিসেট সিন্থেসাইজারে আগে থেকেই টোন ঠিক করা থাকে। কিন্তু একটা সময় কাজ করতে হতো অ্যানালগ সিন্থেসাইজার দিয়ে। সেখানে নিজে নিজে ফ্রিকোয়েন্সি ঠিক করে, নিজেই নিজের জন্য শব্দ তৈরি করতে হতো। এখনকার অধিকাংশ কিবোর্ডিস্ট যেটা করতে পারেন না। সবাই শুধু শর্টকাট খোঁজে। আক্ষেপ করে বলছিলেন মানাম আহমেদ। পেশাদারির সঙ্গে বাজানোর আগে সাত বছর তিনি ওই কিবোর্ড নিয়ে পড়েছিলেন।

প্রতিটি বিট, প্রতিটি পিস বুঝে বুঝে কিবোর্ড প্রোগ্রামিং করতেন তিনি। এত ধৈর্য কোথায় এখনকার ছেলেদের মধ্যে!

শুধু কিবোর্ডিস্ট নয়, সুরকার হিসেবেও সফল মানাম আহমেদ। চাঁদ-তারা-সূর্য, ধ্বিকি ধ্বিকি, হূদয়হীনা, পিয়াসী মন, নীল নয়না, স্বপ্নপূরণ ইত্যাদি মাইলসের প্রায় অধিকাংশ জনপ্রিয় গানের সুরকার তিনিই। মাইলসকে সব সময় একটা আলাদা জায়গায় রাখবেন বলে বাইরে পুরুষকণ্ঠের জন্য তেমন কোনো সুর করেননি; যা করেছেন সবই নারীকণ্ঠের জন্য। এটা তিনি করেছেন ব্যান্ডের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে। ভালো কিবোর্ড বাজান, সুরও করেন চমৎকার। কিন্তু ভোকাল হিসেবে গান গেয়েছেন তিনটি। মাইলসের হয়ে গানগুলো ছিল তুমি কী সুন্দর, দুপুর বেলা, স্বপ্নপূরণ ইত্যাদি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × two =