বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াইয়ে আজ মুখোমুখি ভারত-অস্ট্রেলিয়া

সালেক সুফী

আজ গুজরাটের আহমেদাবাদে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং আট বারের মত ফাইনাল খেলা অস্ট্রেলিয়া দলের বিরুদ্ধে বিশ্বসেরার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং চারবারের মত ফাইনালে ওঠা স্বাগতিক ভারত দলের সঙ্গে। ১০ ম্যাচে ১০ টি জয় নিয়ে ভারত এবারের বিশ্বকাপে উড়ছে। ১০ ম্যাচে শেষ আটটিতে জয় জয় পেয়ে নিজেদের নতুন করে ফিরে পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দুই দলেই আছে বিশ্ব মানের ম্যাচ জয়ী অনেক তুখোড় ব্যাটসম্যান এবং বোলার।  পরিচিত পরিবেশ, চেনা উইকেট আর স্বদেশী দর্শক সমর্থকদের সামনে ভারতকেই এগিয়ে রাখছেন অনেকে। জোতিষীরাও বলছেন বৃহস্পতি নাকি এখন বসত করছে ভারত ক্রিকেট পরিবারে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার জানা আছে কিভাবে প্রতিকূল পরিবেশ জয় করে শিরোপা ছিনিয়ে আনতে হয়। তাই আজ বিশ্বকাপ ক্রিকেট হাড্ডা হাড্ডি লড়াই দেখবে বিশ্ব। ফাইনালের স্নায়ুর চাপ যে দল শয়ে নিয়ে পারবে জয় লক্ষী তাদের কাছেই ধরা দিবে। আজ জিতলে অস্ট্রেলিয়ার হেক্সা মিশন সফল হবে। মনে রাখতে হবে ফুটবলে যেমন ব্রাজিল, ক্রিকেটে তেমনি অস্ট্রেলিয়া ৫ বার ৫ মহাদেশ থেকে বিশ্বকাপ জয় করেছে। ভারত জিতেছে দুইবার। ১৯৮৩ সর্বজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিরুদ্ধে ক্রিকেট মক্কা লর্ডস ময়দানে।  দ্বিতীয় বার জিতেছে মাহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে দেশের মাটিতে ২০১১ সালে শ্রীলংকাকে হারিয়ে। গ্রুপ পর্যায়ে দুই দলের খেলায় অস্ট্রেলিয়া দাঁড়াতেই পারেনি চেন্নাই চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে।  সেই ম্যাচে ১৯৯ রানে গুটিয়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া হেরেছিল ৬ উইকেট ব্যাবধানে।

ব্যাটিং শক্তি তুলনা

সাদা বলের ৫০ ওভার ম্যাচ জয়ের ভীত এখন গড়ে দেয় ব্যাটসম্যানরা। আহমেদাবাদের কিছুটা ফ্লাট উইকেটে অনেক রান আছে।  প্রথমে ব্যাট করে ৩৫০-৪০০ রান করার শক্তি সামর্থ আছে দুটি দলের। অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং জুটি ডেভিড ওয়ার্নার -ট্রাভিস হেডের সঙ্গে ভারতের রোহিত শর্মা -শুভমান গিল সমানে সমান বলতে হবে। তবে প্রথম পাওয়ার প্লেতে সামান্য এগিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া।  তিন নম্বরে বাট করা বর্তমান বিশ্ব সেরা এবং ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি অবশ্যই গুনে মানে অভিজ্ঞতায় অস্ট্রেলিয়ার মিচেল মার্শ থেকে এগিয়ে।  ওডিআই ক্রিকেটে ৫০ শতরানের মাইলফলক ছুঁয়েছে সেমি ফাইনালে। তবে মার্শ ইমপ্যাক্ট ব্যাটসমান।  নিজের দিনে খুনে ব্যাটিং করে দলে অবদান রাখে মাঝে মাঝে।  এইতো সেদিন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপরাজিত ১৭৭ রানের খুনে ইনিংস খেললো।  ৪ এবং ৫ নম্বরে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলবে স্টিভ স্মিথ এবং মার্নাস লেবুচাঙ। ভারতের আছে শ্রেয়াস আয়ার এবং কে এল রাহুল। এখানে সমানে সমান বলবো। স্টিভ স্মিথ অস্ট্রেলিয়া তথা বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের অন্যতম।  অস্ট্রেলিয়ার দুই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান আবার স্পীন খেলায় দক্ষ।  ভারতের হয়ে এই বিশ্বকাপে কিন্তু তুখোড় ব্যাটিং করছে আয়ার এবং রাহুল। ১১-৪০ ওভার ব্যাটিং কিন্তু খেলার ভাগ্য গড়ে দিবে। যদি টপ এবং মিডল অর্ডারের একজন দীর্ঘ সময় ব্যাটিং করে শক্ত প্লাটফর্ম গড়ে দিতে পারে তাহলে লেট্ মিডল অর্ডারে খুনে ফর্মে থাকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল কিন্তু ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিবে। ভারতের কিন্তু হার্দিক পান্ডিয়া নেই। সূর্যকুমার যাদব কিন্তু নিয়মিত রান পাচ্ছে না। তাই কোন দল বড় স্কোর করে কঠিন টার্গেট দিবে অথবা বড় স্কোর তাড়া করে ম্যাচ জেতাবে সেটি অনেকটাই নির্ভর করবে উড়ন্ত সূচনা এবং টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের সাফল্যের উপর। এখানে কিন্তু দুই দলেরই সমান সম্ভাবনা আছে।

বোলারদের সক্রিয়তা ম্যাচ জেতাতে ভূমিকা রাখবে

নতুন বলে ভারতের মোহাম্মদ সামি -জাসপ্রিত বুমরা -মোহাম্মদ সেরাজ এবং অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক -জোস্ হেজেলউড -পাট কামিন্স। পার্থক্য সামান্য। তবে উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে মোহাম্মদ সামি এগিয়ে আছে। টুর্নামেন্ট যত গভীর হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পেস বোলিং ততটাই আক্রমণাত্মক হয়েছে।  স্টার্ক, হেজেলউড শুরুতে আঘাত হেনে রোহিত, কোহলিকে ফেরালে কিন্তু চাপে পড়তে পারে ভারত। ফাইনালের মোট স্নায়ু চাপে খেলার অভিজ্ঞতা নেই শুভমান গিল বা শ্রেয়াস আয়ারের। অবশ্য সেই ক্ষেত্রে কে এল রাহুল আছে হাল ধরবার। অন্যদিকে বুমরাহ, সামি যদি শুরুতেই ওয়ার্নার, হেডকে ফিরিয়ে দেয় তাহলেও চাপে পড়বে অস্ট্রেলিয়া। সাধারণত উইনিং কম্বিনেশন ভাঙা হয় না। তবুও অস্ট্রেলিয়া দলে বাম হাতি ব্যাটসম্যান প্রাধান্য থাকায় আজ ভারত রবিচন্দ্র অশ্বিনকে খেলানোর কথা ভাবতেও পারে। ফাইনালে ৫ জন প্রথম সারির বোলার নিয়ে খেলার ঝুঁকি নাও নিতে পারে রাহুল-রোহিত থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। গুনে মানে অভিজ্ঞতায় রবীন্দ্র জাদেজা-কুলদীপ যাদব স্পিন জুটি এগিয়ে আছে এডাম জাম্পা-ম্যাক্সওয়েল- ট্রাভিস হেড থেকে।  ভারতের ৫ বোলারের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার কিন্তু ৬ বোলার খেলানোর বিকল্প আছে।  ব্যাটিং, বোলিং মিলিয়ে দুই দলের পাৰ্থক্য নির্ধারণ করতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করলেও সামান্য দেখা যাবে।

পার্থক্য গড়ে দিতে পারে ফিল্ডিং। ভারত দল ইদানিং ভালো ফিল্ডিং করলেও অস্ট্রেলিয়া কিন্তু সুস্পষ্ট ব্যাবধানে এগিয়ে।  কলকাতা ইডেন গার্ডেন্স সেমি ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তুখোড় ফিল্ডিং করেই ২৫-৩০ রান বাঁচিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডার্সরা।

আশা করি উইকেট বেঁচে নেয়া বা টস নিয়ে কোনো অকারণ বিতর্ক সৃষ্টি হবে না। অন্তত অস্ট্রেলিয়া দল ফেয়ার ক্রিকেট খেলে থাকে সবসময়। আজ নিরপেক্ষ ভাবনায় ভালো ক্রিকেট খেলে সেরা দলটি শিরোপা জিতে নিক সেটি চাইবো।  শুভ কামনা দুটি দলের জন্য।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

4 × five =