ময়ূরাক্ষী সেন
ডুপ্লেক্স বাড়ি দেখলে হঠাৎ যেন চোখ আটকে যায়। এমন একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির স্বপ্ন কমবেশি অনেকের। এবারের আয়োজন কিভাবে আপনি স্বপ্নের ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করতে ও সাজাতে পারেন।
সাধারণ আপার্টমেন্টের ফ্ল্যাটে একটি ইউনিটের পর পর ছাদ দেওয়া থাকে কিন্তু ডুপ্লেক্স বাড়িতে দুটি ইউনিট সংযুক্ত থাকে। মাঝে সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হয় উপরে উঠানামা করার জন্য। বেশিরভাগ ডুপ্লেক্স বাড়ির চিত্র এমনই হয়। আবার অনেকক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যেতে পারে। ডুপ্লেক্স বাড়ি দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমন এখানে থাকার ও কিছু সুবিধা রয়েছে। ঢাকা শহরে এখন খোলামেলা বাড়ি পাওয়া খুব কঠিন তাই যারা একটি বড় পরিসরের বাড়িতে থাকতে চান ডুপ্লেক্স তাদের প্রথম পছন্দ।
অনেকেই ডুপ্লেক্সের কটেজ, পেন্টহাউজ, বাংলোকে মিলিয়ে ফেলেন। তবে শুধুমাত্র দুটি ইউনিট পাশাপাশি থাকলে কিংবা উপরে নিচে দুটি ইউনিট থাকাকেই ডুপ্লেক্স বলে। বাংলাদেশে ডুপ্লেক্স বাড়ি বিলাসবহুল হিসেবেই দেখা হয়। অনেকে বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করেন আবার অনেকে ডুপ্লেক্স ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করেন। বাংলাদেশে ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি কিছুটা ব্যয়বহুল। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ডুপ্লেক্স বাড়ির তুলনায় সাশ্রয়ী। দেশে সব জায়গায় কিংবা এলাকায় ডুপ্লেক্স করার উপযুক্ত পরিবেশ নেই। তাই অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করতে পারেন না।
শুধু বিলাসবহুল নয় ডুপ্লেক্স বাড়ির কিছু সুবিধা রয়েছে। ডুপ্লেক্স বাড়ির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এখানে বিশাল পরিসরে জায়গা পাওয়া যায়। ঢাকার বেশিরভাগ ফ্ল্যাট এখন তৈরি করা হয় ছোট করে যাতে অনেকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তাছাড়া ঘরে ছোট বাচ্চা থাকলে তারা খোলামেলা পরিবেশে বড় হতে পারে না। কারণ বাইরে খেলার জায়গা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। দেশে যৌথ পরিবার বিলুপ্তপ্রায়, কিন্তু ডুপ্লেক্স বাড়িতে বেশ কয়েকটা রুম থাকবার কারণে খুব সহজেই যৌথ পরিবার বসবাস করতে পারে। তবে পরিবার ছোট হলে বাড়ির কিছু অংশ ভাড়া দেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বাড়িটি আয়ের উৎস হিসেবেও কাজে লাগবে। বড় জায়গা থাকবার কারণে ঘরের ফার্নিচার নিয়েও খুব একটা চিন্তায় পড়তে হয় না। অনেকের ইচ্ছা থাকে নিজের ঘর মনের মতো সাজানো, বাড়িটি ডুপ্লেক্স হলে ঘরের বিভিন্ন স্থান ভিন্নভাবে সাজানো যায়।
একটি ডুপ্লেক্স বাড়িতে বেসিক যে রুমগুলো থাকে তা হলো মাস্টারবেড, শিশুরুম, বাথরুম, ডাইনিং রুম, বসার ঘর, বারান্দা, রান্নাঘর। এরপর অতিরিক্ত জায়গা থাকলে গেস্টরুম সহ বাড়তি কিছু কামরা রাখা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাইভেসির জন্য বেডরুম উপরের তলায় রাখা হয়। আর রান্নাঘর, ডাইনিং রুম ও বসার ঘর নিচে থাকে। তবে বাথরুমের ব্যবস্থা উপরে ও নিচে দুই জায়গাই রাখা উচিত। ডুপ্লেক্স যেকোনো থিম অনুসরণ করে সাজালে দেখতে সুন্দর লাগে। যেমন চাইলে পুরো বাড়িটি সাদা রঙের ফার্নিচার ও শোপিস দিয়ে সাজানো যেতে পারে। তবে ঘর সাদা হলে এর রক্ষণাবেক্ষণ করা খুব জরুরি, কারণ সাদা রঙে ধুলা মিশে খুব সহজেই ময়লা হয়ে যায়। আবার চাইলে ঘরের বিভিন্ন কোনা ভিন্ন ভিন্নভাবে সাজানো যেতে পারে। ঘরের একটি কর্নার দেশীয় জিনিস দিয়ে সাজাতে পারেন। যেহেতু ডুপ্লেক্স বাড়িতে ঘর বড় হয়ে থাকে তাই ঘরের একপাশে ছোট লাইব্রেরি থাকলে আপনার রুচির পরিচয় পাওয়া যাবে। সেই লাইব্রেরিতে আপনার কালেকশনের বই কিনে সাজিয়ে রাখতে পারেন। লাইব্রেরিতে একটি স্পট লাইট রাখা যেতে পারে যা বইগুলোকে হাইলাইট করে রাখবে।
ডুপ্লেক্স বাড়ির রান্না ঘরে চাইলে কফি কর্নার করা যেতে পারে, যে জায়গায় হরেক রঙের মগসহ নিজে কফি বানিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। ডুপ্লেক্স বাড়িতে বাড়তি ঘরের ব্যবস্থা থাকলে তাতে হোম অফিসও করা যেতে পারে। বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় লাইটিংয়ের ব্যবস্থা রাখুন, তা না হলে ঘরের কিছু জায়গা অন্ধকার থাকবে। একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি বানানোর পর চ্যালেঞ্জ হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন রাখা। এতো বড় বাড়ি নিয়ম মেনে পরিষ্কার করা ঝামেলাই বটে। প্রতিদিন চেষ্টা করতে হবে ঘরের ফার্নিচার মুছে রাখার।
ডুপ্লেক্স বাড়ির ডিজাইন করার সময় বাড়ির বারান্দা উপরের তলায় রাখতে হবে যাতে করে ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণের আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে। বারান্দায় ছোট করে বাগান করতে পারেন, যেসব ফুল বা সবজি কম আলো-বাতাসে বেড়ে উড়তে পারে সেসব বারান্দায় রোপণ করতে পারেন। কিংবা পুরো বারান্দায় বাগানবিলাস গাছ লাগাতে পারেন, যা বেশ দৃষ্টিনন্দন হবে। দুটি বারান্দার ব্যবস্থা রাখতে চাইলে একটি বারান্দার উপর ছাদ না দিয়ে খোলা রাখতে পারেন এবং সেখানে বেতের চেয়ার কিংবা দোলনা রাখতে পারেন।
ডুপ্লেক্স বাড়ি বড় হয় বলে অনেকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আসবাবপত্র রাখেন। এতে বাড়ির সৌন্দর্য অনেকটা কমে যায়। তাই যতটা সম্ভব অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র কম রাখার চেষ্টা করতে হবে। বাড়ির ফাঁকা জায়গায় মাটি কিংবা পিতলের কিছু শোপিস রাখতে পারেন, এতে ঘরের শোভা বৃদ্ধি পাবে। ডাইনিং টেবিলের পাশে একটু জায়গা রাখুন যেখানে অনেক মেহমান একসাথে আসলে বুফে পদ্ধতিতে খাবার পরিবেশন করা যায়।
ডুপ্লেক্স বাড়ির বসার ঘরের সিলিংয়ে ঝাড়বাতি লাগাতে পারেন। ঝাড়বাতি থাকলে পুরো ঘর ঝলমল করে উঠবে। ঝাড়বাতির জন্য ডুপ্লেক্স বাড়ি সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। ডুপ্লেক্স বাড়ির মূল আকর্ষণের জায়গা থাকে বাড়ির সিঁড়ি। তাই বাড়ির সিঁড়ি যাতে নান্দনিক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সিঁড়িতে কাচের ড্রয়ার করতে পারেন। সিঁড়ি যদি একপাশে হয় তাতে নান্দনিক নকশার কোনো পেইন্টিং লাগাতে পারেন। সিঁড়িতে স্পট লাইটের ব্যবস্থা করুন, যাতে পর্যাপ্ত আলো থাকে। তা না হলে উঠা-নামার সময় যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ডুপ্লেক্স বাড়ির সিঁড়িগুলো একটু নিচু করতে হবে, যাতে করে বার বার উঠানামা করতে খুব বেশি কষ্ট না হয়। বাইরের আউটলুকও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাড়ির কালার কম্বিনেশনও সঠিক বেছে নিতে হবে, তা না হলে দেখতে ভালো লাগবে না। বাড়ির লনে জায়গা থাকলে সেখানে ঘাস লাগাতে পারেন ও সারি সারি কিছু ফুল গাছ, চাইলে ঝরনাও লাগানো বা রাখা যেতে পারে। বাড়ির ছোট সদস্যের জন্য কিছু অনুষঙ্গ দিয়ে খেলার জায়গা তৈরি করা যেতে পারে। অবশ্যই পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
বড় ডুপ্লেক্স অনেক সময় ভাড়া দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে যাদের ভাড়া দিচ্ছেন খেয়াল রাখবেন তাদের মানসিকতার সাথে আপনার মানসিকতা মিলছে কি না। তা না হলে পরবর্তীতে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। ডুপ্লেক্সে অফিস কক্ষ করতে চাইলে তা মূল প্রবেশ দরজার কাছাকাছি করুন। কারণ অফিসিয়াল কাজে বাইরের লোকজনদের ঘরে আসবার প্রয়োজন হতে পারে। মেইন গেটের কাছাকাছি অফিস কক্ষ হলে বাড়ির অন্যদের প্রাইভেসির সমস্যা হবে না। ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করার সময় অবশ্যই স্থানের আশেপাশের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সামনে কোনো বহুতল ভবন থাকলে আপনার বাড়িতে আলোবাতাস প্রবেশ করতে পারবে না।
আপনার ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করতে কেমন খরচ পড়বে তা নির্ভর করছে কোন স্থানে বাড়িটি তৈরি করছেন। ঢাকাতে ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করাটা কিছুটা ব্যয়বহুল। কিন্তু ঢাকার বাইরে তুলনামূলক কম খরচে তৈরি করা যায়। অনেকে নিজের বাড়ির নকশা নিজে করলেও ডুপ্লেক্সের ক্ষেত্রে পেশাদারদের দায়িত্ব দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তারা সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন। তাছাড়া একটি বাড়ি করতে কেমন খরচ পড়বে তা নির্ভর করছে বাড়ির নকশার উপর।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ইন্টেরিয়র