মুক্তাগাছার মণ্ডা রহস্য

মাসুম আওয়াল

যমুনা এক্সপ্রেসে চড়ে মিষ্টি বাতাস খাচ্ছি,

মুক্তাগাছার মণ্ডা খেতে ময়মনসিংহ যাচ্ছি।

কে খেয়েছো মন্ডা এটা খেতে কেমন লাগে

কে বানালো কোথায় জানো কয়শ বছর আগে

আছে নাকি এর পেছনে রহস্যময় গল্প!

বন্ধু তুমি শুনতে কী চাও! শোনাবো আজ অল্প।

রাম গোপালের নাম শুনেছো তাকে চেনো কে কে

এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ থেকে।

অনেক আগে সতেরশ নিরানব্বই সাল,

রাজশাহীতেই রাম গোপালের কাটলো কিছুকাল।

আঠারশ তেইশ সালে মুক্তাগাছায় যান,

পরের বছর স্বপ্নে গোপাল জাদুর প্রদীপ পান।

রূপকথা নয় চুপকথা নয় ইতিহাসের সত্য,

স্বপ্নে গোপাল পেয়ে গেলেন মণ্ডা গড়ার তত্ত্ব।

সেই তত্ত্বেই মণ্ডা গড়ে জীবন নিলেন সাজিয়ে,

যাবে নাকি মণ্ডা খেতে ঢোলের বুলি বাজিয়ে!

তখন মুক্তাগাছার রাজা ছিলেন সূর্যকান্ত

মিষ্টি খেতে এত মজা রাজা কী তা জানতো!

রাম গোপালের মিষ্টি দারুণ রাজা খেলেন সেইটা,

রাজ্যে এলে কেউ বেড়াতে তাকেই খাওয়ান এইটা।

দিন চলে যায় মাস চলে যায় সময়রা যায় গড়িয়ে,

মুক্তাগাছার মণ্ডা গেছে দেশ বিদেশে ছড়িয়ে।

মুক্তাগাছার মণ্ডা খেয়ে চমকে ছিলেন যারা,

শুনবে কে কে তারা

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁকে তোমরা তো ভাই চেনো,

এ মণ্ডা তার ভীষণ রকম প্রিয় ছিলো জেনো।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়,

মণ্ডা খেয়ে মেতেছিলেন দারুণ প্রশংসায়।

না খেলে এই মণ্ডা তুমি করবে যে আফসোস,

খেয়েছিলেন বীর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস।

টিন টিনা টিন টিন আহারে টিন টিনা টিন টিন,

মণ্ডা খেলেন দূর রাশিয়ার জোসেফ স্তালিন।

মুক্তা গাছার মণ্ডা খেতে মন করে আনচান!

‘পূর্ব পাকিস্তানকা মেওয়া’ বলতেন আইয়ুব খান।

আবদুল হামিদ খান ভাসানী মণ্ডা ভালোবাসতেন,

মণ্ডা খেতে মাঝে মাঝেই মুক্তাগাছা আসতেন।

চিং চ্যাং চিং চুং আহারে চিং চ্যাং চিং চুং

মণ্ডা খেয়ে খুব খুশি হন চীনের মাও সে তুং।

আবু সাঈদ পশ্চিমবঙ্গের সাবেক রাষ্ট্রপতি,

মুক্তাগাছার মণ্ডা খেয়ে ছড়ান মনের জ্যোতি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও এর ফ্যান,

ইন্দিরা গান্ধীও মজার মণ্ডা খেয়েছেন।

ইষ্টি কুটুম ইষ্টি রে ভাই ইষ্টি কুটুম ইষ্টি,

দ্বিতীয় এলিজাবেথের পছন্দের এই মিষ্টি।

এমন মিষ্টির কথা শুনে হয় না খুশি কার গো,

খুশি সুইডিশ রাষ্ট্রদূত ওই আলেকজান্দ্রা বার্গও।

প্লেনে যাচ্ছেন আকাশ দিয়ে হবেই নাকি নামতে!

ময়মনসিংহের মণ্ডা খেতেই হবে নাকি থামতে!

এসব কথা বানানো না লিখছে না ভাই ঘোস্টে,

আলেকজান্দ্রায় বলেছিলেন ফেসবুকের এক পোস্টে।

ঊনিশশো সাত সালে গোপাল গেলেন পরোপার,

উত্তরাধিকারেরা ঠিক হাল ধরেছে তার।

একশত আট বছর বেঁচে গোপাল গেলেন পালিয়ে,

রেখে গেলেন মণ্ডা সেটাই থাকলো আলো জ্বালিয়ে।

রাধানাথ পাল রাম গোপালের আদর্শ এক ছেলে,

বাবার স্বপ্ন টিকিয়ে রাখেন বাবা চলে গেলে।

পরে আসেন কেদারনাথ ও দ্বারিকানাথ পাল,

বংশপরম্পরায় ধরে রাখেন মণ্ডামিঠার হাল।

একইভাবে মুক্তাগাছার মণ্ডা আছে টিকে,

দুইশ বছর পরেও সুনাম যায়নি হয়ে ফিকে।

রমেন্দ্র নাথ পাল গোপালের পঞ্চম বংশধর,

প্রতিষ্ঠানটি চালান এখন বাড়িয়ে পরিসর।

এই দু’হাজার তেইশ সালেও জনপ্রিয় মণ্ডা,

এক বসাতেই ফেলবে খেয়ে তুমি কয়েক গণ্ডা।

আসল মণ্ডা চেনা সহজ এই মণ্ডার পাখা নেই,

ময়মনসিংহ ছাড়া দেশের কোথাও শাখা নেই।

আদি আসল মণ্ডা খেতে,

ময়মনসিংহেই হবে যেতে।

মুক্তাগাছার ৭১নং জগৎ কিশোর রোড,

দেখবে গেলেই ঝুলে আছে বিশাল সাইনবোর্ড।

মুক্তাগাছার মণ্ডার স্বাদ মিলবে না তো ঢাকায়,

অন্য দোকান থেকে খেও কামড়ে দিলে টাকায়।

মণ্ডা তৈরি কীভাবে হয় শুনতে চাইছে মন

চলো দেখি; কীভাবে হয় এত্ত আয়োজন।

রমেন্দ্র নাথ পালের সাথে কথা বলা যাক,

রমেন্দ্রনাথ বলেন, ‘ওটা না বলি ভাই থাক।

গোপন উপাদানের কথা বলা নিষেধ আছে,

বললে, যদি মণ্ডা মিঠার স্বাদ কমে যায় পাছে।’

‘গরুর দুধ, চিনি লাগে’; বলেই ওঠেন হেসে,

কী হবে সব জেনে আসুন খাবেন ভালোবেসে।

রহস্যটা থাকুক না হয় যত্ন করে রাখা,

মণ্ডার মূল্য কেজি প্রতি সাড়ে ছয়শ টাকা।

ছড়া তো শেষ মুক্তাগাছার মণ্ডা খাবে! বলো

আমার সাথে ট্রেনে চেপে ময়মনসিংহে চলো।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: নিবন্ধ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

10 + 12 =