১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জে মীর আফসার আলী জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের এক বাঙালী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম মীর সুলতান আলী। ছোটবেলা থেকেই তাঁর মা-বাবা তাঁকে কঠোর অনুশাসনের মধ্যে রেখে বড় করে তুলেছেন। সেই বাড়িতে জুনিয়র হাইস্কুল পাশ করার আগ পর্যন্ত কাউকেই টেলিভিশন দেখার সুযোগ ছিলনা। ছোটবেলা থেকেই তাই মীর ঘন্টার পর ঘন্টা রেডিওর অনুষ্ঠান শুনতেন।
টেলিভিশন তিনিও জুনিয়র হাইস্কুল পাশ করার পরেই দেখা শুরু করেন। আর কোন ভাই-বোন না থাকার কারণে শৈশব-কৈশোরে একাকীত্বই ছিল তার নিত্য সঙ্গী। অথচ সেই একাকীত্বে থাকা ছেলেটিই কিনা এখন সব মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। মীর আফসার আলী কখনই কোনো খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতেন না। একাকী এই তরুণের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন পিতামাতাসহ পরিবারের সব সদস্যরা। কিন্তু সবার চোখে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আজ দুই বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় এক সেলিব্রেটি তিনি।
মীর আফসার আলী পড়াশোনাতে ছিলেন মাঝারি মানের। পার্ক স্ট্রিটের এসেম্বলি অব গড চার্চ স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরে মীর উমেশ চন্দ্র কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। তার ইচ্ছে ছিল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার হবার। এদিকে ছোট বেলা থেকেই মানুষকে হাসানোর এক অদ্ভুদ শক্তি ছিল মীরের। কাকতালীয়ভাবে তাই হয়েও গেছেন বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতা।
কৌতুক অভিনেতা বলাটা ঠিক হবে না। তিনি তার উপস্থাপনার মধ্য দিয়েই কৌতুক করে থাকেন। মুহুর্তেই দারুণ বুদ্ধিবৃত্তিক জবাব, পাল্টা জবাব তৈরী করার এক বিস্ময়কর ক্ষমতা রয়েছে মীরের। সপ্তাহের তিনদিন অপেক্ষায় থাকা অনেক দর্শক মীরাক্কেলের পর্বটি কখন আপলোড হবে সেই চিন্তায় বসে থাকেন শুধুমাত্র মীরের উপস্থাপনা উপভোগ করার জন্য।
কর্মজীবনে তিনি প্রথমে একজন সংবাদ পাঠক ছিলেন। ডিডি বাংলার খাস খবরের সংবাদ পাঠ করে তিনি প্রথম টেলিভিশনে কর্ম জীবন শুরু করেন। পরে লন্ড্রী থেকে পাওয়া ছয় দিনের পুরনো একটুকরো কাগজ থেকে আরজে হিসেবে চাকরির সার্কুলার দেখেন। সেখানে গিয়ে ইন্টারভিউ দেন… হয়েও যান মিরচি রেডিওতে একজন রেডিও জকি। এর সাথে তিনি জি বাংলার জনপ্রিয় অনুষ্ঠান মীরাক্কেল এ উপস্থাপক হিসেবেও কাজ করেন। পরে ২০২২ সালের ১লা জুলাই তিনি রেডিও মিরচি থেকে রেডিও জকি হিসেবে চাকরি ছেড়ে দেন।
২০১৭ সাল থেকে তিনি ভাইপো চরিত্র হিসেবে ফুডকা নামের একটি ফুডভ্লগে কাজ করেছেন। ২০২৩ সালের ২৩শে জানুয়ারি থেকে তিনি নিজের “গপ্পো মীরের ঠেক” নামে নিজের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।
১৯৯৭ সালের ১৬ মে বিয়ে করেন মীর। মীরের স্ত্রীর নাম সোমা ভট্টাচার্য। তিনি মুসলিম হলেও বিয়ে করেন অন্য ধর্মাবলম্বী একজনকে। রেডিও শো সূত্রেই সাক্ষাৎ মীর আর সোমার। মীর তখন রেডিও চ্যানেলে কাজ করছেন আর সোমা এনআরএসের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। মীরের শোতে একটি চিঠি লিখেন সোমা এবং সেটিকে শোতে পড়ে শোনান মীর। তারপর সোমাকে গ্লোব সিনেমার চিলড্রেন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের টিকিট পাঠান মীর। সেখানেই ১৬ই মে ১৯৯৫ সালে প্রথম দেখা হয় তাদের। বর্তমানে তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। তাদের সন্তানের নাম মুসকান মীর।
মীর একজন মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। জন্মসূত্র থেকেই তিনি একজন মুসলমান। তবে, তিনি মুসলমান হলেও বিয়ে করেন অন্য ধর্মাবলম্বী এক নারীকে।
মীর আফসার আলী ২০০৩ সালে রেডিও মির্চি কলকাতার একজন রেডিও জকি হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি জীবন যেমন নামে জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান হোস্ট করেন। মীর এয়ারওয়েভসে একজন সুপরিচিত কণ্ঠ হিসেবে পরিণত হন। তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে ২০০৬ সালে একটি শো হোস্ট করেন। তিনিই বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে শো করা প্রথম বাঙালি আরজে হন।
রেডিও জকি হিসেবে সফলতার পর তিনি বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় টিভি শোতে উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেন। মীর মীরাক্কেল, আই লাফ ইউ, কমেডি নাইটস উইথ মির এবং গোলমাল এর মতো বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় শো হোস্ট করেন। তবে, মীর তার উপস্থাপনা করা মীরাক্কেল শো এর কারণেই সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
মীর শুধু একজন আরজে কিংবা সফল উপস্থাপকই নয়, বরং তিনি একজন সফল অভিনেতাও বটে। তিনি বেশ কয়েকটি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। তার অভিনিত সিনেমাগুলো হলোঃ-
ভূতের ভবিষ্যৎ – ২০১২, খাসি কথা – ২০১৩, চ্যাপলিন – ২০১১, নটবর নট আউট – ২০১০, দ্য বং কানেকশন – ২০০৬, আশ্চর্য প্রদীপ – ২০১৩, কলকাতায় কলম্বাস – ২০১৬, ধনঞ্জয় – ২০১৭
দেখ কেমন লাগে – ২০১৭, অরণ্যদেব – ২০১৭, আবার বসন্ত বিলাপ – ২০১৮, মাইকেল – ২০১৮, আসছে আবার শবর – ২০১৮, ক খ গ ঘ – ২০১৮, সত্যদার কোচিং – ২০১৭, দেখ কেমন লাগে – ২০১৭, শেষ অঙ্ক – ২০১৬, ব্যোমকেশ পর্ব – ২০১৪, যদি বলো হ্যাঁ – ২০১৫, বার্ড অফ ডাস্ক – ২০১৮, হ্যাপি পিল – ২০১৮, কিশোর কুমার জুনিয়র – ২০১৮ স্যার শার্লক হোমস।