পরিশেষে ক্রিকেট নিয়ে বিসিবির কিছু প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত

সালেক সুফী

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় খেলা বিসিবির নানা বিতর্কিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ আচরণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তলানিতে পৌঁছেছিল। দুইবার টি২০ বিশ্ব ক্রিকেট এবং শেষ ওডিআই বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফরমেন্স ছিল হতাশাজনক। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিসিবি পরিচালকমণ্ডলীর সভায় নির্বাচকমণ্ডলী পরিবর্তন, সব ফরম্যাটে অধিনায়ক নির্ধারণ সহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ এবং পরিস্থিতি বিচারে সিদ্ধান্তগুলো আলোচিত এবং প্রশংসিত হচ্ছে। কেউ কেউ আবার মৃদু হলেও বিস্ময় প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের শিশুকাল থেকে শুভানুধ্যায়ী হিসেবে আমি পরিবর্তনগুলোর শুভ দিক নিয়ে আলোচনা করতে চাই। সেইসঙ্গে কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত দীর্ঘায়িত করার বিষয়ে বলার আছে।

সবার জানা আছে কিছু বিতর্কিত ব্যক্তির ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য ওডিআই  বিশ্বকাপ শুরুর আগে, চলাকালীন অস্বাস্থ্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তামিম বিষয়ে, সাকিবকে নিয়ে। একাদশ  নির্বাচন, স্কোয়াড নির্বাচন নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছিল। হেড কোচের বিতর্কিত ভূমিকা, নির্বাচকমণ্ডলীর পক্ষপাতিত্ব, ক্রমাগত ব্যার্থতা নিয়ে মিডিয়া সরগরম ছিল। অথচ বোর্ড বিশ্বকাপে ব্যর্থতা নিয়ে গঠিত তথাকথিত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলো না।

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, হাবিবুল বাসার সুমনকে বাদ দিয়ে প্রাক্তন বিসিবি পরিচালক এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাক্তন অধিনায়ক জনপ্রিয় ক্রিকেট ব্যাক্তিত্ব গাজী আশরাফ লিপুকে প্রধান নির্বাচক করার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। লিপু নিজে একজন দক্ষ ক্রিকেটার, বিচক্ষণ অধিনায়ক এবং ক্রিকেট এনালিস্ট হিসাবে অনেক গ্রহণযোগ্য। সঙ্গে রয়ে গেছে কিংবদন্তি স্পিনার  আব্দুর রাজ্জাক এবং যোগ হয়েছে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সফল নির্বাচক প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার  হান্নান সরকার।

নির্বাচকমণ্ডলী হিসেবে এই তিন জন অবশ্যই বর্তমান মুহূর্তে উপযোগী। অনেকেই এই নির্বাচনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সবাই জানে বাংলাদেশ ক্রিকেটে দল নির্বাচন নিয়ে নানা মহল থেকে অশুভ প্রভাব বিস্তার করা হয়।  সুস্পষ্ট করে বলতে হলে বোর্ডের শীর্ষ পর্যায় থেকে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নান্নু, সুমনের ব্যার্থতা হলো স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা এবং ক্ষেত্র বিশেষে ব্যাক্তিগত ভালো লাগা না লাগাকে প্রাধান্য দেওয়া। তবে স্বীকার করতেই হবে অনেক ব্যর্থতার মাঝে কিছু ভালো কাজ করেছে আগের নির্বাচকমণ্ডলী।

আমি গাজী আশরাফ লিপুকে গভীরভাবে চিনি। ওর ক্রিকেট মেধা, ব্যাক্তিত্বকে সম্মান করি। আমার মতে বাংলাদেশ ক্রিকেটে লিপুর একটা নিজস্ব অবস্থান আছে। অবাক হয়েছি যখন প্রধান নির্বাচক হিসাবে লিপুর নাম ঘোষিত হলো।  জানামতে লিপুর ক্রিকেট দর্শনের সঙ্গে বর্তমান বিসিবির কর্মকাণ্ডের মিলের চেয়ে অমিল বেশি। দেখলাম বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন বহুল আলোচিত ব্যাক্তি লিপুর নির্বাচনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন  যাকে অনেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য তাকে দায়ী করে থাকে।

যাহোক ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থায় নির্বাচকদের কাজ অনেক চ্যালেঞ্জিং।  দেখতে হবে কিভাবে নতুন নির্বাচক কমিটি মানিয়ে নেয়।  নির্বাচক হিসাবে  শ্রীলংকা দলের আসন্ন সফরের জন্য  টি২০ বাংলাদেশ স্কোয়াড নির্বাচনে বুদ্ধিমত্তার ছাপ রেখেছে।  সাকিব, তামিম নেই। সঠিকভাবেই দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে।  তাইজুলের নির্বাচনেও বিচক্ষণতা আছে। রিশাদ হোসেন এবং এলিস ইসলামের নির্বাচকে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মনে করি। আমি আশা করি নতুন নির্বাচক কমিটি নিয়ে সবাই ধৈর্য দেখাবেন। চটজলদি অর্বাচিনের মতো মন্তব্য করবেন না।

অপর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো সকল ফরম্যাটে নাজমুল হোসেন শান্তকে একবছরের জন্য অধিনায়ক নির্বাচন। সাকিব খেলবে কি খেলবে না সেটি ভেবে অপেক্ষা না করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মনে করি। বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন কোনো বিশেষ খেলোয়াড়ের  ইচ্ছা অনিচ্ছার কাছে  জিম্মি হয়ে থাকার অবস্থানে নেই।  আজ বাদে কাল নতুনকে পথ ছেড়ে দিতেই হবে পুরাতনদের। তবে সব ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব করা কতটা সহনীয় হবে শান্তর জন্য ভেবে দেখার অবকাশ ছিল। ইতিমধ্যে অবশ্য নাজমুল শান্ত সব ফরম্যাটেই কিছুটা হলেও সাফল্য পেয়েছে। বিবেচনা করে প্রতি ফরম্যাটে এখজন সহকারী অধিনায়ক নির্বাচন করা জরুরি।

কোচিং স্টাফ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো না। বিতর্কিত হেড কোচ নিজেই দলের বিষফোঁড়া। দলে সব কিছুতেই নাক গলানো, অশুভ প্রভাব বিস্তার সীমিত করা না হলে গাজী আশরাফ লিপুর মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন প্রধান নির্বাচকের সঙ্গে কিন্তু সংঘাত অনিবার্য।  আশা করি বিসিবি সতর্ক থাকবে। যার যার কাজের পরিধি নির্ধারণ করে দেয়া হবে।  দলে ক্যাপ্টেন। ম্যানেজার, কোচ থাকা অবস্থায় বাড়তি কাউকে টিম ডিরেক্টর রাখার কোনো প্রয়োজন দেখি না।

ভালো-মন্দ মিলিয়ে চলছে বিসিবির কর্মকাণ্ড। ২০২৪ বাংলাদেশ ক্রিকেটের ব্যস্ত সময়। সাফল্য ক্ষুধার্থ বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রেমিকরা অনেক আবেগী। পান থেকে চুন খসলেই শোরগোল করে। আশা করি প্রিয় ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব গাজী আশরাফ লিপুর মিশন সফল হবে। শুভ কামনা নাজমুল হোসেন শান্তর জন্য।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twenty − seven =